ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মমর ফিরে আসা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৬ এপ্রিল ২০১৭

মমর ফিরে আসা

রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাশের বনলতা সেন কবিতায় দারুচিনি নামে এক মায়াচ্ছন্ন রহস্যময় দ্বীপের নাম আমরা জেনেছি। সত্যিকার এই দ্বীপ কোথায়? শুনেছি সিংহল রাজ্য বা শ্রীলঙ্কায়। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ হয়ত কৌতূহল নিয়ে লিখেছিলেন দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাস। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। জীবনের অপ্রিয় বাস্তবতা। অতপর রূঢ় বাস্তবতা থেকে পালিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে নীল সাগরে কষ্ট বির্সজন.. এমনি রোমঞ্চকর গল্পের উপন্যাস দারুচিনি দ্বীপ। সাল ২০০৬। লাক্স চ্যালেন আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন জাকিয়া বারী মম। আমাদের গ্ল্যামার ওয়াল্ডে এই নামটি তখন নতুন ছিল না। নাচ, গান, অভিনয় সবই ছিল মম নামটির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। দুই হাজার ছয় সালে সেরা প্রতিযোগীর মুকুট পরার পর সাফল্যের স্বর্ণ দুয়ার হতে মম প্রবেশ করে কামিয়াভির দুনিয়ায়। শুরুতেই রোমাঞ্চকর উপন্যাস দারুচিনি দ্বীপের (২০০৭) গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘জরি’ করেন। প্রথম সিনেমা এতটাই সফল ছিল যে তার জন্য বাজিমাতই বলা চলে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দর্শক প্রশংসা ইত্যাদি গুণী অভিনেত্রীর সব খেতাবই জুড়ে যায় তার নামের সঙ্গে। ক্যামেরার মূল ফোঁকাসে মমকে পরিষ্কার দেখা যায়। সামর্থ্যরে প্রমাণ রেখে তিনি হয়ে ওঠেন বিনোদন জগতের ব্যস্ত নাম। ছোটপর্দায় নিয়মিত অভিনয়ে মমকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসে। মমের জন্ম ঢাকায়। শৈশব কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায়। বাবা মুজিবুল বারী, মা আয়শা বেগম। ছোটবেলা থেকে নাচ শেখা, গান করা, অভিনয় করা এমন সব সৃজনশীল কর্মযজ্ঞে মম পারিবারিকভাবে সম্মতি পেয়ে আসছে। একাডেমিক লেখাপড়া করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায় থেকে নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, পরবর্তীতে শিক্ষার বিষয় বাস্তব জীবনে প্রয়োগ মমের অভিনয় জীবনকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে। ২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদের চিত্রনাট্য এবং তৈকির আহমেদের পরিচালনায় রূপালি পর্দায় অভিষেক হলেও তাকে নায়িকা রূপে দ্বিতীয় কিস্তিতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সাত বছর। ‘প্রেম করব তোমার সাথে’ মমর দ্বিতীয় সিনেমা সহ শিল্পী আনিসুর রহমান মিলন। পরিচালক রকিবুল আলম। সাল ২০১৪। এই সিনেমার পর মম আর দীর্ঘ বিরতিতে যাননি। ঠিক পরের বছর হাজির হন ‘ছুয়ে দিলে মন’ নামে একটি রোমান্টিক মিষ্টি প্রেমের আখ্যানে। শিহাব শাহীনের পরিচালনায় এই সিনেমা এক রকম আলোড়ন তৈরি করে। উঠতি প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে পোক্ত প্রেমিক-প্রেমিকা সকলের হৃদয় ভালবাসার বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেয়। ছুঁয়ে দিল মন সিনেমা। আরিফিন শুভর সঙ্গে মমর সাবলীল অভিনয়, প্রেমময় কাথার গান, দৃষ্টিনন্দন চিত্রায়ণ সব মিলে এ যাত্রাও মম সুপারহিট। ছোটপর্দায় একাধিক দর্শকনন্দিত নাটক মমর ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করেছে। বিশেষ করে ‘নীলপরী নীলাঞ্জনা’ ‘ভালবাসার চতুষ্কোণ’ ‘এখন আমি’ ‘কপাল’ বন্ধু ইত্যাদি তাঁর সাফল্যের অলঙ্কার। এসবের পর আবরও মম রূপালি পর্দায়। সম্প্রতি জানা যায় মম ফরিদুর রেজা সাগরের উপন্যাস ‘আলতা বানু’ এই উপন্যাসে আলতা বানু চরিত্রে অভিনয় করবেন। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করবেন অরুণ চৌধুরী। আনিসুর রহমান মিলন থাকছেন তার সহ শিল্পী। মিলনের সঙ্গে এটা তার দ্বিতীয় সিনেমা আর মমর ক্যারিয়ারের পঞ্চম। যদিও বিরতিটা একটু লম্বা কিন্তু তারপরও তাঁর সম্পের্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের ইতিবাচক আশায় স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করছে। মম গুণী অভিনেত্রী। সিনেমার পর্দায় দীর্ঘ বিরতি, এটা হতে পারে তার সচেতন সিদ্ধান্ত! ভাল কাজ করে দর্শকদের পরের আর্কষণের জন্য অপেক্ষায় রাখা। তা না হলে ২০০৭ সালে অমন রাজকীয় অভিষেকের পর দীর্ঘ দশ বছরে তার সিনেমার সংখ্যা কেন চারটি? মমর ক্যারিয়ারের অনেক সময় এখনও বাকি সে কারণে ভাবাই যায় মম তার নামের সুবিচার করতে পূর্বমত সচেতন থাকবেন। সব ঠিকঠাক সম্পন্ন হলে ২০১৭ সালেই বড়পর্দায় পঞ্চমবারের মতো দেখা যাবে এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেত্রীকে।
×