স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলের কারা মহাপরিদর্শকদের (আইজি প্রিজন্স) নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করছে সরকার। ‘কারাগারের মধ্যে নিরাপত্তা ও মানবিক ভারসাম্য’ প্রতিপাদ্যে চতুর্থ এশীয় প্যাসিফিক রিজিওনাল সিনিয়র কারেকশনাল ম্যানেজার কনফারেন্সটি লামেরিডিয়ান হোটেলে আগামীকাল ১৬ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত হবে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সমাপনী দিনে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। রবিবার রাজধানীর পুরান ঢাকার উমেশ দত্ত রোডের কারা অধিদফতর মিলনায়তনে সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি আয়োজনে কারা অধিদফতরকে সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। এ সময় আইসিআরসির পক্ষে দেশের হেড অব ডেলিগেশন ইখতিয়ার আসলানভ, উপদেষ্টা শিরিন সুলতানা ও রায়হান সুলতানা তমা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কারা উপ মহাপরিদর্শক (হেডকোয়ার্টার) বজলুর রশিদ, সিলেটের কারা উপ মহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হক, ঢাকার কারা উপ মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রামের কারা উপ মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বনিক, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী কারা মহাপরিদর্শক সুরাইয়া আক্তার প্রমুখ।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে কারাবন্দীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মানবিক সেবা কিভাবে আরও বাড়ানো যায় এ সম্পর্কে এশীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সিনিয়র কারেকশনাল ম্যানেজার তথা আইজি প্রিজন্সরা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের কারা বিভাগের প্রধানরা এ সম্মেলনে বিভিন্ন মতামত প্রদান, আলোচনা সভা, বিভিন্ন কারাবন্দী ও কারা উন্নয়নে গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে তাদের মতামত তুলে ধরবেন। বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলের মোট ১৫ দেশের কারা মহাপরিদর্শকসহ মোট ৫৩ কারা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভানুয়াতু। সম্মেলনে এসব দেশ তাদের কারাগারের বিভিন্ন কর্মকা- ও সেবাগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেবে। পাশাপাশি গত বছরের কলম্বোতে সেমিনারের পর কারা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে যে ধরনের অগ্রগতি হয়েছে তা আলোচনা করা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও আলোচনা-পর্যালোচনা হবে।
ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার বলেন, ব্যালান্সিং সিকিউরিটি এ্যান্ড হিউম্যানিটিরিয়ান নিডস উইথ ইন প্রিজন্স শীর্ষক প্রতিপাদ্যে কারা বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে দেশে প্রথমবারের মতো এ সম্মেলন হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা আইসিআরসির সঙ্গে একটি গতিশীল কাজের সম্পর্ক গড়ে তুলেছি এবং এই অঞ্চলে আমাদের সমকক্ষদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছি। আশা করি অংশগ্রহণকারীরা প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ থেকে শিখবে এবং তাদের নিজস্ব কারাবন্দীদের সুবিধাগুলো উন্নত করতে অনুপ্রাণিত হবে।
ইফতেখার উদ্দিন বলেন সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা কারাবন্দীদের নিয়ে বিভিন্ন কেস স্টাডি ব্যবহার করে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। এছাড়া কারাগার বা বন্দীশালাগুলো তৈরি, ডিজাইন, পরিকল্পনা এবং সঠিকভাবে পরিচালনার সময় যেন নিরাপত্তা ও মানবিক অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় তার ওপর গুরুত্ব সম্পর্কেও আলোচনা হবে। এছাড়াও সম্মেলনে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় বন্দীদের শ্রেণীভুক্ত করা এবং তাদের পরিদর্শনের গুরুত্ব প্রাধান্য পাবে। এর আগে ২০১৪ সালে ফিলিপিন্সে প্রথমবারের মতো এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মালয়েশিয়া ও সর্বশেষ শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে সম্মেলনের নানা বিষয় দেশের কারাগারে আটক বন্দীদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে।
সম্মেলনে আইসিআরসি বাংলাদেশের হেড অব ডেলিগেশন ইখতিয়ার আসলানভ বলেন, আইসিআরসি সুষ্ঠুভাবে কারাগার ব্যবস্থাপনা করতে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে উৎসাহিত করে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং বন্দীদের হয়ে আমাদের কাজ পরিচালনা সহজতর হবে। তিনি বলেন, গত ১৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আইসিআরসি নব্বইটিরও বেশি দেশে কারাবন্দীদের জন্য পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে মানবিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত, বন্দীদের শারীরিক ও মানসিক কল্যাণ সাধন এবং তাদের চিকিৎসা ও বন্দিত্বের পরিবেশ যাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অন্যান্য মানদ- অনুযায়ী হয় তা নিশ্চিত করা।
এ ছাড়াও আইসিআরসি কারাগারের পরিবেশ উন্নয়ন এবং কারাবন্দী ও তাদের পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে কাজ করে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: