ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

১০ মাসে কমেছে ১৬ শতাংশ

রেমিটেন্সের মন্দা কাটছে না

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৪ মে ২০১৭

রেমিটেন্সের মন্দা কাটছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রেমিটেন্স আয়ে মন্দা কাটছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসেবে এপ্রিল মাসে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। তবে আগের মাসের চেয়ে এপ্রিল মাসে তা সামান্য বেড়েছে। বর্তমানের এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিটেন্সের প্রবাহে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রেমিটেন্স প্রবাহ কমার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করছেন সংশ্লিস্টরা। প্রথমত, জনশক্তি যে হারে বাড়ার কথা সেভাবে বাড়ছে না। সরকার নানা দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এর দৃশ্যমান কোন ফল দেখা যাচ্ছে না। উল্টো বিভিন্ন কারণে কিছু লোক দেশে ফেরত আসছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমেছে। প্রবাসীদের জীবনযাত্রার ব্যয় আগের চেয়ে বেড়েছে। তৃতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান শক্তিশালী রাখা। যদিও সম্প্রতি ডলারের দামে অস্থিরতা দেখা গেছে। চতুর্থত, অবৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার হচ্ছে। তবে ঠিক কি কারণে রেমিটেন্স প্রবাহে গতি আসছে না তা অনুসন্ধান ও প্রতিকারে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ, পররাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে আর্থিক খাতের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিকাশের সঙ্গে বৈঠকও করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেমিটেন্স প্রবাহ আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। হুন্ডির দেশী-বিদেশী চক্র ভাঙতেও কাজ করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা অবৈধ উপায়ে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে হুন্ডির তৎপরতা বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ধারাবাহিক রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেলে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল হবে না। এতে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে চাপ তৈরি হবে। এমনিতেই আমাদের রফতানির চেয়ে আমদানি ব্যয় বেশি। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইতে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে, যা বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। এরপর আগস্ট মাসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ ও অক্টোবরে আসে ১০১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স। তবে নবেম্বরে তা ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল গত ৭২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এরপর ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে। আর জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স আসার গতি আরেকটু বেড়ে আবার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর পরের মাস ফেব্রুয়ারি তা আবার কমে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল প্রায় ছয় বছরের মধ্যে সবনি¤œ। তবে মার্চে আবারও রেমিটেন্স প্রবাহ শত কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এপ্রিল মাসে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এটি আগের অর্থবছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার বা ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে মোট রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ২৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল এক হাজার ২২৫ কোটি ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের এ সময়ে প্রবাসী আয় কমেছে ১৯৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা ১৬ দশমিক ০২ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এপ্রিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ২৬ কোটি ডলার। এছাড়া বেসরকারী ৩৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮১ কোটি ডলার, বিদেশী নয় ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২২ লাখ ডলার ও বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে সাড়ে ৯৭ লাখ ডলার। এছাড়া বরাবরের মতো এপ্রিল মাসেও সর্বোচ্চ ১৮ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ধারাবাহিক বৃদ্ধির পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কমে যায় প্রবাসী আয়। ওই অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। সেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
×