ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রবর্তী দল দিল্লী যাচ্ছে কাল

প্রধানমন্ত্রীর সফর- গঙ্গা ব্যারাজসহ ৫ বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ এপ্রিল ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর সফর- গঙ্গা ব্যারাজসহ ৫ বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে পাঁচটি বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এসব বিষয়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কানেক্টিভিটি (আন্তঃযোগাযোগ) বৃদ্ধি, পানি সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ ও বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা ও বিভিন্ন চুক্তি-সমঝোতা স্মারকে এসব বিষয় প্রাধান্য পাবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে এবার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। উভয়পক্ষ এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুই পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা খাতে যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, তার মেয়াদ হবে ৫ বছর। এছাড়া চুক্তির প্রাথমিক খসড়ায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি এবং সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে হুমকি মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে অভিযান চালানোর বিষয়টি রয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা খাতে যে সমঝোতা স্মারক সই হবে, সেখানে বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলার লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ঋণও দেবে ভারত। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেক্টিভিটির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে সড়ক, রেলপথ, নৌ, বিমান পথে যোগাযোগ বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানি সহযোগিতাও বাড়ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রানশিপমেন্ট পুরোপুরি বাস্তবায়নেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের কানেক্টিভিটির ওপর আরও জোর দিয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন নয়াদিল্লী সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে তা হলো কানেক্টিভিটি। তিনি বলেছেন, কানেক্টিভিটি আমাদের হাই প্রায়োরিটি। রেল, সড়ক এবং বিদ্যুত আদান-প্রদানে ও সংযোগ বাড়ানোর বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন ও গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে ঢাকা। তিস্তা চুক্তি ছাড়াও গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, তিস্তা চুক্তির চেয়ে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কোন অংশেই ছোট বিষয় নয়। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় দেখতে ইতোমধ্যেই সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছে ভারতীয় প্রতিনিধিদল। তবে ওই কমিটি একটি প্রতিবেদন পেশ করবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। ভারত সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ও দিল্লীর একাধিক কূটনৈতিক সূত্র। কেননা দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের ঝুঁকি বাড়ছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করা উভয় দেশের জন্য একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়েও দাঁড়িয়েছে। উভয় দেশই সন্ত্রাস প্রতিরোধে একে অপরকে সহযোগিতা করছে। তবে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সব সময় বলে আসছে, বাংলাদেশের মাটিতে বসে প্রতিবেশী ছাড়াও বিশ্বের কোন দেশের বিরুদ্ধেই জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা এ বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করতেও পারেন। এছাড়া দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টিও প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষ করে উভয় দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করার জন্য জোর দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশী পাট পণ্যে ভারতের পক্ষ থেকে যে উচ্চ হারে এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার ফলে বাংলাদেশের পাটপণ্য যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটাকেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বিষয়টি তুলেও ধরতে পারেন। চলতি বছরের শুরুতেই বাংলাদেশী পাট পণ্যে উচ্চ হারে এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে ভারতে এখন পাট সুতা, চট ও বস্তা রফতানিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মেট্রিক টনে ১৯ থেকে ৩৫২ মার্কিন ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের পাট পণ্যের রফতানি আয় কমে যাবে এমন আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয় আসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে। ভারতের গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশী পাট পণ্য রফতানিতে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। এর আগে দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে পাট পণ্যে শুল্ক আরোপের বিষয়ে ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ। এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানানো হয়। বিশেষ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত জানুয়ারি মাসে মুম্বাইতে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে এক বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ঢাকা সফরের সময়ও পাট পণ্যের শুল্ক আরোপের বিষয়ে আলোচনা হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর সামনে রেখে রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় যেসব চুক্তি হতে পারে, সে বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে একটি অগ্রবর্তী প্রতিনিধিদল দিল্লী যাওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে এই অগ্রবর্তী দল দিল্লী যাবে। দলটি দিল্লীতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭-১০ এপ্রিল চার দিনের সফরে নয়াদিল্লী যাবেন। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় বিশটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। আসন্ন ভারত সফর হবে মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
×