ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার রকেট ইঞ্জিন পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২০ মার্চ ২০১৭

এবার রকেট ইঞ্জিন পরীক্ষা

উত্তর কোরিয়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি রকেট ইঞ্জিনের পরীক্ষা চালিয়েছে। রবিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানায়, এ পরীক্ষাকে উত্তর কোরিয়ার রকেট শিল্পের ‘নবজন্ম’ বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির নেতা কিম জং উন। উত্তর কোরিয়া এ ইঞ্জিনের সাহায্যে বিশ্বমানের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেছেন উন। তিনি একে দেশের নিজস্ব রকেট শিল্পের জন্য ‘ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ বিশাল ঘটনা’ বলে অভিহিত করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের চীন সফরকালেই রবিবার এ ঘোষণা দিল পিয়ংইয়ং। টিলারসনের পূর্ব এশিয়া সফরে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। খবর বিবিসি/এএফপি/এবিসির। কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ রকেট ইঞ্জিন উত্তর কোরিয়ার মহাকাশ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কর্মসূচীতে ব্যবহৃত হবে। জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে দেশটি দাবি করছে, তাদের স্যাটেলাইট কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ তাদের এ দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। উত্তর কোরীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, পাঁচ বছর মেয়াদী পরিচালনার আওতায় তারা আরও পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে ইচ্ছুক। এ উদ্দেশ্যে তারা প্রথমবারের মতো জিও স্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট তৈরির পরিকল্পনা করছে। এটি হবে পিয়ংইয়ংয়ের বড় ধরনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। এ ধরনের স্যাটেলাইট অর্জনের জন্য উত্তর কোরিয়ার পূর্বের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন প্রয়োজন। উত্তর কোরিয়া আরও দাবি করছে, তারা একটি মহাশূন্য কর্মসূচী গ্রহণ করেছে, যার আওতায় আগামী ১০ বছরের মধ্যে মহাশূন্যে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হবে। এ মাসের গোড়ার দিকে উত্তর কোরিয়া জানায়, সাগরে চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে, যা জাপানের উপকূল রেখার ২শ’ কিলোমিটারের মধ্যে গিয়ে পড়ে। জাপানে কয়েক হাজার মার্কিন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন সফরের পূর্বে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন প্রথমেই যাত্রাবিরতি করেন জাপানে। উত্তর কোরিয়া গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শেষবারের মতো কাওয়াংমিংসং-৪ বা ব্রিলিয়ান্ট স্টার-৪ স্যাটেলাইট কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করে। এর ঠিক এক মাস আগে পিয়ংইয়ং প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার দাবি করে। উত্তর কোরিয়া অবশ্য তাদের প্রথম স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করে ২০১২ সালে। বিশ্বের স্বল্পসংখ্যক দেশই এ সাফল্যের অধিকারী। তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া এখনও কোন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়নি। কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে ইঞ্জিনের পরীক্ষাটি দেখার পর উন বলেছেন, আজ আমরা যে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করলাম শীঘ্রই বিশ্ব তার তাৎপর্য প্রত্যক্ষ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন চীন সফরে থাকাকালে ঘোষণাটি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। চীন উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র। টিলারসনের পূর্ব এশিয়া সফরের প্রায় পুরোটা জুড়েই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সামর্থ্য নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ প্রাধান্য পেয়েছে। এ সফরে দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকাকালে শুক্রবার টিলারসন বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া বা এ এলাকায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনী উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে পড়লে তাদের বিরুদ্ধে আগ বাড়িয়ে সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ পর্যন্ত পাঁচবার পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। উত্তর কোরিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কিম জং উন। বিশেষজ্ঞ ও পশ্চিমা সরকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, দেশটি পারামাণবিক ওয়ারহেডযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের চেষ্টা করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছতে পারবে। উত্তর কোরিয়া এমন সময় রকেট ইঞ্জিন পরীক্ষায় সফলতার দাবি করল, যখন দেশটি নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এখন চীনে রয়েছেন। রবিবার তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। রকেট পরীক্ষা ব্যক্তিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন কিম জং উন। উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে বিশ্ব নতুন কিছু দেখবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনের পূর্ব এশিয়া সফরে উত্তর কোরিয়া নিয়ে উদ্বেগ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে দেশটির পরমাণু অস্ত্রের কার্যক্রম এ উদ্বেগের কারণ। দক্ষিণ কোরিয়া সফরে টিলারসন বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সামরিক ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়া এমন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত করতে সক্ষম। এছাড়া স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে সহজেই আঘাত করতে পারবে। ফলে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া জাপান সাগরে একসঙ্গে চারটি বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
×