ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলবাদ রোখার দৃঢ় প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

মৌলবাদ রোখার দৃঢ় প্রত্যয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সারাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব, মেলা, লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ পালন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ সময় বক্তারা সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ রোখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। রাজশাহী শুক্রবার সকাল থেকে নেচে-গেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠেন রাজশাহীর উৎসবপ্রিয় মানুষ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মঙ্গল শোভাযাত্রায় শামিল হন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ ছাড়াও সর্বত্র প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভোর থেকেই মেতে ওঠেন মানুষ। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর কলেজিয়েট স্কুল থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে এ মাঠে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সার্বজনীন এ উৎসবে সবার মধ্যেই ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে রুখে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও নগরীতে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। এতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন, মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি, রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেণী ও শিক্ষাবিদ শফিকুর রহমান বাদশাসহ সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। ভোরে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মহানগরীর পদ্মা পাড়ের ফুদকিপাড়ার উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বাংলা বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। সেখানে আয়োজন করা হয় পান্তা উৎসব। গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে পদ্মাতীরে শুরু হয়েছে সাত দিনের বৈশাখী মেলা। খুলনা মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী গান, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা উৎসব, মেলা, লাঠিখেলাসহ নানা কর্মসূচী আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার খুলনায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানকে ঘিরে নানা বয়সের মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন আলোচনা সভায় বক্তারা অশুভ শক্তি মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকালে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর চত্বরে বৈশাখী গানের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হয়। পরে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ। শোভাযাত্রায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের বাংলোর বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্তা উৎসব। সন্ধ্যায় নগরীর শান্তিধাম মোড়ের জাতিসংঘ শিশুপার্কে ‘বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য ও ইতিহাস’ নিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ শিশুপার্কে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, আব্বাস উদ্দীন একাডেমি, রূপান্তর ও বর্ষবরণ পর্ষদ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা, পান্তাপর্ব, আলোচনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সিলেট শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, নগরী ও নগরীর বাইরে অবস্থানরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের কার্যক্রম শুরু হয়। শোভাযাত্রায় গ্রামীণ কৃষকদের প্রতিচ্ছবিসমৃদ্ধ হাতিয়ার ও গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত জিনিস-কাগজ দিয়ে তৈরি করে বাঙালীর ঐতিহ্যের প্রতীক তুলে ধরা হয়। বর্ষবরণে সবচেয়ে উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে শিশু-কিশোররা। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চিত্রাঙ্কনকারী শিল্পী দিয়ে হাতে ও মুখাবয়বে নববর্ষ সম্পর্কিত বিষয় অঙ্কন করা হয়। নগরীতে অবস্থিত বিদ্যাপীঠে মঙ্গল শোভাযাত্রা পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের আয়োজন করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের হালখাতা নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। যশোর নববর্ষের দিন সকালে পৌর পার্কে বসেছিল মিলনমেলা। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সমবেত হন এখানে। সব বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুদের এ মিলনমেলায় হাজির করে উদীচী যশোর। ৪২ বছর ধরে বর্ণিল বর্ষবরণ উৎসব আয়োজনে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষগুলোকে মিলনমেলায় হাজির করছে তারা। পহেলা বৈশাখ ভোর ৬টা ৩১ মিনিটে শুরু হয় উদীচীর এ প্রভাতী অনুষ্ঠান। পরিবেশিত হয় বিশ্ব ও প্রকৃতির বন্দনা, দেশ বন্দনা ও নতুন বছরের আবাহন গীতি। দ্বিতীয় পর্বে কিশোর শিল্পীদের পরিবেশনায় বাংলার নানামুখী গানের একক, দ্বৈত, ত্রৈয়ী ও সম্মিলিত পরিবেশনা ছিল। ছিল পঞ্চকবির গান। সঙ্গে বাউল শাহ আব্দুল করিমের গান, কীর্তন, ছড়াগান ও প্রচলিত লোকগীতিও। তৃতীয় পর্বে শিশু শিল্পীরা পুতুলনাচ, বৃন্দ আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে। চতুর্থ পর্বে ছিল যন্ত্রসঙ্গীত ও বাংলা লোকগান। এ পর্বে লোকসঙ্গীতের পথপ্রদর্শক প্রয়াত কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য পরিচালিত গানের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে এ পুরাধা প্রতিমকে স্মরণ করা হয়। পরে আবৃত্তির মাধ্যমে উপস্থাপিত হয় বিশেষ পর্ব ‘জাগাবো স্বদেশ’। এ পর্বে পাঠ্যপুস্তকে অসঙ্গতি, নারী নির্যাতন, নাসিরনগর হামলা, সাঁওতালপল্লী উচ্ছেদ, জঙ্গী হামলা ও সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। তারপর পরিবেশিত হয় সাঁওতাল কলস নৃত্য। আদিবাসীদের এ নৃত্যের পর একাল-সেকালের সুপরিচিত আধুনিক গান নিয়ে হাজির হন শিল্পীরা। সবশেষে ছিল বাউলগানের আসর। নারায়ণগঞ্জ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ও নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় নগরীর চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে দেওভোগ চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ খেলাঘর আসরের সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, জাহিদুল হক দিপু, জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু প্রমুখ। এদিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া থেকে আরেকটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন- জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, পুলিশ সুপার মঈনুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই প্রমুখ। কুড়িগ্রাম শুক্রবার সকালে স্বাধীনতার বিজয়স্তম্ভ থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলী ও জেলা প্রশাসক খান নুরুল আমিন। এতে প্রেসক্লাব, প্রচ্ছদ কুড়িগ্রাম, উদীচী, কুসাক্রী সংসদ, জীবিকা, সলিডারিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয় বর্ষবরণে প্রভাতী অনুষ্ঠান। