ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখের পোশাক প্রদর্শনী শিল্পকলায়

কামরুলের রেখাচিত্র শীতের পিঠা হাতের চুড়ি থেকে নক্সা

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৫ এপ্রিল ২০১৭

কামরুলের রেখাচিত্র শীতের পিঠা হাতের চুড়ি থেকে নক্সা

মোরসালিন মিজান ॥ ফুলের মতো ফুটছে বৈশাখ। রং রূপের পুরোটা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাকে যে উপস্থাপনা-উদযাপন, সত্যি দেখার মতো। মার্কেট শপিংমল লাল সাদা রঙে সেজেছে। আয়োজন করা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রদর্শনী ও বৈশাখী মেলার। শিল্পকলা একাডেমিতে এ ধরনের আয়োজন কম হয়। তবে এখন জমজমাট। চিত্রশালা প্লাজায় পোশাকের পসরা। বেশ কয়েকটি স্টল। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর সংগ্রহ ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। মেলার পরিসর খুব বড় নয়। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম। কিন্তু দেশীয় পোশাকের জন্য নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোই অংশ নিয়েছে। অনেকে ছোট্ট পরিসরে কাজ করেন। ব্যক্তি উদ্যোক্তা। কাজ দেখে সেটি বোঝা যায় না। ঠিকই মুগ্ধ হতে হয়। সবাই মিলে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সুন্দর সমন্বয় ঘটিয়েছেন। গ্রামীণ জীবন ও লোক সংস্কৃতির নানা মোটিফ নিয়ে কাজ করেছেন স্বনামধন্য ডিজাইনাররা। প্রায় প্রতিটি স্টলেই আছে শাড়ি। থ্রি-পিস, সিঙ্গেল কামিজ, ফতুয়া কুর্তি পাওয়া যাচ্ছে। পুরুষের জন্য আছে পাঞ্জাবি ফতুয়া টিশার্ট। দেশীয় পোশাক নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে কাজ করছে নিপুণ। ফ্যাশন হাউসটির শোরুমে সব বয়সী নারী পুরুষের পোশাক। গ্রামীণ জীবনে নিত্য ব্যবহার হয় গামছা। সেই গামছা দিয়ে নারীদের পোশাক তৈরি করেছে নিপুণ। ডিজাইনের কাজ করেছেন শৈবাল সাহা। একাধিক রঙের গামছা জোড়া দিয়ে তৈরি করা কুর্তি দেখতে বেশ লাগে। অন্য কাপড়ের সঙ্গে গামছা জোড়া দিয়েও কিছু ডিজাইন করা হয়েছে। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ট্র্যাডিশনাল গামছাকে অবিকল রেখেই নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কাট আর প্যাটার্ন নির্ভর কুর্তির প্যাচগুলো প্রিন্ট করা হয়েছে গামছা চ্যাকে। শাড়ির মধ্যে আছে নকশিকাঁথা। পুরোটা নকশিকাঁথা নয়। নকশিকাঁথা স্টিচ ব্যবহার করা হয়েছে দক্ষতার সঙ্গে। রং বাংলাদেশের স্টলে চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল রং। খুব নজর কাড়ে। প্রতি বছরই আলাদা আলাদা থিম নিয়ে কাজ করে ফ্যাশন হাউসটি। এবার তাদের অনুপ্রেরণা পটুয়া কামরুল হাসান। মহান শিল্পীর সৃজনশীল জগত থেকে লোক জীবনকে খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করেছেন ডিজাইনার। কালজয়ী রেখাচিত্র থেকে নেয়া মোটিফ হাসছে শাড়ির জমিনে। কামিজের হাতায়। পিঠার গায়ে যে নক্সা, সেটিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পোশাকে। সন্দেশের মোটিফ নতুন চোখে দেখতে হয়। বরাবরের মতোই নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টা করেছে অঞ্জন’স। এই ফ্যাশন হাউসটি বিভিন্ন লোক মোটিফ নিয়ে কাজ করেছে। প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সাপলুডু খেলার ঘর। চার-ছক্কা। মোটিফগুলো ভেঙ্গে নতুন চেহারা দেয়া হয়েছে। পোশাকে এমন ফিরে দেখার প্রশংসা করতেই হয়। বাঙালী নারীর হাত ভর্তি চুরি থেকেও নক্সা করা হয়েছে। ঘন বৃত্তাকার ডিজাইন শাড়িতে। সিঙ্গেল কামিজে। শিতল পাটির ডিজাইন নিয়েও পোশাকের কাজ করা হয়েছে। এভাবে সাধারণ ডিজাইন অসাধারণ হয়ে উঠেছে। ফ্যাশন হাউস সাদাকালো আবার দুটি রঙের বাইরে যায় না। সাদা এবং কালোর সমন্বয়ে কাজ করে। স্টলে গিয়ে দেখা গেল একইরকম উপস্থাপনা। এখানে সাদা হাফ সিল্কের একটি শাড়িতে নকশিকাঁথা প্রিন্ট। দেখে চোখ আটকে যায়। কিছু শাড়িতে ব্লকের নান্দনিক কাজ। থ্রিপিস সিঙ্গেল কামিজে এমব্রয়ডারি করা হয়েছে। সব ধরনের পোশাক ছাড়াও এখানে আছে জানালার পর্দা। বেডশিট। একটি স্টলে কথা হয় অঞ্জন’স-এর ডিজাইনার সময়ের সঙ্গে। বললেন, আমাদের গ্রাম খুবই সমৃদ্ধ। তাই বার বার গ্রামে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করি। এবারের বৈশাখেও গ্রামীণ জীবনের নানা অনুসঙ্গকে পোশাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ডিজাইনাররা। মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও খুশি। নাসরিন ও সাহানা এসেছিলেন শান্তিনগর থেকে। বললেন, কয়েকটি স্টল ঘুরেছি। কিন্তু এবারের বৈশাখের পোশাক সম্পর্কে ভাল একটি ধারণা হয়ে গেছে। নিজেদের শাড়ি মেলা থেকেই কিনেছেন বলে জানান তারা। ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এই আয়োজনের নামটি অবশ্য ফ্যাশন ফেস্টিভ্যাল। চলবে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থাকছে কেনাকাটার সুযোগ।
×