ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলতে পারে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ মে ২০১৭

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলতে পারে না

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেছেন, হেফাজতীরা বাংলাদেশকে জিয়াউল হকের পাকিস্তান আর মোল্লা ওমরের আফগানিস্তান বানাতে চায়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি হতে পারে না। ধর্মভিত্তিক কোন রাজনৈতিক দল থাকতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। এ কারণেই ১৯৭২-এর সংবিধানের মূলভিত্তি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। সেই সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ স্মরণে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ উপলক্ষে এ সভার আয়েজন করা হয়। এতে আরও বক্তৃতা করেনÑ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফায়েক উজ্জামান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম ও খুলনা বিশ্ববিদ্যাদলয়ের প্রফেসর ড. অনির্বাণ মোস্তফা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সরদার শফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. আহমেদ আহসানুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শাহরিয়ার কবির বলেন, সরকার বলছে কৌশলগত কারণে তারা হেফাজতের ইস্যুগুলো বিবেচনা করছে। কিন্তু আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, এই হেফাজতীরা কিন্তু তাদের ১৩ দফা অর্থাৎ এই দেশটাকে পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি। তারা এই দেশটাকে সাম্প্রদায়িক দেশ বানাতে চায়। হেফাজত নেতা শফি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, লুটপাট করেছে, মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মার্চ হেফাজতের আস্ফালনের কথা বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি। ১৯৯২ সালে হরকত-উল-জিহাদ নামক জঙ্গী সংগঠন গঠিত হওয়ার সময় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষনেতারা এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এ গোষ্ঠী কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করতে পারে না। এরা ধর্মান্ধ। ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি ও হিংসা ছড়ানোই এদের কাজ। এদের নিয়ে সরকার কী করল না করল সেটা তাদের রাজনৈতিক ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়াই আমাদের শেষ কথা। এ বিষয়ে কোন আপোস নেই। সংগঠনের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ৩০ লাখ শহীদ স্মরণে শহীদ স্মৃতি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে শাহরিয়ার কবির বলেন, এতদিন আমরা গণহত্যা, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, ধর্মীয় মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ তথা সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে লড়ে আসছি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। সে বিবেচনায় গণহত্যার বিচার ও প্রতিবাদের কর্মসূচীর সঙ্গে সমন্বয় করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ স্মরণে শহীদ স্মৃতি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারী প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচী অনুযায়ী বৃক্ষরোপণ করার আহ্বান জানান। তার মতে, এই রোপিত বৃক্ষ নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতিকে উজ্জীবিত করে রাখবে। আলোচনা সভার পর শাহরিয়ার কবির ২৫ জন শহীদের নামে ২৫টি বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের সূচনা করেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, চুকনগরের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গণহত্যা। গণহত্যার কথা উঠলেই চুকনগরের এই একটি স্থান দেখলেই আর কোন প্রমাণ লাগে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে খুলনার ডুমুরিয়ার মেছাঘোনা গ্রামে স্বাধীনতাবিরোধী শেখ আব্দুল মজিদের নামে শহীদ স্মৃতিসৌধ তৈরির ঘটনায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে এটি ভাঙতে হবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীর নামে কোন স্মৃতিসৌধ বা স্থাপনা করা যাবে না, এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। এটি অমান্য করলে আদালত অবমাননা হবে। তিনি খুলনা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।
×