ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে মাঠে নামছে আরইবি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৭ মে ২০১৭

গ্রাহক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে মাঠে নামছে আরইবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রাহক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে এবার মাঠে নামছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেরিতে হলেও সারাদেশের বিদ্যুত সংযোগে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি মাসেই সারাদেশের পল্লী বিদ্যুত সমিতিগুলো পাঁচ লাখের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুত সংযোগ দেয়। অভিযোগ রয়েছে বিপুল সংযোগে বিপুল বাণিজ্য করে মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী-কর্মকর্তারা। টাকা দিলেই দ্রুত সংযোগ মেলে আর না দিলে গ্রাহককে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। ঠিকাদার আর স্থানীয় দালাল চক্রকে দিয়ে আবাসিক সংযোগে অন্তত ৫ হাজার টাকা আর শিল্প বাণিজ্যিক সংযোগে আরও বেশি উৎকোচ নেয়া হয়। আরইবি বলছে, দালাল ও দুর্নীতিবাজদের রুখতে সারাদেশে ৮০ পল্লী বিদ্যুত সমিতি এলাকায় মাইকিং করাসহ পত্রিকা, পোস্টার, লিফলেট, বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে বিশেষ প্রচার চালানো হচ্ছে। এছাড়া স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে দুর্নীতি বন্ধে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। আরইবির এক কর্মকর্তা জানান, মাঠ পর্যায়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এই ঘুষ বাণিজ্য অনেক দিন ধরে চলে আসছে। প্রায় এ ধরনের অভিযোগও তাদের কাছে আসে। এতে সারাদেশের বিদ্যুত বিতরণে আরইবি আন্তরিক হলেও তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ঘুষ ছাড়া বিদ্যুত লাইন পাওয়া যায় না এমন কথা এলাকায় এলাকায় প্রচলিতও রয়েছে। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তৃণমূলে বিদ্যুত লাইন নিয়ে দেয়ার বিষয়ে এক শ্রেণীর দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। তারাই মাঠ পর্যায়ে লাইন দেয়ার বিষয়ে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। ঠিকাদার হিসেবে আরইবিতে যারা কাজ করে তারাই এই দালাল চক্রকে প্রতিপালন করে। এরা এলাকায় এতটাই প্রভাবশালী যে গ্রাহক এদের বিষয়ে কোথাও অভিযোগ করলে নানা অজুহাতে তার সংযোগ ঝুলিয়ে রাখা হয়। টাকা না দিলে গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হয় না। সম্প্রতি বিদ্যুত সংযোগে দুর্নীতি বন্ধের জন্য আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে নিয়োজিত ঠিকাদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আরইবি সদর দফতরে সভায় সংস্থার বোর্ড সদস্য, প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক ও পরিচালকসহ অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আরইবি চেয়ারম্যান বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৩৭ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছে। এ অর্থবছরে ইতোমধ্যে ৩০ লাখের বেশি সংযোগ দেয়া হয়েছে। কোন কোন মাসে ৫ লাখের বেশি গ্রাহককে সংযোগও দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সংযোগ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ঠিকাদার ও তার লোকজন অবৈধভাবে অর্থ আদায় করছে প্রায়ই এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা প্রমাণিতও হয়েছে। অবৈধ কর্মকা- মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ঠিকাদারদের অনৈতিক কর্মকা- এবং গাফিলতির কারণে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আরইবির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। আরইবি চেয়ারম্যান দুর্নীতি বন্ধে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার এবং তার লোকজন দুর্নীতি করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সকলের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে আরইবি বলছে তারা সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে ’১৮ সালের মধ্যে। যদিও এক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা মাঠ পর্যায়ে আরইবির ব্যাপক দুর্নীতি। ঠিকাদারদের দুষলেও আরইবির ভেতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত না থাকলে দিনের পর দিন এমন দুর্নীতি কী করে চলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
×