ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ মে ২০১৭

মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার কক্সবাজারে দেশের সর্ববৃহৎ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেছেন। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের পাড় দিয়ে চলে যাওয়া এই ৮০ কিমি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সড়ক পথটি চার লেন করার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিতে কক্সবাজারের গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটিও চার লেন করার ঘোষণা দেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মেরিন ড্রাইভওয়ে ’৭৫ এর পর থেকে দীর্ঘদিন অবহেলিত কক্সবাজারের সৌন্দর্য অবলোকনে শুধু পর্যটকদের আকর্ষণই করবে না বরং এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত এই মেরিন ড্রাইভটি নির্ধারিত সময়ের ১৪ মাস আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালযের সচিব এম এন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে সংসদ সদসবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিবর্গসহ সরকারের সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে কক্সবাজারের পর্যটন এলাকার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের নানা পরিকল্পনার কথাও তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রাস্তাটিকে চার লেনে উন্নীত করা হবে। কারণ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চার লেন আমরা করেছি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এ রাস্তাটিকেও চার লেনে উন্নীত করে যোগাযোগের ব্যবস্থা করব। তিনি বলেন, কক্সবাজার এয়ারপোর্টে যাতে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে অন্তত একটা ফ্লাইট আসতে পারে আপাতত সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার বামনবন্দরটিকে একটি আধুনিক-উন্নত বিমানবন্দর হিসেবেই গড়ে তোলা হবে। সেই প্রকল্প ও আমরা শুরু করেছি। আপাতত একটি টার্মিনাল ভবন থেকে শুরু করে সবকিছুর কাজ আমরা শুরু করব। তিনি বলেন, আর যেসব মানুষ এ এলাকায় থাকতÑ আপনারা জানেন, প্রায় ৪ হাজারের মতো মানুষ তাদের জন্য আমরা আলাদাভাবে নদীর (কর্ণফুলী) ওপারে আমরা ঘরবাড়ি ও ফ্লাট তৈরি করে দিচ্ছি। এদের অধিকাংশই শুঁটকি তৈরি করেন, শুঁটকি বিক্রি করেন। তাদের জন্য সেখানে শুঁটকির হাটও করে দেয়া হবে। শুঁটকি মাছ শুকানোসহ তাদের বাসস্থানেরও জায়গা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে সেই উন্নয়নের কাজও চলছে এবং নদীর ওপরে শীঘ্রই ব্রিজ বানানো হবে। এখানকার মানুষগুলোকে সেখানে পুনর্বাসনের পাশাপাশি আমরা বিমানবন্দরের জন্য নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করব এবং রানওয়েটাকেও আরও প্রশস্ত ও দীর্ঘ করা হবে। এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক এয়ার রুটে পড়ে তাই ভবিষ্যতে যে কোন দেশ থেকে এখানে এসে যেন বিমান রিফ্যুয়েলিং করতে পারে তার ব্যবস্থাও করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, এই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য আমাদের সেনাবাহিনী যে কষ্ট করেছে, তারা সেই ২০১০ সালে যখন কাজ শুরু করল, এখানে কাজ করতে গেলে তো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতি দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই কাজ করতে হয়। এখানে কাজ করতে গিয়েই পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে আমাদের সেনাবাহিনীর ৬ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, আমার খুব কষ্ট লাগছে, আবার একদিকে আমরা আনন্দিত। আমার এতগুলো মানুষ এখানে জীবন দিয়েছেন, যারা এখানে ক্যাম্প করে ছিলেন। কিন্তু তারা সেখানে মাটি চাপা পড়ে জীবন দিয়ে যান। তাদের কথা সবসময়ই আমার মনে হয়। এত বাধাবিঘœ অতিক্রম করে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আমাদের সেনাবাহিনী বিশেষ করে ১৬ ইসিবি এটাকে সুন্দর করে নির্মাণ করে দিয়েছেন। এজন্য তিনি এই কর্মের সঙ্গে সংযুক্ত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সকলে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর দেশসেবার সুযোগ লাভের পর থেকেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য। তিনি বলেন, কক্সবাজার সবসময়ই অবহেলিত ছিল, এত সুন্দর আমাদের একটা সমুদ্রসৈকত। সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এবং দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসে। কাজেই এ অঞ্চলটাকে আরও সুন্দরভাবে ও আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলাটা আমাদের কর্তব্য বলেই আমরা মনে করি। তিনি বলেন, এই কক্সবাজারে আমি অতীতে বহুবার এসেছি, শুধু যে বেড়াতে এসেছি তা নয়, ’৯১-এর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ের পর আমরা এখানে এসে দিনের পর দিন থেকেছি। বিভিন্ন দ্বীপে দ্বীপে ঘুরে বেড়িয়েছি। