ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হায়াৎ মামুদ ও মিতা হক পেলেন রবীন্দ্র পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ মে ২০১৭

হায়াৎ মামুদ ও মিতা হক পেলেন রবীন্দ্র পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও শিল্পর্চচায় নিবেদিত দুই গুণীজন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক। কবিগুরুর সৃষ্টি সম্ভারের নিরন্তর সাধনার সেই স্বীকৃতি পেলেন তারা দু’জন। বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তীর আগের দিন রবিবার তাদের প্রদান করা হলো বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ২০১৭ সালের রবীন্দ্র পুরস্কার। বাংলা একাডেমি আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে তাদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। রবীন্দ্রসাহিত্য গবেষণা ও চর্চায় অবদানের জন্য হায়াৎ মামুদকে এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মিতা হককে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। বৈশাখী বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুই গুণীজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিল্পীকে পুষ্পস্তবক, সনদ, সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কারের অর্থ মূল্য ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন অতিথিরা। এছাড়া রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : আধুনিকতা ও জাতীয়তাবাদ’ বিষয়ে একক বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ফকরুল আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফাহ্মিদা খাতুন। বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতিতে অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ বলেন, আজকে এখানে যারা এসেছেন, তাদের অনেকেই আমাকে ভালবাসেন। আজকের এ দিনে ভাল থাকুন, এটাই প্রত্যাশা। অনুভূতি প্রকাশ করে মিতা হক বলেন, যে দিন এ পুরস্কার পাওয়ার খবরটি আমাকে জানানো হয় সেদিনই মনটা আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠেছিল। এ পুরস্কার গ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমি এটাকে কোন স্বীকৃতি মনে করছি না, এ পুরস্কার আমার কাছে সম্মান ও ভালবাসার। মনে হচ্ছে, সারা জীবন যা করেছি তার সেই কাজের ভালবাসার প্রতিদান এ পুরস্কার। এ সম্মান আমাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চায় আরও নিবিষ্ট করতে অনুপ্রাণিত করবে। এ কণ্ঠশিল্পী আরও বলেন, আমরা সব সময় সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গর্ব করতে চাই। কোন অনাকাক্সিক্ষত কাজে যেন আমাদের সেই অহঙ্কারটা হারিয়ে না যায়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাহ্মিদা খাতুন বলেন, যে কোন সৃষ্টিশীল কাজই মানুষই আপন মনের আনন্দে করে। সেই কাজের সঙ্গে যখন কোন স্বীকৃতি মেলে তখন আনন্দের মাত্রাটা বহুগুণ বেড়ে যায়। এ দু’জনের স্বীকৃতিটাও আমার কাছে তেমন মনে হয়েছে। মিতা হকের গাওয়ার ধরনটাই আমার কাছে ভিন্ন রকম মনে হয়। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এ দেশের রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চর্চার স্থানটি একটি বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছেছে। ভাল লাগা কিংবা মন্দ লাগার ঊর্ধে উঠে রবীন্দ্রনাথকে বোঝার চেষ্টার করছেন পাঠক-গবেষকরা। সে কারণে রবীন্দ্রচর্চা উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। দুই গুণীজনের রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হায়াৎ মামুদের রবীন্দ্রচর্চা ৫০ বছর পেরিয়েছে। তার সাহিত্যচর্চার শুরু থেকেই রবীন্দ্রচর্চা অব্যাহত রয়েছে। হায়াৎ মামুদের সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের কিশোর জীবনী এক অতুলনীয় সৃষ্টি। এ কাজটিই তাকে সব সময় স্মরণীয় করে রাখবে। অপরদিকে মিতা হকের গান রবীন্দ্র অনুরাগীদের সবার ভাল লাগে। তিনি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দুই জায়গাতেই সমান জনপ্রিয়। আজকের এ পুরস্কারপ্রাপ্তি তার রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চাকে আরও বেশি বেগবান করবে। এ আয়োজনটির মাধ্যমে কয়েক মাসের অসুস্থতা কাটিয়ে কোন অনুষ্ঠানে এলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। পুরো অনুষ্ঠানেই ছিলেন বেশ প্রাণবন্ত। অসুস্থতা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা নিয়ে রসিকতা করে বলেন, ইংরেজীতে প্রবাদ আছে অচল পয়সা বারবার হাতে ফিরে আসে। আমার ফিরে আসাও খানিক সেই রকম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : আধুনিকতা ও জাতীয়তাবাদ শীর্ষক বক্তৃতায় অধ্যাপক ফকরুল আলম বলেন, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও দর্শন মানব-অনুভবের গভীর তলদেশগামী। তিনি প্রচলিত আধুনিকতা পেরিয়ে ভূমিজ আধুনিকতার সাধনা করেছেন। রুখে দাঁড়িয়েছেন আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের ধারণা। শিল্পকলায় পক্ষকালব্যাপী চিত্রকর্ম প্রদর্শনী দেশ বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে দশটি আর্টক্যাম্পের শিল্পকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ও একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় রবিবার থেকে শুরু হলোÑ পক্ষকালব্যাপী চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। আগামী ২১ মে পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। রবিবার বিকেলে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। নাসের রহমানের নির্বাচিত গল্পগ্রন্থের প্রকাশনা সাহিত্যিক নাসের রহমানের নির্বাচিত গল্পগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব শুক্রবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, কবি আসাদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া, বুলবুল চৌধুরী এবং সুজন বড়ুয়া। মহাদেব ঘোষের রবীন্দ্রসঙ্গীত এ্যালবামের প্রকাশনা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত হলোÑ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মহাদেব ঘোষের পাঁচটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের এ্যালবাম। এ্যালবামগুলো হলোÑ ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’, ‘আমার সকল দুঃখের প্রদীপ’, ‘আমার পরান যাহা চায়’, ‘হে চির নূতন’ ও ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’। রবীন্দ্রনাথের পূজা, প্রেম, প্রকৃতি ও স্বদেশ পর্যায়ের গান দিয়ে সাজানো সংকলনগুলো। এ্যালবামগুলো সঙ্গীতায়ন করেছেন দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর রায়, রাহুল চ্যাটার্জি, দিলীপ রায়, গৌতম দাস ও দৌলতুর রহমান। রবিবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে সঙ্গীত সংকলনগুলোর প্রকাশনা উৎসব ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ্যালবামগুলোর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশন।
×