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে কুড়িগ্রাম পৌরসভায় পহেলা বৈশাখের পান্তা ইলিশ ভোজের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আয়োজন করা হয়েছে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা। পাবনা শুক্রবার জেলা প্রশাসন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, স্কয়ার গ্রুপ, পাবনা ড্রামা সার্কেলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। সকালে ৭টায় পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রথম বর্ষবরণ শোভাযাত্রাটি বের হয়, পরে পর্যায়ক্রমে পাবনার সুনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কায়ার পরিবার পাবনা টাউন হল মাঠ থেকে শোভাযাত্রা বের করে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পাবনা প্রেসক্লাব, সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট, একুশে বইমেলা, লালন স্মৃতি পরিষদ, সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতি, সরকারী এডওয়ার্ড কলেজসহ পাবনার ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেল শহরের সংগঠন কার্যালয় থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। এবার পাবনা ড্রামা সার্কেল আপ্যায়নে ব্যতিক্রমী আয়োজন করে। পান্তা ইলিশকে বর্জন করে দেশিও খাবার দই, মিষ্টি, চিড়া, মুয়া, মুরকি, দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। বরিশাল শুক্রবার সকালে সিটি কলেজ প্রাঙ্গণে চারুকলা বরিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান লোকজ সংগীত ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা করে। এরপর সকাল আটটায় নগরীতে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়া উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বিএম স্কুল থেকে এবং জেলা প্রশাসন আয়োজনে সার্কিট হাউস থেকে পৃথক মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। চারুকলার দু’দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে শুক্রবার সকালে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসবে মুক্তিযোদ্ধা ও গুণীজনদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। শরীয়তপুর বাঙালী ব্যবসায়ীদের চিরাচরিত হালখাতা, পান্থাভাত খাওয়া, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্নস্থানে গ্রাম্য মেলা, র‌্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে শরীয়তপুরে বাংলা নববর্ষ পালিত হয়েছে। সকাল ৭ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের করা হয় র‌্যালি। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খানের নেতৃত্বে র‌্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিকেলে শিল্পকলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এছাড়াও জেলার ৬ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত করা হয়েছে। মাগুরা জেলা শহরের নোমানী ময়দানে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে । শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় লাঠিখেলা ও অষ্টকগান অনুষ্ঠিত হয়। লাঠি খেলায় মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকা ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে আগত লাঠিয়ালরা লাঠি খেলা প্রদর্শন করেন। লাঠি খেলা শেষে অষ্টকগান পরিবেশিত হয়। মাগুরা সদর উপজেলার আঠারখাদা ইউপির অষ্টকগান দল নৃত্যের সাথে অষ্টকগান পরিবেশন করেন । শনিবার মেলায় জাদু ও মোটরসাইকেল প্রদর্শনী এবং রবিবার গ্রামীণ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে । কুষ্টিয়া নববর্ষকে ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিনোদন স্পটগুলোতে নারী, শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে। বিভিন্ন আলোচনাসভায় বক্তারা নতুন বছরে সকল প্রকার অশুভ শক্তি প্রতিরোধে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পালন করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভোর থেকে গানে গানে বর্ষবরণ পালন করে জেলা প্রশাসন। লক্ষ্মীপুর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী ফিতা কেটে, বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, লক্ষ্মীপুর সরকারী বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান প্রমুখ। মৌলভীবাজার শুক্রবার সকালে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, জনমিলনকেন্দ্র, পৌরসভা প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ মঞ্চে সমবেত কণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’ এই আগমনী সংগীতে নববর্ষকে আবাহন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ । পরে অশুভ শক্তির বিনাশ আর শুভ শক্তির বিকাশে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় শহরে। নাটোর শুক্রবার সকালে শহরের কানাইখালী মাঠ থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজবাড়ী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণকারীদের জন্য নাটোর এ্যাপেক্স ক্লাবের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় সুমিষ্ট ও শীতল শরবত বিতরণের। তিন দিনের অনুষ্ঠানে প্রতিদিন থাকছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলা। নরসিংদী শুক্রবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভুইয়া এবং শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের পুরাতন টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়। এতে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলালীগসহ শত শত উৎসুক জনতা অংশ নেয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একই সময়ে সদর উপজেলা চত্বর থেকে জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বিপিএম ও সিভিল সার্জন সুলতানা রাজিয়ার নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের পূর্ব ভেলানগর মালাকার ডাক্তারের বাড়ির সন্নিকটে গিয়ে শেষ হয়। পরে উপজেলা চত্বরে নৃত্যানুষ্ঠান, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকালে শহরের মুক্তমনা মঞ্চে প্রভাতী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজারও মানুষের ঢল নামে। অনুষ্ঠান শেষে বের করা হয় শোভাযাত্রা। এদিকে বরাবরের মতো এবারও সবচেয়ে আকর্ষণীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মিতালী সংঘ’। এছাড়া ‘মধুমাছি কচি কাঁচার মেলা’র উদ্যোগে মোক্তারপাড়ায় মগড়া নদীর তীরে এবং ‘পূর্বাঞ্চল বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদে’র উদ্যোগে চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলা ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সংগঠনটির কার্যালয়ে দেশজ খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে। খাগড়াছড়ি শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয় । পরে সেখানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শোভাযাত্রায় টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা,স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা,খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান,বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মতিউর রহমান,ডিজিএফআই খাগড়াছড়ি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী,জেলা প্রশাসক রাশেদুল ইসলাম,পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান প্রমুখ অংশ গ্রহণ করে। নওগাঁ শুক্রবার পুরনো কালেক্টরেট চত্বর থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে বর্ষবরণের উদ্বোধন করেন আব্দুল মালেক এমপি। পরে গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য গরুরগাড়ি, ঘোড়াগাড়ি ও পালকি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক বিপিএম, পিপিএম, সিভিল সার্জন ডাঃ রওশন আরা খানম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক এমপি শাহিন মনোয়ারা হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাজেদা ইয়াসমিন প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। পরে পুরনো কালেক্টরেট চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। জেলা প্রশাসকের বাংলোয় বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্য পান্তাভাত খাওয়া হয়। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। হবিগঞ্জ বি কে জি সি গভঃ গালর্স হাই স্কুল, সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা মহাবিদ্যালয়, বৃন্দাবন সরকারী কলেজ, উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী নানা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ দিনব্যাপী আয়োজন করে বৈশাখী উৎসব-১৪২৪। এতে অতিথি হিসেবে অংশ নেন ডিসি সাবিনা আলম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সফিউল আলম, এডিসি (সার্বিক) এমরান হোসেন প্রমুখ। গোপালগঞ্জ শুক্রবার জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ‘এসো হে বৈশাখ’ শিরোনামে শহরের শিশুপার্কে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোখলেসুর রহমান সরকার। এরপর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ ও মিষ্টিমুখ অনুষ্ঠান। আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানসহ অনেকেই। ভোলা শুক্রবার সকালে ভোলা শহরের অফিসার্স ক্লাব চত্বরে প্রভাতি বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সেলিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব এম মোকাম্মেল হক, ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও জেলা আয়োমী লীগেরসহ সভাপতি দোস্ত মাহামুদ, ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর প্রমুখ। পরে মঙ্গল শোভা যাত্রা বের হয়। ঝালকাঠি শুক্রবার ঝালকাঠির শিশু পার্কে ঢাকার রমনার বটমূলে প্রভাতী অনুষ্ঠানের আদোলে ঝালকাঠির কিশলয় খেলাঘর আসর প্রভাতী সঙ্গীত অনুষ্ঠান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ করা হয়। পরে একই স্থানে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী জেলা শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এর পরে শিশু পার্ক থেকে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয় মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বান্দরবান আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসবের ২য় দিনে বৌদ্ধমূর্তি ¯œান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে শহরের রাজগুরু বৌদ্ধবিহার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উজানীপাড়ার সাঙ্গু নদীর পাড়ে বৌদ্ধ মূর্তি ¯œান উৎসবে মিলিত হয়। এ সময় পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্চিত কুমার রায় বৌদ্ধ অনুসারী নেতাসহ স্থানীয়রা বৌদ্ধঅনুসারীরা মূর্তিতে পবিত্র জল ঢেলে ¯œান করান। শেরপুর শুক্রবার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়াম থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে কালেক্টরেট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এতে হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি, জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম জিয়াউল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেয়। পালকি, গরুরগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি এবং বাংলার বাঘসহ বিভিন্ন মুখোশ পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশু-কিশোররা বাদ্য-বাজনাসহ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রা শেষে কালেক্টরেট চত্বরে অংশগ্রহণকারী সকলকে দই-চিড়া, রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। রাঙ্গামাটি শুক্রবার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে রাঙ্গমাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য দিপংকর তালুকদার, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহা আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুর মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর ও পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়েছে। সেখানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পান্তা উৎসব হয়। এ ছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঈশ্বরদী, বাউফল, দৌলতপুর, কালকিনি, সান্তাহার, পাথরঘাটা ও মীরসরাইয়ে অনুরূপ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
×