ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ দিনের উজানের ঢল, তিস্তায় হঠাৎ বান ডেকেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ এপ্রিল ২০১৭

পাঁচ দিনের উজানের ঢল, তিস্তায় হঠাৎ বান ডেকেছে

তাহমিন হক ববী, তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া থেকে ॥ তিস্তাপাড়ের পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়ার উদ্দিন (৬৮) বললেন, এপার বাংলা-ওপার বাংলার মধ্যে সুন্দর একটা মেলবন্ধন রয়েছে, সুন্দর একটা স¤পর্ক আছে। দুই বাংলার মানুষের মুখের ভাষাও এক। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমার বয়স ছিল ২০ বছর। সে সময় ভারত আমাদের স্থান দিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, পাকী সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সহায়তা করেছিল। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধে ভারতের সহায়তায় আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ফিরে পেয়েছি। তাহলে তিস্তা চুক্তি হবে না কেন। অবশ্যই হতে হবে। আমরা চাই তিস্তা চুক্তি হোক। ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। এই তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের দুই দেশের স¤পর্ক যেন আরও সুদৃঢ় হয় এমনটিই চাওয়া আমার। তাই এবারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তাপাড়ের মানুষজন তিস্তা চুক্তির জাদুকরী স্বপ্ন দেখতেই পারে। তিস্তাপাড়ের ছোটখাতা গ্রামের বৃদ্ধ রইছ উদ্দিন স্মৃতির পাতা ঘেঁটে বলেন এই সময় তিস্তার পানি দেখে মনে হচ্ছে তিস্তা যেন সেই তিস্তায় ফিরে এসেছে। যে তিস্তায় ১৯৮৬ সালের আগে যে ভাবে বহমান ছিল। গত ৫ দিন ধরে উজানের ঢলে তিস্তায় বান ডেকেছে। তিস্তার পানির চমকে তিস্তাপাড়ের গ্রামে গ্রামে যেন ফিরে এসেছে অনাবিল শান্তি। পাখির কলতান। তেলিরবাজার এলাকার মনছুর আলী বলেন, তিস্তার বহমান স্রোতে ছোট ছোট খেয়াঘাটগুলো চালু হয়েছে। তুলে রাখা নৌকা এখন এপার ওপার চলাচল করছে। তিস্তাপাড়ের মানুষজন বলছে হঠাৎ তিস্তার পানিতে যেমন চমক এসেছে, তেমনি আমরা মনে করছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনের ভারত সফরে তিস্তার পানি চুক্তি হঠাৎ চমক সৃষ্টি করতে পারে। জানা গেছে, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাংলাদেশ সীমান্ত হতে ৬০ কিলোমিটার তিস্তা নদীর উজানে ভারত ১৯৮৬ সালে গজলডোবা ব্যারাজের নির্মাণ কাজ শুরু করে। যা ১৯৯৮ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ করলে তিস্তা নদীর পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ভারতের হাতে। সেই হতে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা শুষ্ক মৌসুমে ধু ধু বালুচরে পরিণত হতে থাকে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানির চমকে গোটা তিস্তা অববাহিকা যেন সতেজতায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শুধু নদী নয়, নদীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাখো মানুষ, বৃক্ষরাজি আর ফসলি জমি। সতেজতার প্রাণের উৎসবে মেতে উঠেছে তিস্তা অববাহিকার জীব বৈচিত্র্য। সেই সঙ্গে উচ্ছাসের উৎসবে নৌকায় করে মাছ শিকারে মেতেছে জেলে পরিবার। দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকার সেচ ক্যানেলগুলোতে পানি উপচে পড়ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের যে ৪৪ জলকপাট বন্ধ রাখা হয়েছিল, তা এখন ২৪ ঘণ্টা খুলে রেখে নদীর পানি ভাটিতে ছেড়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। পানি এখন উজান ও তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতেও ঢেউ খেলে যাচ্ছে। অপরদিকে, পর্যাপ্ত সেচ পাচ্ছে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ৬৫ হাজার হেক্টর বোরো ক্ষেত। তিস্তার পলিমিশ্রিত পানি পেয়ে বোরো ধানের গাছ লক লক করে বেড়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত রবিবার রাত থেকে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে, যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১২ হতে ১৩ হাজার কিউসেকে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা কমান্ড এলাকার কৃষকরা বলছেন, এখন তিস্তা সেচ প্রকল্পে পানি রাখার জায়গা নেই। এর আগে এমন শুষ্ক মৌসুমে এত পানি পাওয়া যায়নি। এখন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বোরো ক্ষেতগুলো সেচের পানিতে ভরে থাকছে। শুধু বোরো নয় অন্যান্য রবি ফসলেও সেচের সংকট ঘুচেছে। তিস্তার চমক দেয়া পানিতে চলছে শত শত নৌকা। মাছ ধরছে তিস্তাপাড়ের জেলেরা। যদিও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে আশাহত বলা যায় না।
×