ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে ম্যাকরনের অভিযোগ

নির্বাচনী প্রচারাভিযান হ্যাক

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৭ মে ২০১৭

নির্বাচনী প্রচারাভিযান হ্যাক

বিপুল পরিমাণ ইমেইল তথ্যভা-ার অনলাইনে ফাঁস হওয়ার পর প্রথম দফা নির্বাচনে এগিয়ে থাকা ফরাসী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইমানুয়েল ম্যাকরন অভিযোগ করেন, তিনি ব্যাপক ও সমন্বিত সাইবার হামলার শিকার হয়েছেন। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ভুয়া নথি সঠিকগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। রবিবার দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে এই মধ্যপন্থী প্রার্থী উগ্র ডানপন্থী লিপেনের মুখোমুখি হচ্ছেন। খবর বিবিস ও ইডিপেন্ডেন্ট অনলাইনের। ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে এ তথ্য ফাঁসের ঘটনায় এটা পরিস্কার যে হ্যাকাররা তাকে হেয় ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে এমনটি করেছে। শুক্রবার যখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার অভিযানের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়, তখন একটি ওয়েবসাইটে এসব তথ্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ম্যাকরন শিবির থেকে বলা হয়েছে, প্রচারের সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে এসব তথ্য অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থী ও গণমাধ্যমকে নানা বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যার অর্থ, এ সময়ে ম্যাকরন হ্যাকিং নিয়ে আর কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন না। জনমত জরিপে এখনও মুসলিম বিদ্বেষী লিপেনের চেয়ে ম্যাকরন এগিয়ে। পেস্টবিন (চধংঃবনরহ) ওয়েবসাইটে ইএমলিকস (ঊগখঊঅশঝ) ইউজার আইডি থেকে ম্যাকরনের নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত ৯ গিগাবাইট নথি ফাঁস করা হয়েছে। এ হ্যাকিংয়ের জন্য রুশ হ্যাকারদের দায়ী করেছে জাপানের একটি এন্টি-ভাইরাস ফার্ম। তবে ম্যাকরন শিবির থেকে নির্দিষ্ট করে কাউকে দোষারোপ করা হয়নি। তারা জানিয়েছে, এ ঘটনায় দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইমেল ফাঁসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এ ঘটনাকে, ওই ঘটনায় রুশ হ্যাকারদের দায়ী করা হয়েছিল। তবে উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটদের তথ্য প্রকাশ করলেও এ ঘটনায় তারা জড়িত নয় বলে আভাস দিয়েছে। তারা কেবল ক্ষুদে ব্লগ টুইটারে ম্যাকরনের নথির একটি লিঙ্ক শেয়ার করেছে। সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিলারির ইমেল ফাঁসের ঘটনায় যুক্ত রুশ হ্যাকাররা ম্যাকরনের প্রচারাভিযানকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তবে রাশিয়া এ ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। ফাঁস হওয়া নথিতে কি আছে, তা এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। ম্যাক্রনের রাজনৈতিক আন্দোলন এন মার্শের দাবি, এতে ইমেল, অর্থনৈতিক বিষয়সহ ব্যক্তিগত প্রচার অভিযানের নানা তথ্যউপাত্ত আছে। এন মার্শে আন্দোলনের কয়েক কর্মকর্তার পেশাগত ইমেলে হামলা করে হ্যাকাররা বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে এসব নথি সংগ্রহ করেছিল। তবে এতে এমন কোন তথ্য নেই, যা দিয়ে ম্যাকরনকে ফাঁসানো যাবে। সব তথ্যই বৈধ প্রচার অভিযানের অংশ। ফরাসী নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ ফাঁস হওয়া এসব নথি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে সতর্ক করে দিয়েছে। নির্বাচনী খবর প্রচারে গণমাধ্যমের ওপর ইতোমধ্যে বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে ম্যাকরনের একটি গোপন ব্যাংক হিসাব আছে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এমন গুজবের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ম্যাকরন মামলা দায়ের করেন। ম্যাকরন এটাকে ভুয়া ও মিথ্যা বলে অভিযোগ করেন। তার দাবি, রাশিয়ার স্বার্থেই এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। শুক্রবার প্যারিসজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যেতে পারেননি। পুরো দিনটি তাদের এক ধরনের হুলস্থূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলে অস্ত্রসহ এক আইএস জঙ্গীকে আটক করা হয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের কর্মীরা আইফেল টাওয়ারে উঠে উগ্রবাদী নেতা লিপেনের বিরুদ্ধে একটি ব্যানার ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করলে পুলিশ জরুরী সভা ডাকতে বাধ্য হয়েছে। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির বড় দুই দল সোসালিস্ট ও রিপাবলিকান থেকে কোন প্রার্থী নেই। অথচ দশকের পর দশক ধরে এ দুটি দলই ফ্রান্সকে শাসন করেছে। এ নির্বাচনে ভোটারা ফ্রান্সের ভবিষ্যত পথচলা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেশটির অবস্থান কি হবেÑ তা ঠিক করতে যাচ্ছে। যদি মধ্যপন্থী ম্যাকরনকে বেছে নেন, তবে তারা এমন এক প্রেসিডেন্ট পাবেন, যিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সংস্কার ও সংহতি বাড়ানোর কাজ করতে চাচ্ছেন।
×