ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ আসন্ন!

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ আসন্ন!

উত্তর কোরিয়া যে কোন সময় পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে- উপগ্রহের ছবি ও গোয়েন্দা সূত্রের প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে মার্কিন নৌবহর কোরীয় উপদ্বীপের দিকে ধেয়ে আসছে। ইতোমধ্যে বিমানবাহী রণতরী কার্ল ভিনসনসহ বেশ কয়েকটি রণতরী রয়েছে। এদের প্রত্যেকটিতে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। জাপানী যুদ্ধ জাহাজও এই বহরের সঙ্গে যোগ দেবে এমন ঘোষণাও এসেছে। সবমিলিয়ে এই এলাকার আকাশে বাতাসে যুদ্ধের পূর্বাভাস বিরাজ করছে। শনিবার উত্তর কোরিয়ার কিম বংশের প্রতিষ্ঠাতা, বর্তমান নেতা কিম উনের পিতামহ কিম ইল সুংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকীর এক সামরিক সমাবেশ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএন সে দেশের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি মনে করে যে, তারা ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার সঙ্গে যা করেছে, তা আমাদের সঙ্গেও করবে তবে এটি বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না।’ এ নিয়ে উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যান সং রিয়ল গত শুক্রবার বলেছেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র দিনকে দিন ভয়ানক আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, তারা যদি যুদ্ধ চায় তবে আমরা তারজন্য প্রস্তুত। এমন পরিস্থিতিতে চীন শুক্রবার এইমর্মে সতর্ক করেছে, দুইদেশের মধ্যে বিরাজমান এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, বেজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই বলেছেন, ‘অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, একপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া অন্যপ্রান্তে উত্তর কোরিয়া- উভয়ের হাতে উন্মুক্ত তরবারি, তীরগুলো ধনুকের ছিলায় পরিয়ে নিক্ষেপের অপেক্ষায়, আকাশে ঝড়ো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে।’ ওয়াং আরও বলেন, এই উপদ্বীপে যুদ্ধ শুরু হলে যারা এজন্য দায়ী তাদেরই এর দায়-দায়িত্ব নিতে হবে এবং ঐতিহাসিকভাবে শাস্তির সম্মুখীন বা পরিণতি ভোগ করতে হবে। চীনের পক্ষ থেকে এ ধরনের চাঁছাছোলা মন্তব্য অনেকটাই অস্বাভাবিক। কেননা দেশটি ট্রাম্প প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচীকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছিল, সেই সঙ্গে তারা দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক তাও চাচ্ছিল না। মোট কথা চীনের মনোভাব ছিল অনেকটা এ রকম, কোন ধরনের জটিলতায় না গিয়ে মাঝামাঝি একটি অবস্থানে থেকে সবকুল রক্ষা করা। কিন্তু গলফ ক্লাব বীচের অবকাশ কেন্দ্রে ট্রাম্পের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের একান্ত বৈঠকের পর দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা নানাভাবে প্রতিভাত হচ্ছে। এরই মধ্যে সিরিয়া প্রশ্নে জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভেটো প্রদানে বিরত থাকে। অন্য এক প্রসঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা এইমর্মে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, দু’টি দেশ (যুক্তরাষ্ট্র ও চীন) উত্তর কোরিয়ার সন্দেহভাজন গতিবিধি, সমরাস্ত্র ও অন্যান্য অবৈধ পণ্য নিয়ে জাহাজ চলাচলের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে সম্মত হয়েছে, যা এক কথায় অভূতপূর্ব। কথায় আছে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অথবা কোণঠাসা হয়ে পড়লে যে কোন নিরীহ প্রাণীও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। আর এত উত্তর কোরিয়া, যার হাতে পারমাণবিক অস্ত্র এবং এই অস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে আমেরিকার মূল ভূখ-েও আঘাত হানতে সক্ষম। তাই আশপাশের রাষ্ট্রসহ যুক্তরাষ্ট্রও বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। উত্তর কোরিয়াকে ঠেকাতে প্রস্তুত জাপান ॥ উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ঘিরে টান টান উত্তেজনার মধ্যে দেশটিকে মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জাপান। শনিবার সকালে হিরোশিমা সফররত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র রাষ্ট্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সমন্বিতভাবে উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন মোকাবেলা করতে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাপানী সৈন্যরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলেও জানান কিশিদা। জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী এই মন্ত্রী বলেন, উত্তর কোরিয়া তাদের সীমা অতিক্রম করে গেছে। তারা তাদের প্রতিষ্ঠাতা নেতা কিম ইল সাংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। দেশটি নতুন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তজেনা তৈরি করতে পারে এমন আশঙ্কা করছি আমরা, তবে এবার আমরা ছাড় দেব না। -নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি
×