ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জব্বারের ১০৮তম বলীখেলা আজ

সেয়ানে সেয়ানে লড়াই কৌশল আর পেশী শক্তির কসরত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

সেয়ানে সেয়ানে লড়াই কৌশল আর পেশী শক্তির কসরত

মাকসুদ আহমদ ॥ কৌশলে চলবে পেশিশক্তির খেলা। আজ চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে জমবে বলীখেলা। সেয়ানে সেয়ানে লড়বে চ্যাম্পিয়ন বাউটের বলীরা। সাধারণ বাউটে খেলবে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। শখের বশত যারা কখনও বলীখেলা দেখেনি বা অংশ নেয়নি তাদের অনেকেই রেজিস্ট্রেশন করে লড়বে। জোড়ায় জোড়ায় বলীদের মধ্য থেকে একে অপরকে লুটিয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে নেবে। সবারই চোখ যেন থাকবে চ্যাম্পিয়ন বাউটের দিকে। নগরীর লালদীঘি মাঠে এবারের ১০৮তম জব্বারের বলীখেলা আয়োজনের উদ্বোধন করবেন সিএমপি কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার। প্রধান অতিথি ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপসহ সাধারণ বলীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করার কথা রয়েছে। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার এ বলীখেলার সূচনা করেন। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ১০৭টি আয়োজন শেষ হয়েছে গত বছর। আজ ১০৮তম আয়োজন। লালদীঘি মাঠে তৈরি করা হয়েছে বলীখেলার মঞ্চ। এ মঞ্চেই লড়বে বলীরা। শুধু চট্টগ্রামেই নয়, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বলীরা এ আয়োজনে অংশ নিতে ছুটে আসে। ১০৬তম আয়োজনে বিদেশী বলীও সৌজন্যমূলক নেমেছিল খেলতে। সূর্যাস্তের লগ্নে শুরু হয় চ্যাম্পিয়ন বাউট। এর আগে বিকেল ৩টা থেকে শত বলীর রেজিস্ট্রেশনে চলে জোড়ায় জোড়ায় কুপোকাত করার পালা। বেছে নেয়া হয় একের পর এক সাধারণ বাউটের বলীদের। চ্যাম্পিয়ন বাউটে ছয় অথবা আটজনের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে রানারআপ ও চ্যাম্পিয়ন। গেল বছরের আয়োজন থেকে বলা যায়, এটা দেশীয় আয়োজনে বলীখেলা হলেও সারাবিশ্বে প্রবাসী বাঙালীরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশনে দেখার চেষ্টা করেন। শুধু বাঙালীই নয়, বিদেশীরাও প্রকৃত বলীখেলার আনন্দ উপভোগ করেন। কারণ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রেসলিংয়ের নামে যে খেলা হয় তা আমাদের বাঙালীর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রয়েছে। তবে সেটি হলো সাজানো কিন্তু আমাদের আয়োজন সত্যিকারের। ফলে আকর্ষণ অনেক বেশি। ইতিহাসের হিসাব অনুযায়ী লালদীঘি মাঠ রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে মিটিং-মিছিলের জায়গা। কিন্তু বলীখেলার মাঠ হিসেবেও ইতিহাস ধরে রেখেছে এ মাঠ। বলীখেলা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী মেলায় গত শুক্রবার থেকেই তৈজসপত্রের পসরা নিয়ে চট্টগ্রামে হাজির হয়েছেন তিন শতাধিক ব্যবসায়ী। মেলার মূল আয়োজন গত রবিবার থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫শ’। চার থেকে ছয় ফুটের ছোট ছোট জায়গা নিয়ে সড়কের ডিভাইডারে বসেছে অনেকেই। তবুও মেলায় আসতে হবে, এ যেন ধারায় পরিণত হয়েছে। বনেদি ব্যবসায়ীরা এখন তাদের পরিবার-পরিজন নিয়েও মেলায় স্টল দেয়া শুরু করেছেন। রবিবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলার জমজমাট আয়োজন চলবে আজ মঙ্গল ও কাল বুধবার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার থেকে আবার শুরু হবে ব্যবসায়ীদের ফিরে যাওয়ার পালা। তবে চাকরিজীবীদের জন্য বন্ধের দিনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার পর্যন্ত চলার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তিন দিনব্যাপী মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়েছে আয়োজকদের। তবে আজ মঙ্গলবার তথা জব্বারের বলীখেলার দিন মেলা ও খেলাকে ঘিরে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএমপি। এর মধ্যে কোতোয়ালি মোড় থেকে আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত, লালদীঘি থেকে কেসি দে রোড পর্যন্ত, লালদীঘি থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত শুধুমাত্র বলীখেলার ১০৮তম আসরের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সোমবার লালদীঘি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পসরা নিয়ে ব্যস্ত দোকানিরা। কোতোয়ালি মোড় থেকে শুরু করে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডার ও ফুটপাথগুলোতে পসরা সাজাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কিছু কিছু ব্যবসায়ী আগেভাগে চলে আসায় নিজেদের স্থানটুকু সুন্দর ও পরিপাটি জায়গায় বেছে নিয়েছেন। মেলায় বিশেষ করে তৈজসপত্র, গৃহের সাজসজ্জার পণ্যসামগ্রী, গৃহিণীদের নিত্যদিনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছাড়াও আসবাবপত্রও মিলছে এ মেলায়। ইতিহাসে কালের সাক্ষী হিসেবে জব্বারের এ মেলার জন্য আবারও একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে চট্টগ্রামবাসীকে।
×