ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

অয়োময়ের পথচলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৯ মে ২০১৭

অয়োময়ের পথচলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের শুরুর গল্পটা অন্য সকল সংগঠন থেকে আলাদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান রনি তখন কেবল তরুণদের নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন। হঠাৎ একদিন চিন্তা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সংসদের খুব দরকার। কারণ স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক চর্চা করে আসলেও ঢাবিতে সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারবে, সাংস্কৃতিক আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে এরকম কোন কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম এখানে নেই । এ ভাবনায় মাথায় রেখে তখন থেকে কাজ শুরু। বিভিন্ন বিভাগের সক্রিয় কিছু সংগঠনপ্রেমী শিক্ষার্থীকে সংগঠন করার চিন্তার কথা বলেন। তাদের আগ্রহ দেখে অনুপ্রেরণা পান রনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কাছে গেলে তিনি খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং নিজেই ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ’ নামে যাত্রা শুরু করার পরামর্শ দেন। সেই অনুপ্রেরনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিচর্চার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং তাদের প্রতিভাকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ। সংগঠনের প্রধান অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেন ঢাবি উপাচার্য। প্রতিষ্ঠার পর সংগঠনটির মডারেটরের দায়িত্ব নেন ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী। পথচলাতে তারুণ্য যাত্রা শুরুর পরপরই ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’ (বিইউপি) আয়োজিত ‘আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক উৎসব-২০১৫’- তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ প্রথমবারের মতো তাদের মৌলিক পরিবেশনা গীতিনাট্য ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ মঞ্চায়ন করে। দেশের বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উক্ত প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৫ মার্চ, ২০১৬ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বসন্ত উৎসব-১৪২২।’ যা এযাবত কালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সর্ববৃহৎ এবং সফলতম অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেজেন্টেশন ক্যাম্প’। প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী উক্ত কর্মশালায় অংশ নেয়। দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের বরেণ্য সংবাদ উপস্থাপকগণ উক্ত কর্মশালাটি পরিচালনা করেন। ঈদের ঠিক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন জামা বিতরণ কর্মসূচীও পালিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির ওপর একটি রিভিউ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং গত ২২ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে অসংখ্য রিভিউর মধ্য থেকে সেরা পাঁচজন রিভিউ লেখককে পুরস্কৃত করা হয়। সে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পত্রের রচয়িতা, বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী স্মরণে আয়োজিত ৫ম সঞ্জীব উৎসব- ২০১৬ তে প্রধান আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ। ‘দলছুট’ সহ অনেক ব্যান্ডদল উক্ত আয়োজনে প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীর স্মরণে সঙ্গীত পরিবেশন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি মানবিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন, অসাম্প্রদায়িক মনন গঠন, সামাজিক চিন্তাধারার নীতিগত উন্নয়নসহ আত্মিক বিকাশের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ ২০১৬ সালের ২১ ও ২২ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। উক্ত প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যন্ত্রসঙ্গীত, অবিরাম গল্পবলাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে জাতীয় পর্যায়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে। সারাদেশের ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সার্বিকভাবে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ। এছাড়া ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আরটিভি ক্যাম্পাস স্টার, জঙ্গীবাদবিরোধী মানববন্ধনসহ নানা আয়োজনে সহযোগী আয়োজক হিসেবে কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ। ডিইউসিএস বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, রেডিও অনুষ্ঠানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক পারফরমেন্স করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ প্রতিষ্ঠা ও এর নেতৃত্ব প্রদানের জন্য সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি আহসান রনিকে ‘যমুনা টিভি দুরন্ত বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। সংগঠনটির প্রতি শুভকামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সৃজনশীলতার দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মানচিত্র অনেক বেশি বিস্তৃত হয়েছে। শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চা চললে জঙ্গীবাদের অস্তিত্ব থাকে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চায় দারুণ কাজ করে চলেছে।‘ গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের নতুন ব্যাচ ‘অয়োময়’ বরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অয়োময় বরণের সে আয়োজনে চিত্রনায়ক ফেরদৌস, সঙ্গীত শিল্পী জয় শাহরিয়ার উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে আহসান রনিকে সভাপতি ও রাহাবার আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে এ বছরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠন সভাপতি আহসান রনি ডিপ্রজন্মকে বলেন, ‘বাংলা সংস্কৃতি চর্চার উদ্দেশ্য নিয়ে এই সংগঠনটি শুরু হয়েছিল এবং এই ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। সামনের বছরে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত আরও কিছু নতুন আয়োজন নিয়ে আসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ।’ আর সাধারণ সম্পাদক রাহাবার আলম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ একটি সাংস্কৃতিক পরিবার। এই পরিবারের প্রতিটি সদস্য বাংলা সংস্কৃতিচর্চা করে এবং বাংলা সংস্কৃতির চর্চাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য করে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক ১ বছরের পর সামনের বছর আরও বেশি স্মরণীয় করার জন্য কাজ করে যাব আমরা।’ অয়োময়রা এগিয়ে যাবে সকল মেঘকে পাড়ি দিয়ে, জয়তু শব্দে উচ্চারিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ সে প্রত্যাশায় আড্ডা ভাঙ্গলো ডিপ্রজন্ম টিমের।
×