ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মান্তরিত আবদুল্লাহ আলমসাধু চালক থেকে জঙ্গী-

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

ধর্মান্তরিত আবদুল্লাহ আলমসাধু চালক থেকে জঙ্গী-

এম, রায়হান, ঝিনাইদহ ॥ পোড়াহাটি গ্রাম। ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূর এই গ্রামের চৈতে বিশ্বাসের ছেলে প্রভাত ওরফে বেড়ে। মায়ের নাম সন্ধ্যা। ৩ ভাই। বড় ভাই দিলীপ বিশ্বাস, মেজ ভাই বিপুল বিশ্বাস, প্রভাত বিশ্বাস ছোট। গ্রামের লোকজন তাকে বেড়ে বলেই চেনেন। ৫ বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে প্রভাত। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে প্রভাত দুটি বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রীর ১ মেয়ে হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয় বেড়ে। পরে মেজো ভাইয়ের শ্যালিকার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করে। ২ ছেলেসহ তাকেও ছেড়ে দেয়। সব শেষে সে ধর্মান্তরিত হয়ে পোড়াহাটির পাশে চুয়াডাঙ্গা গ্রামে আবদুল লতিফের মেয়ে ফাতেমা ওরফে রুবিনাকে বিয়ে করে। তার ১ মেয়ে, নাম আয়েশা। ধর্মান্তরিত হয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে গ্রামের এক পাশে মাঠের মধ্যে একটি ২ রুম বিশিষ্ট টিনের বাড়ি করে বসবাস করছিল। প্রতিবেশী চাঁদ আলী ও ইউসুফ আলী জানান, আবদুল্লাহ ৫ বছর আগে সনাতন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এর পর পার্শবর্তী চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আবদুল লতিফের মেয়েকে বিয়ে করে। আবদুল্লাহর বাড়িতে কেউ যেত না। মাঝে মধ্যে অচেনা কিছু লোক মোটরসাইকেল নিয়ে আসা-যাওয়া করত। প্রতিবেশী শিরিনা খাতুন বলেন, আবদুল্লাহর স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা কারও সঙ্গে কথা বলত না। মুখ সব সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখত। গ্রামের টিপু জোয়ার্দ্দার বলেন, আবদুল্লার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত রাতে ফিরত। তার বাড়ির ভেতরে কেউ যেত না। তার স্ত্রীকেও কেউ দেখতে পারত না। সব সময় বাড়ির গেটে তালা লাগিয়ে বন্ধ করে রাখত। সে আলম সাধুতে করে কাঠের গুঁড়া নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দিত। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে সে পোড়াহাটির শরিফুল ইসলামের তেল পাম্পে দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর শ্রমিকের কাজ করেছে। এখন আলমসাধু চালায়, মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে ঘোরে। তার সঙ্গে অনেক সময় মোটরসাইকেলে বিভিন্ন লোক আসতে দেখা যেত। গ্রামের জামিরুল ইসলাম বলেন, আবদুল্লাহ গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়ত না। গ্রামের মসজিদে নাকি তার নামাজ হতো না। সে ঝিনাইদহ শহরের মারকাজ মসজিদে নামাজ পড়তে যেত। গ্রামের কোন লোকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল এমন আমরা দেখিনি। প্রতিবেশী আসলাম বলেন, বাড়িটি খাস জমির ওপর। ওয়াহেদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সে ৬০ হাজার টাকায় কেনে। বাড়ির একটি গেট। বাড়িটি এমনভাবে টিন দিয়ে ঘেরা বাইরে থেকে কিছুই দেখা যেত না। কেউ ডাকলে সে বাড়িতে থাকলেও কথা বলত না। সে স¤পূর্ণ ভিন্নভাবে চলাফেরা করত। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, গোপনে আবদুল্লার জেএমবির সম্পৃক্ততার খবর পায় পুলিশ। গত কয়েকদিন ধরে তার গতিবিধি লক্ষ্য করে শুক্রবার অভিযানে নামা হয়। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন সাউথ-প’ (ংড়ঁঃয ঢ়ধ-িদক্ষিণের থাবা)। শনিবার বেলা ২টায় শেষ হয়। তার বাড়ি থেকে যেসব জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে, একই দেশে ইসলামী দলের ব্যাপারে হুকুম, হেযাজের কাফেলা, দ্য ভিঞ্চি কোড, ধৈর্য্য ধরুন জান্নাত পাবেন, খুদবাত তাওহীদ ওয়াসসুন্নাহ, জান্নাতি ১০ মহিলাসহ বিভিন্ন ধরনের ১৫টি বই। এছাড়া ছোট্ট ওই ঘরে সুইসাইডাল বেল্ট, ভেস্ট, অস্ত্র, বিস্ফোরক, গ্রেনেড ও বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম জড়ো করেছিল তা দেখে এটাকে জেএমবির অস্ত্র তৈরির কারখানা বলে মন্তব্য করেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ। তিনি বলেন, তারা স্বামী স্ত্রী দু’জনই নিউ জেএমবির সদস্য। পুলিশের অভিযান আঁচ করতে পেরে পালিয়ে গেছে। আবদুল্লাহর জঙ্গী সম্পৃক্ততার খবর জানতে পেরে গ্রামের লোকজন হতবাক হয়ে পড়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবদুল্লাকে ধরতে পারলে তারা আরও খুশি হতো বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
×