ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে

রামপালে কৃষি উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ মার্চ ২০১৭

রামপালে কৃষি উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ একদা ‘ফসলের গোলা’ বলে পরিচিত রামপালে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে। দিন দিন জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে এ উপজেলায় খাদ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন। জলবায়ু পরিবর্তন, তীব্র লবণাক্ততা, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ, নদী-খাল ভরাট, ফসলি জমিতে যত্রতত্র বসত ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ, অপরিকল্পিত বালু ডাম্পিং, কৃষি জমিতে দেদার শিল্পায়ন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিগত তিন দশকে কৃষি উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। প্রতিবছর খাদ্য ঘাটতির হার বাড়ছে। ফলে বেকারত্ব, পেশার পরিবর্তন ও জীবিকার সন্ধানে মাইগ্রেশন বেড়ে চলেছে। মন্দার মুখে পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শংকর কুমার মজুমদার জানান, ৯০ এর দশকে যেখানে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৫ শত হেক্টর। ২০০০ সালে তা কমে ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টরে দাঁড়ায় এবং ২০১৬ সালে তা কমে ১০ হাজার ৪০০ হেক্টরে পৌঁছেছে। নতুন করে সরকারীভাবে ফসলি জমিতে সরকারী ও বেসরকারীভাবে শিল্পায়ন ও উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরির ব্যাপক উদ্যোগ গৃহীত হওয়ায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে গেছে। বিগত ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ উপজেলায় খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৫১ টন। এখানে জীববৈচিত্র্য এখন বিবর্ণ। গাছ-গাছালিও মরে যাচ্ছে। এ নিয়ে রামপালবাসীর ক্ষোভের অন্তনেই। সত্তর বছরের গীতা রানীর ভাষায়, ‘শোননিÑ রামপাল ছিল ধান-পান-সুপারির গোলা। এহন দিনে দিনে শ্মশান হয়ে যাচ্ছে। এহন আর এক দিক চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।..’ প্রায় একই কথা বলেনÑ ঝনঝনিয়া গ্রামের বজলুর রহমান ও গাববুনিয়া গ্রামের শেখ রুহুল আমীন। এছাড়া মংলা-ঘোসিয়াখালী চ্যানেলসহ নদী খাল খননে অপরিকল্পিত বালু ডাম্পিং-এর কারণে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর আবাদি জমির কমেছে। ২০০০ সালে এ উপজেলায় চালের উৎপাদন ছিল ২৫ হাজার ১৪২ টন। ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৫ টন। উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের কারণে এ আবাদ কিছুটা বাড়লেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল বলে কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে বাইনতলা, উজলকুড় ও মলিকেরবেড় ছাড়া অন্য সাতটি ইউনিয়নে তীব্র লবণাক্ততার কারণে আমন ও বোরো চাষ ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ওই তিনটি ইউনিয়নে লাল মোটা ও সাদা মোটা ধান চাষ করে চাষিরা হেক্টরে আড়াই টন চাল উৎপাদন করছে। ১০টি ইউনিয়নে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে উন্নত চাষাবাদের মাধ্যমেও খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে সে জন্য আরও উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রয়োজন বলে এখানে কৃষি কর্মকর্তারা মনে করেন। কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, লাল মোটা ও সাদা মোটার পরিবর্তে ব্রি ধান ৭৬ ও ৭৭ জাতের উচ্চ ফলনশীল আবাদ করলে হেক্টরে ৫ টন পর্যন্ত চাল উৎপাদন সম্ভব। যদিও ওই জাতের ধান বীজ নিতান্তই অপ্রতুল। এরপরেও মাত্র ১০০ কেজি ধান বীজের চাহিদা দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্য চাহিদা পূরণে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের বালু ভরাটকৃত ১ হাজার ২০০ হেঃ জমিতে বিকল্প চাষ হিসেবে চিনা বাদাম, আলু, মিষ্টি কুমড়া, আখ, বাঙ্গি, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে চলমান খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব বলে সচেতন মহল মনে করেন। অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ ও তীব্র লবণাক্ততার ফলে এ উপজেলায় কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। কৃষি জমির ওপর অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ চলমান হারে অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এখানে ফসল উৎপাদন আরও হ্রাস পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ মহল।
×