ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশনের আজ বৈঠক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ মে ২০১৭

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত হচ্ছে

শাহীন রহমান ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগেই এসব রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা হবে। রোডম্যাপে আগামী নির্বাচনের আগেই আইন-বিধি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া, ৩শ’ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যায় কিনা তা পরীক্ষা-নীরক্ষা করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপন করা এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনায় বসে করণীয় নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে আজ রবিবার বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে আলোচনার পরই খসড়া এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করে সে অনুযায়ী অগ্রসর হবে। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে রোডম্যাপে ২৩টি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসি সচিব জানিয়েছেন, বৈঠকে এসব রোডম্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এ ইসির অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির সামনে ছয়টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রয়েছে। জানা গেছে, ইসির সামনে সিটি কর্পোরশেন ছাড়া আর কোন নির্বাচন না থাকায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন তারা। এজন্যই আগামী নির্বাচনের আগেই আইন-বিধি সংস্কার, নির্বাচনের আগেই ৩শ’ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছেন তারা। পাশাপাশি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেয়া, নির্বাচনের বাজেট প্রস্তুত করার বিষয়ও এই রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, নির্বাচনী এই রোডম্যাপে আগামী ২০১৮ সালের শেষদিকে বা ’১৯ সালের জানুয়ারির দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তারা। আইন অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে। দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকে হিসাব করে পরবর্তী ৫ বছর মেয়াদের মধ্যেই আগামী নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। আইন অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এর প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২৯ জানুয়ারি থেকে। মূলত এদিন থেকেই পরবর্তী ৫ বছরের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে আগামী নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। যদিও ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা বিএনপির এবারই প্রথম নয়। এর আগেও শামসুল হুদা কমিশনের সময়ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে চরম বিরোধিতা করা হয়েছে। তাদের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত কোন নির্বাচনেই আর ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গভাবে ২০১২ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে রকিব কমিশনের সময় বিচ্ছিন্নভাবে চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে পরে কোন নির্বাচনেই আর ইভিএম ব্যবহার করা হয়নি। এদিকে জানা গেছে, নির্বাচনী রোডম্যাপের খসড়া অনুযায়ী আগামী জুলাইতেই নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে চায়। আজ রবিবারের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হলে জুলাইতে এই সংলাপ হওয়ার সম্ভবনা ইসির রয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের অন্যান্য রোডম্যাপ তারা রমজানের পর পরই বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হবে। সিইসি এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচনী বিষয়ে রোডম্যাপের কাজ ধরে এগোনো হবে। সেক্ষেত্রে সবার মতামত নেয়া হবে। মধ্য জুলাইয়ের মধ্যে সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে। সংলাপের বিষয় চূড়ান্ত করেই পরে জানানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন মনিটরিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গেও সংলাপে বসা হবে বলে জানান সিইসি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের আগেই তারা জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারার সংশোধনের কাজে হাত দিয়ে চায়। বিশেষ করে আরপিওতে যেসব বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে সে বিষয়ে সংশোধন করার চিন্তাভাবনা ইসির রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এর আগে সাংবাদিকদের বলেন, আইনের কিছু ধারা আছে যা বর্তমানে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; সেগুলো সংশোধন করা দরকার। ভাল নির্বাচনের জন্য আইনে নতুন কোন ধারা যুক্ত করতে হবে কিনা, সেটাও দেখতে হবে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনারও উল্লেখ করেছেন কোন কোন আইনের সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। নতুন ধারাও সংযোজন দরকার রয়েছে। জানা গেছে, আইনের একটি খসড়া সংশোধনী তৈরি করে সেটি নিয়ে সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এছাড়া আগামী নির্বাচনের আগে ইসির রোডম্যাপে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। রকিব কমিশনের সময়ও কিছু কিছৃু আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আগেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিতে চায়। জানা গেছে, আগামী আগস্টে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা, সেপ্টেম্বরে ৩শ’ সংসদীয় আসনের খসড়া তালিকা প্রণয়ন, অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ৩শ’ নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন এবং খসড়া তালিকা প্রকাশ, দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহবান, নবেম্বরে দাবি-আপত্তি ও সুপারিশের ওপর শুনানি গ্রহণপূর্বক নিষ্পত্তি এবং ডিসেম্বরে সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড় খসড়া নির্বাচনী রোডমাপে আগামী নির্বাচনের আগেই নতুন দলের নিবন্ধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দ, নির্বাচনী মালামাল মুদ্রণ, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করা, ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকা প্রণয়ন, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্যক্রম, নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের মতো বিষয়ও রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করে তা নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে চায়।
×