ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাদ-বাগান করে নগরীর তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রী সে. কমানো সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২০ এপ্রিল ২০১৭

ছাদ-বাগান করে নগরীর তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রী সে. কমানো সম্ভব

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ঢাকা মহানগরীর ৬০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ- যা এই নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী। যদি শহরে সব ছাদে পরিকল্পিতভাবে ছাদ-বাগান করা হয় তবে তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এসব অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির পারিবারিক বাগান তৈরি করা সম্ভব। এর দ্বারা পারিবারিক ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখারও সুযোগ রয়েছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের ছাদে বাগানের একটি নতুন মডেল তৈরি করা হয়েছে, যার নাম ‘নিবিড় ছাদ-বাগান’। যেখানে বাগানের মোট ক্ষেত্রফলের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ রাস্তা, ১০ শতাংশ বসার জায়গা, ৪০ শতাংশ শাক-সবজি, ১০ শতাংশ ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ, ২০ শতাংশ ফল, মসলা ও ওষুধি এবং ৫ শতাংশ অন্যান্য গাছের জন্য বিবেচনায় রেখে বাগানের মডেল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ মডেলের বৈশিষ্ট্য-অধিক জীববৈচিত্র্য, দৃশ্যত খুবই আকর্ষণীয়, বিনোদন ও খাদ্য উৎপাদনের জায়গা হিসেবে ব্যবহার হয়। বাগানে প্রবেশ করা সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ল কাঁচা-পাকা বড় টবে নরসিংদী অমৃত সাগর কলা। কয়েকটি গাছে ডালিম আর পেঁপে দেখা গেল। পাশেই রয়েছে কয়লা গাছের মাচা, লেবু, আমলকি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক, ডাটাসহ বিভিন্ন সবজির গাছ। অন্য পাশে পেয়ারা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, আম, লেবু, ডালিম, কামরাঙ্গা, ড্রাগন ফ্রুট, আঙ্গুর, কমলা, আনারস, জামরুল, লিচু, করমচা, বরই, জাম্বুরা, জলপাইসহ কয়েকটি দেশ-বিদেশী ফলের গাছ। রয়েছে পাট গাছ। ফল ও সবজির গাছগুলোর মধ্য কোন গাছে ফুল এসেছে আবার কোনটাতে ফল ধরেছে। পুরো ছাদজুড়ে যেন সবুজের সমারোহ। ছাদে এক পাশে রয়েছে- রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্লান্ট। বাগানের শেষ প্রান্তে বাঁশের খুঁটি অবলম্বন করে কিছু পিভিসি পাইপ স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাল্টি লেয়ার হাইড্রোপোনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে- ক্যাপসিকাম, চাইনিজ বাঁধাকপি, টমেটো, লেটুস। এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব ইসলাম বলেন, বহির্বিশ্বের মানুষ অনেক আগে থেকেই ছাদে বাগান করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে অপরিকল্পিতভাবে অল্প সংখ্যক ছাদ-বাগান করা হলেও তা ব্যাপকতা লাভ করেনি। ছাদে বাগান করে শহরে গাছপালা প্রবর্ধনের মাধ্যমে জীবের জন্য নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব। ছাদের বাগান বাতাসের গুণাগুণ উন্নয়ন করে, কারণ গাছপালা হচ্ছে পরিবেশের বিষাক্ত উপাদানের প্রাকৃতিক ছাঁকনি। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারক উপাদান যেমন পার্টিকুলেট ম্যাটার গাছের পাতায়, কান্ডে ও শাখায় লেগে থাকে যা পরবর্তীতে সেচ ও বৃষ্টির পানির মাধ্যম মাটিতে চলে যায়, ফলে বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়া গাছপালা গ্রীষ্মকালে তাপশোষণ ও শীতকালে তাপবর্জন করে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এক গবেষণায় পাওয়া যায়, ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে, যা শীতলীকরণ চাহিদার জন্য বিদ্যুত খরচ কমায় এবং ছাদ-বাগানে ছাদের তাপমাত্রা ও ছাদ-বাগানবিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য ৭.৮৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়। ড. মাহবুব আরও জানান, ছাদে বাগান বৃষ্টির পানি ধরে রাখা, শহুরে কৃষির সম্প্রসারণ তথা ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদা পূরণ, আয়ের উৎস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এটি সামাজিক সম্পর্ক, শিক্ষা, গবেষণা এবং খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম শহুরে কৃষির একটি মডেল হতে পারে। শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, যদি রাজধানী ঢাকায় ব্যাপকভাবে ছাদ বাগানের প্রসার করা যায়-তবে এটি কার্বনডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য বায়ু দূষণকারী উপাদানের মাত্রা কমিয়ে মহানগরীতে তাপের প্রভাব ও পরিবেশ দূষণ কমাবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।
×