ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধকরণ বাস্তবসম্মত নয় ॥ যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘ পরমাণু আলোচনা থেকে সরে গেছে ৪০ দেশ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৯ মার্চ ২০১৭

জাতিসংঘ পরমাণু আলোচনা থেকে সরে গেছে ৪০ দেশ

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বিশ্বজুড়ে পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তি সাধারণভাবেই ‘বাস্তবসম্মত নয়’। সোমবার নতুন পরমাণু চুক্তি নিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি এ কথা বলেছেন। জাতিসংঘে এ ইস্যুতে আলোচনা থেকে সরে গেছে ৪০ দেশ। খবর বিবিসির। প্রস্তাবিত পরমাণু নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক নতুন চুক্তি থেকে যেসব দেশ নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। জাতিসংঘের স্থায়ী এই তিন দেশ বৈশ্বিক সামরিক ও পারমাণবিক ইস্যুতে একই সুরে কথা বলে থাকে। পরমাণু নিষেধাজ্ঞাকে আইনী বাধ্যবাধকতা দিতে জাতিসংঘের ১২০টিরও বেশি দেশ একটি পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। তবে এর বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যসহ তাদের কিছু মিত্র দেশ। পরিকল্পনার বিষয়ে নিকি হ্যালি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তায় পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজন পড়তে পারে, কেননা অনেক ‘খল অভিনেতা’ রয়েছে, যাদের ওপর বিশ্বাস করা যায় না। তিনি বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্বের চেয়ে আমার পরিবারের জন্য আরও ভাল কিছু চাওয়ার নেই। কিন্তু আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।’ নিকি হ্যালি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এখানে এমন কেউ আছেন কি, যিনি বিশ্বাস করেন উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায় সম্মত হবে?’ চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি পরীক্ষা করেছে। গত বছর অক্টোবর মাসে পরমাণু নিষেধাজ্ঞার আইনী বাধ্যবাধকতার বিষয়ে একটি চুক্তি করার পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়া হয় জাতিসংঘের এক সম্মেলনে। তখন এ চুক্তির পরিকল্পনার বিষয়ে ‘না’ ভোট দেয় যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। চীন, ভারত ও পাকিস্তান সিদ্ধান্ত জানানো থেকে বিরত থাকে। বিশ্বের একমাত্র দেশ জাপান, যারা ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের শিকার, তারও এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে। জাপানের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরমাণু অস্ত্রধর রাষ্ট্রগুলোর অন্তর্ভুক্তি ছাড়া এ চুক্তির কোন মানে হয় না। বড় বড় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের প্রতি খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৬৮ সালে স্বাক্ষরিত অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি এনপিটিÑ অনুসারে বৃহৎ শক্তিগুলো খুব কমই তা বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক এনজিও জোট নেত্রী বিয়েত্রিস ফিন। প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়নে বৃহৎ শক্তিগুলোর কেন আগ্রহ নেই এর সহজ উত্তর হচ্ছে ‘ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশের মানসিকতা।’ যার কাছে যত বেশি অস্ত্র আছে সে নিজেকে তত শক্তিশালী মনে করেÑ তাই কোন পরাশক্তি তার অস্ত্রভা-ার সংকুচিত হোক তা মনেপ্রাণে চায় না। তবে আশার কথা এই যে পরিবর্তনশীল বিশ্বে এখন সচেতন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবী এখন কেবল দুই মেরুতে সীমাবদ্ধ নয়। বহু মেরুর এই বিশ্বে অনেক দেশই এ বিষয়ে আর পরাশক্তির দিকে তাকিয়ে থাকতে রাজি নয়।
×