ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গান ও আলোচনায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদের বর্ষপূর্তি উৎসব সমাপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৫ মে ২০১৭

গান ও আলোচনায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদের বর্ষপূর্তি উৎসব সমাপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বর্ষপূর্তি উৎসব শেষ হলো বৃহস্পতিবার। সমাপনী দিনের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে সঙ্গীতানুষ্ঠান ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের অন্তরে প্রশান্তি ছড়িয়ে গান শোনান ভারতের রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী শ্রেয়া গুহ ঠাকুরতা ও বাংলাদেশের বুলবুল মহলানবীশ। আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও কবি-প্রাবন্ধিক কামরুল ইসলাম। সঙ্গীতানুষ্ঠানের শুরুতেই কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান তুলে নেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। দরদিয়া কণ্ঠে গেয়ে শোনানÑ আমারও দেশের মাটির গন্ধে ভরে আছে সারা মন/শ্যামল কোমল হরষ ছাড়া যে নেই কিছু প্রয়োজন/প্রাণে প্রাণে যেন তাই তারই সুর শুধু পাই ...। দ্বিতীয় গানে শিল্পীর কণ্ঠে আশ্রয় নেয় নজরুলের সুরসুধা। গেয়ে শোনানÑ খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে/ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এলো যে এই পথ ধরে ...। এভাবেই সুরের সঙ্গে বাণীর সম্মিলনে শ্রোতাকে মুগ্ধ করে শিল্পী গেয়ে যান বেশ কয়েকটি গান। একইভাবে কণ্ঠের মাধুর্যে শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট করেছেন ভারতীয় শিল্পী শ্রেয়া গুহ ঠাকুরতা। আলোচনায় বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষীদের ঐক্যের স্থান ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। সে লক্ষেই বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ কাজ করছে। জাতিসংঘের অন্যতম দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে কাজ করবে এ সংগঠন। সে সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরে সর্ববঙ্গীয় লেখক-শিল্পী সম্মেলন করার কথা জানান। করুণাময় গোস্বামীর ‘লাহোরের রহিম খের’ উপন্যাসের প্রকাশনা ॥ ড. করুণাময় গোস্বামী একজন গবেষক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও কলাম লেখক। দেশ ও দেশের বাইরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম; বাংলা সাহিত্যের এই দুই কিংবদন্তী সম্পর্কে গবেষণামূলক কাজের জন্য পেয়েছেন নানান পুরস্কার। উপন্যাসও রচনায় সিদ্ধহস্ত এই গুণী মানুষটি। প্রকাশিত হলো তার দ্বিতীয় উপন্যাস গ্রন্থ ‘লাহোরের রহিম খের’। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপন্যাসটির প্রকাশনা উৎসব ও পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। অনুষ্ঠানে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা উপলক্ষে মোড়ক উন্মোচন ও বইটি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও খন্দকার স্বনন শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকাশনা সংস্থা ‘যুক্ত’র স্বত্বাধিকারী নিশাত জাহান রানা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রোকাইয়া হাসিনা ও ক্যামব্রিয়ান কালচারাল একাডেমির শিল্পীরা। ‘লাহোরের রহিম খের’ উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে পাকিস্তানী এক অধ্যাপক রহিম খেরের জীবনগল্প নিয়ে। যিনি এখন কানাডায় ট্যাক্সি চালনা করেন। তারই জীবনের গল্পের সঙ্গে লেখক যোগ করেছেন ইতিহাসের নানা তথ্যসুতা। তুলে ধরেছেন ইতিহাসের নির্মম বলি হওয়া শেকড়ছিন্ন অসংখ্য মানুষের কথা। এটি লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস। করুণাময় গোস্বামী তার এই দ্বিতীয় উপন্যাস সম্পর্কে বলেন, এখানে ইতিহাস আছে। ভারত উপমহাদেশের গেল সত্তর-আশি বছরের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে রহিম নিজেকে সংস্থাপন করেছেন। পরিপ্রেক্ষিতটা ইতিহাসের এলাকায়, বাকি সবটাই সাহিত্যে। উপন্যাসটির ভাবনা প্রসঙ্গে লেখক বলেন, কানাডা বেড়ানোর সময় একদিন ঠিক করলাম ডাক্তার দেখাতে যাব ওকভিল শহরে। ট্যাক্সি ডাকলাম। ড্রাইভার বললেন তিনি শ্রীলঙ্কার কলম্বোর লোক। কিন্তু ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে দেখি ড্রাইভার ওয়েটিং রুমে বসা। কাছে এসে দেখি তার মুখ ভার, নতদৃষ্টি। নিচে গিয়ে তার গাড়িতে উঠলাম। ভাবলাম সে আমাকে আবার নিয়ে যাবার জন্য বসে আছে। ড্রাইভার বললেন, তিনি তার আসল পরিচয় সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেছিলেন, সেটি সংশোধন করতেই তিনি অপেক্ষা করছিলেন, খেপ তোলার জন্য নয়। আমি অবাক হলাম সে কথা শুনে। ড্রাইভার বললেন, তিনি কলম্বোর অধিবাসী নন। তিনি লঙ্কারই মানুষ নন। তিনি পাকিস্তানী, লাহোরের মানুষ, নাম রহিম খের। পেশায় তিনি একজন অধ্যাপক ছিলেন। তার কথা শুনে আমি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। পরদিন সকালবেলা থেকে আমি নিবিষ্ট শ্রোতার মতো তার জীবন কাহিনী শোনা শুরু কলাম। কী বিচিত্র-নিষ্ঠুর-জটিল অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তিনি অগ্রসর হয়েছেন, ভাবলে বিস্ময় মানতে হয়। রহিম খেরের এই জীবনগল্প আর তার অভিজ্ঞতার কথা এবং আমার অভিজ্ঞতার কথা নিয়ে ইতিহাসের সুতোয় গেঁথে এই উপন্যাস। কবি মহসিন হোসাইনের জন্ম উৎসব সত্তর দশকের পুরোধা সাহিত্যসাধক, মুক্তিযোদ্ধা ও সার্বভৌম কবি মহসিন হোসাইনের ৬৩তম জন্মদিন উদ্্যাপিত হলো। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে তার এ জন্ম উৎসবের আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। জ্যোতিপ্রকাশের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অভিনেতা প্রবীর মিত্র। প্রধান অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জ্যোতিপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ডাঃ আসাদুজ্জামান, লেখক হেলেনা জাহাঙ্গীর প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী দিনার সুলতানা বিন্তী ও আশিকুর রহমান তমাল। অনুষ্ঠানে গান, আবৃত্তি ও বক্তৃতার মাধ্যমে কবি মহসিন হোসাইনের জন্মদিন পালিত হয়। এ সময় অভিনেতা প্রবীর মিত্র বলেন, সম্প্রতি একটি টেলিফিল্মে অভিনয়সূত্রে এক অভিনব মানুষের সাক্ষাত পেলাম। তিনি কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন হোসাইন। তার একখানা সিনেম্যাটিক চেহারা আছে বটে, তবু তিনি কবি, আপাদমস্তক কবি। আমি কবি মহসিন হোসাইন হোসাইনের ৬৩তম জন্মবার্ষিকীতে তার দীর্ঘ জীবন ও সাফল্য কামনা করি।
×