ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিধবাকে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৩ মে ২০১৭

বিধবাকে বেঁধে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের পূর্ব আলীপুর গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের অসহায় বিধবা কাননবালা দাসকে (৬৫) প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে দুপুরের প্রখর রোদের তাপের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে। স্থানীয় বহু মানুষ এ নির্মম ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ টুঁ-শব্দ করার সাহস পায়নি। এমনকি দশমিনা পুলিশ বিবস্ত্র অবস্থায় নির্যাতিত মহিলাকে উদ্ধার করলেও কাউকে গ্রেফতার কিংবা আটক পর্যন্ত করেনি। মামলা দায়েরের পরেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। উপরন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই মহিলাকে চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কাননবালা পটুয়াখালী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সম্পত্তি দখলে বাধা দেয়ায় এ অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জানা গেছে, কাননবালার স্বামী অতুল চন্দ্র দাস স্থানীয় হাটবাজারে ঝাড়দারের কাজ করতেন। অতুল চন্দ্র কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। কাননবালা এক ছেলে অসীম ও ছেলে বউ মাধবীসহ নাতি-নাতনিদের নিয়ে দশমিনার পূর্ব আলীপুরা গ্রামে বাস করেন। তারা সরকারের কাছ থেকে ৬০ শতক জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন এবং নিজেদের রেকর্ডীয় রয়েছে ১৯ শতক জমি। এ জমিতে ওই পরিবারের বসতঘর, পুকুর ও গাছপালা রয়েছে। এ সম্পত্তির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল হোসেনসহ আশপাশের আরও কয়েকজনের। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা ওই সম্পত্তি দখলের জন্য সংখ্যালঘু পরিবারটিকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। শুক্রবার দুপুরে চিকিৎসাধীন কাননবালা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে আবুল হোসেন প্যাদা ও তার ভাই বারেক প্যাদা ৫০/৬০ লোক নিয়ে এসে তাদের বাড়ির গাছ কেটে ফেলতে থাকে। এক পর্যায়ে লোকজন দিয়ে ঘর নির্মাণ শুরু করে। এ সময় তিনি বাধা দিলে দখলদাররা তাকে ধাক্কা দিয়ে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে মাটিতে পরে গেলে রশি দিয়ে দুই পা এবং ওড়না দিয়ে দুই হাত পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর কড়া রোদে ফেলে তার ওপর চালায় অকথ্য শারীরিক নির্যাতন। দখলদাররা কাননবালাকে মাটিতে ফেলে লাথি এবং পদদলিত করার এক পর্যায়ে তিনি বিবস্ত্র হয়ে পড়েন। ওই অবস্থাতেই দখলদাররা আরও নির্যাতন চালায়। এভাবে বেলা প্রায় বারোটা পর্যন্ত তার ওপর নির্যাতন চলে। কাননবালা বলেন, ওগো কাছে কতবার পাও ধইরা মাপ চাইছি। বাড়িঘর ছাইরা ভারতে চইলা যামু কইছি, তবুও অরা আমারে পাড়াইয়া মাটিতে ফালাইয়া রাখে। তিনি জানান, কড়া রোদের মধ্যে প্রকাশ্যে তাকে ফেলে রাখা হয়েছে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য একটু আড়ালে যেতে চাইলেও দখলদাররা তাকে বাইরে যেতে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত দুপুরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সম্পত্তি দখলের সময়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসীন জমাদ্দার ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা দখলদারদের পক্ষ হয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে দশমিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ ইউনুছ আলী জানান, ঘটনার দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার কাননবালার ছেলে অসীম চন্দ্র দাস বাদী হয়ে দশমিনা থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছে। পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে, বার বার চেষ্টা করেও সম্পত্তি দখলকারী ও নির্যাতনকারীদের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
×