ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিবাহ ও কওমী মাদ্রাসা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

বাল্যবিবাহ ও কওমী মাদ্রাসা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাল্যবিবাহের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের বিশেষ বিধান যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ অনেক উন্নত দেশে রয়েছে। এদিকে অপর এক সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর কথা ভেবেই কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর সমান স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। গণভবনে সোমবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের শুরুতে শেখ হাসিনা কওমী সনদের স্বীকৃতির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, তাদের কী মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসব না? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটি বিষয় হাইকোর্টে যে ভাস্কর্য করা হয়েছে সেটা নিয়ে। সব থেকে বড় কথা হলো ওটা হচ্ছে গ্রিক গডেস অব জাস্টিস থেমেসিসের স্ট্যাচু। কিন্তু গ্রিক স্ট্যাচুকে যখন শাড়ি পরিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো আমি সে বিষয়টিই চীফ জাস্টিসকে বলেছিলাম। সব দেশে তো নেই, হাইকোর্টের মতো জায়গায় এটা হঠাৎ লাগানো হলো কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওড় এলাকার পানিতে ইউরেনিয়াম থাকার প্রোপাগা-া ছড়ানোর জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, পরমাণু শক্তি কমিশনের রিপোর্টের পরও অসৎ উদ্দেশে হাওড়ে ইউরেনিয়াম আছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি। তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে মিথ্যে খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সূচনা বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির কোন এক নেতা একেবারে যেন মহাজ্ঞানী বিজ্ঞানী। তিনি বলে দিলেন, সুনামগঞ্জে হাওড়ের পানিতে তেজস্ক্রিয় দূষণে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। এটা বৈজ্ঞানিক বিষয়, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা হবে ল্যাবরেটরিতে। তারা যদি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখাতে পারে তাহলে জনগণ বিশ্বাস করবে। নইলে এই সব মিথ্যা অপপ্রচার জনগণ কান দেবে না। অযথা অপপ্রচার না চালিয়ে বিএনপির বক্তব্যের পক্ষে কোন প্রমাণ থাকলে তা উপস্থাপন করার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি নাকি হেফাজতের সঙ্গে সন্ধি করে ফেলেছি, চুক্তি করে ফেলেছি। চুক্তিটা কি করলাম? হেফাজতের সঙ্গে আমাদেরতো কোন চুক্তি হয়নি। চুক্তির প্রশ্নই ওঠে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে কওমী মাদ্রাসার অবদান রয়েছে এটাকে অস্বীকার করা যাবে না। দেওবন্দ যে কওমী মাদ্রাসা, যারা প্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করে তাদের হাতেই তৈরি, তারাই করেছিল। সেখানকার যে কারিকুলাম সেটা কিন্তু ভারত গ্রহণ করেনি। ভারতে যদি আপনারা খোঁজ নেন তাহলে দেখবেনÑ কোলকাতায় যেসব মাদ্রাসা আছে সেখানে হিন্দু-মুসলমান সকলেই লেখাপড়া করছে। এরকমও মাদ্রাসা আছে যেখানে ৪০ ভাগ হিন্দু শিক্ষার্থীও রয়েছে। আমাদের কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাটা ৬টি বোর্ডে বিভক্ত। তাদের কারিকুলাম আলাদা। এখানে যে কি পড়ালেখা হচ্ছে তার খবরটা কেউ কোনদিন রাখেনি। তারা সেখানে ফার্সি, আরবি, উর্দু প্রভৃতি ভাষা শেখায়। পাশাপাশি অনেক মাদ্রাসায় আবার কম্পিউটারসহ অনেক কিছুই শেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এই ৭৫ হাজার কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করছে। তাদের কারিকুলাম কি, কি তারা শিখছে কেউ বলতেই পারছে না। সেই জায়গাটায় আমরা এটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, যে উদ্যোগটা আমাদের বহু আগের নেয়া- তাদের কারিকুলামটা ঠিক করে দেয়া। যাতে করে তাদের শিক্ষাটা যেন মানসম্পন্ন হয় এবং এই যে শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ওইখানে শিক্ষা গ্রহণ করে সেই শিক্ষাটা যেন সঠিক পথে অর্জিত হয়। আর এই শিক্ষার মাধ্যমে তাদের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটা হয়। জীবন জীবিকা নির্বাহ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং শিক্ষাটা যেন মানসম্পন্ন হয়। শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য আমি ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পরে আমি যখন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতে ছিলাম সে সময় এই শিক্ষাটা নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে বসি, আলাপ- আলোচনা করি এবং তাদের ওপর দায়িত্ব দেই-আপনারাই ঠিক করেন আপনাদের কারিকুলামটা কি হবে, আমরা একটা সনদ দিতে চাই। কারণ সংবিধানেই আছে শিক্ষাটা সার্বজনীন এবং শিক্ষাকে সব থেকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকারটা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। এটা হলো বাস্তব কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য আমি ওলামা ক্বেরামগণকে নিয়ে একটি কমিটি এবং পরে একটি কমিশন গঠন করি। তাদেরই দায়িত্ব দেয়া ছিল আপনারা একটা জায়গায় বসে একটি সমঝোতায় আসেন। তাদের সনদ দেবার জন্য আমরা আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ও করে দিয়েছি। যেখান থেকে তাঁরা সনদটা পেতে পারেন। তিনি বলেন, এই দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর ৬টি কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের লোকজন এক হয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে তারা কারিকুলামটা গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন