ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে গ্রামীণ জনপদে বৈশাখের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

বরিশালে গ্রামীণ জনপদে বৈশাখের ছোঁয়া

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ‘সকল গ্লানি ভুলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এসো দেশ গড়ি সকলে মিলে। এ দেশের উন্নয়ন যেমনি এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে, তাকে আর পিছিয়ে যেতে দেয়া যাবে না কোন অশুভ শক্তির কালো ছোঁয়াতে’। ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেশ গড়ার এমনই দীপ্ত শপথ বাক্য পাঠ করানোর মাধ্যমে বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার গ্রামীণ জনপদে চলছে বৈশাখী উৎসব। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণের নানা কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে চলমান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী উৎসবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়া এবং জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দীপ্ত শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছেন স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তেমনি গ্রামীণ জনপদে চলছে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা। এসব আয়োজনে গ্রামীণ জনপদে এখন বৈশাখের ছোঁয়া লেগেছে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জেলা শহরের বাইরে গৌরনদীর সীমান্তবর্তী নতুন টরকী এলাকার প্রত্যন্ত রমজানপুর আইডিয়াল টেকনিক্যাল একাডেমি পরিচালনা কমিটির আয়োজনে চার দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব সোমবার শেষ হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে একাডেমি প্রাঙ্গণে বসেছিল মিলন মেলা। একাডেমির প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন আকন অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সুধী ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। বর্ষবরণ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ সকালে একাডেমি প্রাঙ্গণে পান্তা, ইলিশের আয়োজনের পর বাঙালীর ঐতিহ্যের নানা প্রতীক নিয়ে সুবিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। দ্বিতীয় দিন একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, তৃতীয় দিন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও সমাপনী দিনে পুরস্কার বিতরণের পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। পহেলা বৈশাখের উৎসবকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নগরীসহ জেলার দশ উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক স্থানে চলছে বৈখাশী মেলা। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এসব মেলায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সকল বয়সের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেলা চলবে বৈশাখ মাসজুড়ে। বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, আবহমানকাল থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে বৈশাখী মেলা বসে। সকলের জীবনের সঙ্গে বৈশাখী মেলা জড়িয়ে আছে। মেলায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পজাত হরেক রকম পণ্য বিক্রি ছাড়াও আগতদের মনোরঞ্জনের জন্য নানা ব্যবস্থা করা হয়। অতীতে মেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হতো কবি গান, জারি গান, পালা গান, বাউল গান, পুতুল নাচ, যাত্রা, গাজীর পটসহ অন্যান্য গান। বিনোদনের জন্য থাকত বায়োস্কোপ, নাগর দোলা, কুস্তি, কাবাডি, ঘুড়ি ওড়ানো, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, ষাঁড়ের ও মোরগের লড়াই। এর সবকিছু না হোক কোন কোনটি এখনও টিকে আছে। মেলা উপলক্ষে যেসব খাবার, খেলনা ও কারুপণ্য তৈরি হয় তা আমাদের কৃষ্টির অন্যতম উপাদান। বৈশাখী মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঠের আসবাবপত্র, কৃষিপণ্য, কৃষি উপকরণ, বীজ, মৃৎ ও কুটির শিল্পজাত বিভিন্ন পণ্যর পসরা নিয়ে বসে বিক্রেতারা। বাঙালী চেতনা ও সংস্কৃতির প্রবহমান ধারা হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখী মেলা। আগের অবস্থার কিছু পরিবর্তন ঘটলেও মেলা এখনও জমজমাট। সর্বস্তরের সব বয়সের মানুষের কাছে মেলা অনাবিল আনন্দের উৎস হিসেবে চিহ্নিত। মেলার মাধ্যমে স্থানীয় সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিচয় মেলে। পহেলা বৈশাখ আত্মীয়-স্বজনদের উপহার দেয়ার প্রথা এখনও রয়েছে। নববর্ষ ও বৈশাখী মেলা বাঙালীর জীবনে এক অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি করে। তুচ্ছ প্রাত্যহিকতার উর্ধে উঠে সবার সঙ্গে মিলিত হবার উত্তম ক্ষেত্র হচ্ছে মেলা। প্রতিদিন দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়ে জমে থাকে বৈশাখী মেলা। মেলার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাঙালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সকল বয়সের নারী-পুরুষের বৈশাখী পোশাক, মেলা ও নানা উৎসবে এখন বরিশালের গ্রামীণ জনপদে লেগেছে বৈশাখের ছোঁয়া।
×