ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান সামনে রেখে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েই চলেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৬ মে ২০১৭

রমজান সামনে রেখে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েই চলেছে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রমজানকে কেন্দ্র করে ভোজ্যতেল অর্থাৎ পাম ও সয়াবিন তেলের বাজার মূল্য আরও বেড়ে গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে মিল মালিকদের অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার তৎপরতা। পক্ষান্তরে আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট বৃদ্ধি, দেশীয় মিল থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ হ্রাস পাওয়া এবং এর পাশাপাশি এক শ্রেণীর মজুদদার গুদাম থেকে প্রয়োজনীয় তেল সরবরাহ হ্রাস করা মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যের মূল কারণ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মণ প্রতি সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা পর্যায়ে অর্থাৎ ভোক্তা পর্যায়ে তা আরও কিছুটা বেড়েছে। ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেলের বাজার সম্পূর্ণভাবে আমদানি নির্ভর। রফতানিকারকরা রমজান আসতে না আসতেই বুকিং রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বাজার মূল্য বাড়ছে। অপরদিকে, ভোজ্যতেল পরিশোধনের কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। মূল্য বৃদ্ধির এটাও অন্যতম একটি কারণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় গত দু’সপ্তাহ ধরে ভোজ্যতেলের মূল্য বেড়েই চলেছে। উল্লেখ্য, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসে এর চাহিদা রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। আমদানিকারকদের দাবি আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য প্রতিনিয়ত উঠানামা করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশেও অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোজ্যতেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বুকিং রেট বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে আমদানিকারকরা পার পেতে চাচ্ছে। তাদের এই অজুহাত ধোপে টিকে না। উল্লেখ্য, গেল এক বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়ে এসেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে ভোজ্যতেল বোঝাই ৬টি জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। যেখানে সঙ্কট নেই, সেখানে দাম বৃদ্ধির প্রশ্নই উঠে না বলে দাবি করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সূত্রে বলা হচ্ছে এটা মিল মালিকরা কারসাজি। তারা সিন্ডিকেট গঠন করে পরিকল্পিতভাবে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। দেশের ৪টি বড় ভোজ্যতেলের পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠান এ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত। এক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কোন হাত নেই বলে দাবি রয়েছে। পাইকাররা আগেভাগে অর্থ দিয়ে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ক্রয় করলেও সময় অনুযায়ী সরবরাহ পেতে বঞ্চিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সঙ্কট রয়েছে বলেও মিল মালিকদের দাবি রয়েছে। তাই তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে পারছে না। কিন্তু মিল মালিকদের এ সঙ্কট কোথায় তা রহস্যাবৃত। কেননা ভোজ্যতেলের আমদানি হয়ে এসেছে চাহিদার চেয়ে বেশি। অথচ রমজান এলেই মিল মালিকরা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে তৎপর থাকে। যেহেতু দেশে বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে। সেক্ষেত্রে তারা কোন অজুহাতে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ থেকে বিরত রয়েছে তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না। সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সয়াবিন মণ প্রতি সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা, সুপার সয়াবিন মণ প্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং পাম অয়েল ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ডিও ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল বিক্রি করলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও এতে মণ প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে তা ছাড়ছে। এ প্রক্রিয়ায় খুচরা পর্যায়ে তা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
×