তারা এক হবার সিদ্ধান্ত নিলেন তখনই আমরা ঘোষণা দিলাম যে, আমরা সনদ দেব। আর তাদের কারিকুলামগুলো কেমন হবে সেটির জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়েছে। তাদের অফিসও দেয়া হয়েছে তারা সেখানে বসে এই কারিকুলামটা ঠিক করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এখানে বলব, এই যে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী বাইরে পড়ে ছিল তাদের আমরা মূল শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে এনে শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ইনক্লুসিভ করতে চাই। কাজেই যারা এটা নিয়ে নানা কথা ছড়াচ্ছে তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন এই ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর দোষটা কোথায়? এখানে কার সঙ্গে কার সন্ধি হয়ে গেল, চুক্তি হয়ে গেল এসব কথার মানেটা কি? প্রধামন্ত্রী বলেন, আরেকটা বিষয় হাইকোর্টে যে ভাস্কর্য করা হয়েছে সেটা নিয়ে। সব থেকে বড় কথা হলো সেটা হচ্ছে গ্রিক গডেস অব জাস্টিজ থেমেসিসের স্ট্যাচু। কিন্তু গ্রিক স্ট্যাচুকে যখন শাড়ি পড়িয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলোÑআমি সে বিষয়টিই চীফ জাস্টিজকে বলেছিলাম। তিনি বলেন, ভাস্কর্যতো আমাদের দেশে অনেক আছে, থাকবে। এটাতো হাজার বছরের পুরনো একটা বিষয়। সব দেশে নেই তো হাইকোর্টের মতো জায়গায় এটা হঠাৎ লাগানো হলো কেন? স্ট্যাচু যখন থাকবে তখন এটাকে কেন বিকৃত করা হলো। কাজেই আমি নিজেও বলেছি এটা আমার পছন্দ না। এটা আমি চীফ জাস্টিজকে বলেছি এবং যে ভাস্কর্য করেছেন তাকেও বলেছি। তিনি বলেন, এটা যখন সরকারের কথা বলা হলো তারা কি এটা দেখছেন না, এটা আর গ্রিক নাই অর্ধ গ্রিক আর অর্ধ বঙ্গ রমণী হয়ে বঙ্গগ্রিক হয়ে গেছে। এটাওতো তাদের চোখে পড়া উচিত। আর এটা করা একং কোথায় বসবে এটা নিয়েও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের বিশেষ বিধান যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ অনেক উন্নত দেশে রয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় সরকারের নেয়া ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে চুপ করে বসে নেই। প্রত্যেকের জন্য ৩০ কেজি করে চাল ও ৫০০ করে টাকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যথেষ্ট সজাগ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা সেখানে নিচ্ছে।’ হঠাৎ এই বন্যা নিয়ে বিরূপ প্রচারণার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে কিছু প্রচার- প্রোপাগা-া আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিএনপির কোন এক নেতা মহা জ্ঞানী, মহা বিজ্ঞানী বলে দিলেন, ভারত থেকে ইউরেনিয়াম এসে এই অঞ্চলের মাছ মেরে ফেলছে।’ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি দলের সুনামগঞ্জের হাওড়ের পানি পরীক্ষা করার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিযোগটা যখন আসল, আমরা কিন্তু বসে ছিলাম না। এ্যাটমিক এনার্জি থেকে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সেখানকার পানি পরীক্ষা করা হলো। তারা বলল, এখানে এ ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি। বিএনপির সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কথা শোনার পরও তারা প্রেস কনফারেন্স করে এই কথাটা বলে বেড়াচ্ছে। এর অর্থটা কী দাঁড়াচ্ছে? তাদের কী প্রমাণ আছে?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওড়াঞ্চলের বন্যার পানিতে কেন মাছ বা জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে সে বিষয়টাও আমরা খবর নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়; সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। যে কারণে পৌরসভা, মেয়র বা সিটি কর্পোরেশন ইলেকশনে আমাদের প্রার্থী হেরে গেছে, বিএনপি প্রার্থী জিতেছে, কোথাও আমরা জিতেছি। কিন্তু কোথাও অস্বাভাবিক ঘটনা আমরা ঘটতে দিইনি। এক পৌরসভা ও ১৯ ইউপিতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত : প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে নেতৃবৃন্দের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এক পৌরসভায় এবং ১৯ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার ক্ষেতলাল পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোঃ সিরাজুল ইসলাম। রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দিনেশ চন্দ্র রায়। এছাড়া রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুরে মোঃ বদরুজ্জামান খান, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়ায় মোঃ এনামুল হক বাবলু, ধুবইলে মোঃ মাহাবুর রহমান, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পেড়লীতে মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, পাঁচগ্রামে মোঃ জহুরুল হক মোল্যা, বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুরে মোঃ ছরোয়ার হোসেন, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুরে মাহে আলম, হিজলা উপজেলার ধুলখোলায় মোঃ ইকবাল হোসেন, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার সোনাকাটায় মোঃ সুলতান ফরাজী, ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালীয়ায় আবদুল কাদির, খিদিরপুরে মোঃ মাহবুবুর রহমান, কৃষ্ণপুরে এমদাদুল হক আকন্দ, চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর আব্দুলাহে মোঃ কামাল উদ্দিন, চর আলগীতে জাতির হোসেন চৌধুরী, বড়খেরীতে মোঃ আলতাফ হোসেন (ফরহাদ), বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নে তসলিম ইকবাল চৌধুরী, কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার শাকপুরে মোঃ আব্দুল মালেক, ভাউকসারে আহম্মেদ জামাল মাসুদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
×