ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ মে ২০১৭

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হতে  হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে দেশবাসীকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বুধবার অপরাহ্ণে গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যখনই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখনই দেশের সুনাম ক্ষুণœ হয়। কাজেই প্রত্যেককে জঙ্গীবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। খবর বাসস’র। শেখ হাসিনার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবে এবং বিভাগের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের পর্যালোচনায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইট টি ইমামসহ সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ১ হাজার ইউনিয়নের প্রায় ২০ লাখ জনগণ বিভাগের ৬ হাজার ১৬৬টি পয়েন্ট থেকে সরাসরি সম্প্রচারকৃত এই ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন। দেশের উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে জরুরী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয় এবং কোন কিছুই যেন এই উন্নয়ন কাজে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে। পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। যেন আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। সরকারপ্রধান বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অর্থাৎ আমরা কোনভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে বরদাশ্ত করব না। একে দমন করে মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী, ভাল-শিক্ষিত অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে-পেলেরা বিপথে চলে যাচ্ছে। তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মেধা ও মনন, কাজ করার শক্তি ও ক্ষমতা যেটা দেশের কাজে লাগতে পারত, সেটা ধ্বংসাত্মক কাজে কেন যাবে? তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে- ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনও সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। ইসলামে কখনও নিরীহ মানুষ হত্যাকে সমর্থন করা হয়নি। এটা ইসলামে সবচেয়ে গুনাহ্র কাজ। কারো কারো মন মানসিকতা এমন যে, তারা নাকি মানুষ হত্যা করতে পারলে জান্নাতে চলে যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করে তারা জান্নাতে নয়, জাহান্নামে যায়। এটা আমাদের নবী করিমও (সা.) বলে গেছেন এবং আমাদের ইসলামেও আছে। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে মানুষের জীবনটাকে মূল্যায়ন করে একটি সুন্দর জীবন যাপনের নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে অন্যায়, অসত্য এবং মানুষ হত্যার কোন স্থান নেই। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু অসাধু লোকের ইসলামবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের কারণেই আজকে আমাদের পবিত্র ধর্ম মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা এই শান্তির ধর্মের নামে বদনাম করার সুযোগ পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সকলে মিলে নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার প্রস্তুতি গ্রহণকালে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে। এতে করেও আমরা অনেক বড় বড় বিপদ থেকে দেশের মানুষের জনমাল রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, কারণ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশও যেটা পারে নাই আমরা সেটাই করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, আমাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। সেজন্য আমি এটুকু বলব- আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন বা যারা আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেন তাঁরা এবং ওলামা মাশায়েখসহ সকলকে আমি আহ্বান জানাই, ইসলাম শান্তি ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। ইসলামে মানুষ হত্যা কিংবা জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই এই বিষয়টা সকলের সামনে তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রত্যেক শিক্ষক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকলের কাছে, অভিভাবক এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং এলাকায় ছাত্র বা ছেলে-মেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান। বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্র দীর্ঘ অনুপস্থিত থাকলে তার অনুপস্থিতির কারণ খোঁজার জন্যও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। কাজেই আমি চাই, এখানে সকল ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম কর্ম শান্তিতে পালন করবেন এবং সকল ধর্মাবলম্বীরা একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবেন। এটাই তো আমাদের ইসলামের মূল শিক্ষা এবং নির্দেশ। সেভাবেই সকলকে নিয়ে একটি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থেকে দেশকে আমরা গড়ে তুলব। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যত উন্নয়নের কাজ আমরা করে যাচ্ছি সেই উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। দেশের মানুষ যেন দু’বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পায় সে ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। গৃহহারা মানুষকে ঘর দিয়ে একটা ঠিকানা দিয়ে যেতে চাই। যেন তারা ভালভাবে বাঁচতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং দেশ ও জাতি এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী হলে যাতে তাদের শিক্ষাটা চালিয়ে যেতে পারে সরকার সে বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের প্রদত্ত বৃত্তি, উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্তানের মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন। সাত জেলায় এগারো গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার দেশের ৭ জেলায় ১১টি গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করে বলেছেন, তাঁর সরকার সব মানুষের জন্য নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশে আর একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সকলের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করা হবে, অন্তত একটি করে টিনের ঘর হলেও আমরা করে দেব। শেখ হাসিনা বুধবার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের উদ্বোধনকালে একথা বলেন। সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতি ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে। তিনি বলেন, আমি চাই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের পূর্বে দেশের একটি লোকও আর গৃহহীন থাকবে না। গুচ্ছগ্রামগুলো হচ্ছে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলাধীন সানিয়াজং, লালমনিরহাট সদর উপজেলাধীন হীরামানিক ১ ও ২, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল কোট ভাজনী বালাদূতি, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বাইরাচুনা সিরাইল, দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার অন্তর্গত বাগপুর-২, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার রিফিউজি পাড়া-১, রংপুরের পীরগাছা উপজেলাধীন জুয়ান-১, রংপুরের গঙ্গাছড়া উপজেলাধীন আর্জি জয়দেব, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলাধীন সালাইপুর এবং ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কবিরপুর-৫। এই ১১টি গুচ্ছগ্রামে ৩৯০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪১৫ জন।
×