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না, মাছের ট্রলারে করে ঘুরে বেড়িয়েছি, সাম্পানে করে বা কেউ একটু লঞ্চে পৌঁছে দিয়েছে সেভাবে ঘুরেছি। হেঁটে প্রত্যেকটি অঞ্চল ঘুরে রিলিফ ওয়ার্ক করেছি এবং দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, সব সময়ই একটা চিন্তা ছিল যে, কিভাবে এ দরিদ্র মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাব। আজকে যে মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন হলো সেই মেরিন ড্রাইভের মধ্য দিয়ে যেমন মানুষ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবে সেই সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেরও বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ অঞ্চলের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি আমাদের এ দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। তবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ অবস্থায় রয়েছে যে, তা বলার মতো নয়। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্যই কক্সবাজারের যোগাযোগ অবকাঠামোর সার্বিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর জঙ্গীবাদবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে বলেন, আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে, এখানে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে বসবাস করবেন সেটাই আমরা চাই। ১৬ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার কক্সবাজারে একযোগে সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। অপরাহ্নে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে প্রধানমন্ত্রী একযোগে এ প্রকল্পগুলো উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, গণপূর্তমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ, কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস, কক্সবাজার সরকারী কলেজের একাডেমিক ভবন কাম এক্সামিনেশন হল, কক্সবাজার সরকারী কলেজের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কলেজ, উখিয়া, কক্সবাজারের দ্বিতল একাডেমিক ভবন এবং মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন উদ্বোধন করেন। আর যে নয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হলোÑ কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) এলজিইডি অংশের আওতায় কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর ওপর খুরুশকুল ঘাটে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার আইটি পার্ক, এক্সিলাটে এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক নির্মিতব্য মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল, সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোঃ (প্রাঃ) লিঃ কর্তৃক নির্মিতব্য মহেশখালীতে দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মহেশখালী উপজেলায় এসপিএম (ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) প্রকল্প, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কুতুবদিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস ভবন। মেরিন ড্রাইভ ॥ শহরের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কটি ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন ১৬ ইসিবি। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকারের সময়ে ৪৮ কিলোমিটার প্রকল্প গৃহীত হয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। বর্তমানে সড়কটি ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য থেকে বেড়ে ৮০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪০ কোটি টাকা। রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প ॥ ২০১১ সালে কক্সবাজার জেলে পার্কের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের ঘোষণার মাধ্যমে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ইতোমধ্যেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ॥ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ২ জুলাই উদ্বোধন করেন। বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ছয় হাজার ৬৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে নয় হাজার ফুটে উন্নীত হয়েছে। এক হাজার ১২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারডেইল এলাকার চার হাজার ৪০৯টি পরিবারকে বাঁকখালী নদীর উত্তর পার্শ্বে খুরুশকুল মৌজায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর এলজিইডি নির্মিতব্য সেতু ও সংযোগ সডকের জন্য ২শ’ কোটি টাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়িত পুনর্বাসন প্রকল্প উন্নয়নের জন্য ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বিমানবন্দর চালু হলে বিদেশী পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পকে বিশ্বজুড়ে বিকশিত ও প্রসারিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রামু সেনানিবাস ॥ দেশের সীমান্ত অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরীয় নিরাপত্তা, অখ-তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে রামুর খুনিয়াপালং, দক্ষিণ মিড়াছড়ি ও রাজারকুল মৌজার এক হাজার ৭৮০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত রামু সেনানিবাস। এটি দেশের দশম পদাতিক ডিভিশন, যার অধীনে রয়েছে দশম আর্টিলারি ব্রিগেড, ৯৭ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড, ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৬০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ৩৬ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট। ২০১৫ সালের ১ মার্চ এ সেনানিবাস উদ্বোধন করা হয়। মাতারবাড়ী কোল পাওয়ার প্রজেক্ট দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুত চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটায় নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রজেক্ট। ওই প্রকল্পের উৎপাদনক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯শ’ ৮৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা মৌজার ১৪১৪ একর ৬৫ শতক জমি অধিগ্রহণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত কক্সবাজারসহ দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত হবে। এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মহেশখালী উপজেলার ছয়টি মৌজায় (হোয়ানক, তেতালিয়া, কালারামারছড়া, হরিয়ারছড়া, পানিরছড়া ও অমাবস্যাখালী) পাঁচ হাজার ৬৪৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চূডান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রজেক্ট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লি. ৭০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের জন্য মাতারবাডী মৌজার ১২০০ একর জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইজিসিবি জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লি. ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের জন্য পেকুয়ার উজানটিয়া ও করিয়ারদিয়া মৌজার এক হাজার ৫৬০ একর জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলছে। সাবরাং অর্থনৈতিক জোন ॥ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) টেকনাফের সাবরাং মৌজার ৮৮২ একর জমিতে গড়ে তুলছে সাবরাং অর্থনৈতিক জোন। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হয়েছে। এলজিইডি, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নাফ ট্যুরিজম পার্ক ॥ নাফ নদীর নান্দনিক দ্বীপ জালিয়ারদ্বীপে ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে নাফ ট্যুরিজম পার্ক। এটি দেশের প্রথম বিশেষায়িত পর্যটন অঞ্চল। এটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশী পর্যটকে মুখরিত হবে টেকনাফসহ পর্যটন শহর কক্সবাজার। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ওই দ্বীপের ২৭১ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার এ ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ১৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কক্সবাজার ফ্রি ট্রেড জোন ॥ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) মহেশখালীর ১১ হাজার ৭৮৪ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলছে ওই ফ্রি ট্রেড জোন। এ প্রকল্পের জন্য হামিদরদিয়া মৌজার ৮৪৩ একর, কুতুবজোম মৌজার দুই হাজার ২৮৩ একর, ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৮ হাজার ৬৫৮ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুমোদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩টি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) মহেশখালীর এক হাজার ৪৩৮ একর জমিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। তন্মধ্যে ছোট মহেশখালী মৌজার ৪৩০ একর, পাহাড় ঠাকুরতলা মৌজার ১৪২ একর, ঠাকুরতলা মৌজার ৫০৭ একর, গোরকঘাটা মৌজার ৩৫৯ একর। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) মহেশখালীর উত্তর নলবিলা মৌজার ৮২৭ একর জমিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও ধলঘাটা মৌজার ৮২৭ একর জমিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা)। সোনাদিয়া পর্যটন কেন্দ্র ॥ মহেশখালীর সোনাদিয়া উপদ্বীপে আন্তর্জাতিকমানের ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র স্থাপন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা)। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ওই পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর খাসজমি বেজার অনুকূলে হস্তান্তর করেছে। মেডিক্যাল কলেজ ॥ আধুনিক ও বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ভবনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এটি দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও মনোরম মেডিক্যাল কলেজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কক্সবাজার সরকারী কলেজের পাশে ঝিলংজা মৌজার ৩২ একর জমির ওপর ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের সেরা মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ॥ পর্যটন নগরী কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টের সমুদ্র সৈকতের ঢিলছোড়া দূরত্বে দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি বিকাশ ও স্পোর্টস ট্যুরিজমের প্রসারের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পর্যটন কর্পোরেশনের গল্ফ মাঠের ৫১ একর জমির ওপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেছে। পেকুয়া সাবমেরিন স্টেশন ॥ বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসম্পদ রক্ষা, সমুদ্র নিরাপত্তা শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পেকুয়ায় স্থাপিত হচ্ছে দেশের প্রথম সাবমেরিন স্টেশন। মগনামা মৌজার ৪৬৬ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে এ সাবমেরিন স্টেশন। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
×