ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৫ মার্চ ২০১৭

১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ

ফিরোজ মান্না ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে স্যাটেলাইটের সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ ভাগের বেশি। এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে ওইদিন থেকেই বাংলাদেশ পথ চলবে। দেশের নিজস্ব এই স্যাটেলাইটÑ স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে। এতে ব্রডকাস্টিং থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগের সব সেক্টরই বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তখন আর বিদেশী স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। অন্যদিকে স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হবে। বিটিআরসি ২০০৮ সালে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আইটিইউর কাছে ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং দাখিলসহ প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করেছিল। দীর্ঘপথ পার হয়ে এখন নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। ২ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগসহ অন্যান্য সেক্টর উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে এগিয়ে যাবে। স্যাটেলাইটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ জন্য সরকার প্রকল্পটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। স্যাটেলাইটের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর কার্যক্রম শুরু করলে আশপাশের বেশ কয়েকটি দেশ টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেম (৪০টি ট্যান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড) এর গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। মহাকাশে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে অর্থায়নে হংকং সাংহাই ব্যাংক কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) ১৫৭ মিলিয়ন ইউরো ঋণ দিয়েছে। ঋণের টাকা থেকে স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘থ্যালাস এ্যালানিয় স্পেস’কে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প হাতে নেয়ার দুই বছরের বেশি সময় পর ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এখান থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনা হচ্ছে ফ্রান্স থেকে। আর বাংলাদেশকে ‘অরবিটাল সøট’ ইজারা দিয়েছে রাশিয়া। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন নির্মাণ দেশের একটি গৌরবের প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। এজন্য সব ধরনের কাজ করে যাওয়া হচ্ছে। গত বছরের ১১ নবেম্বর ফ্রান্সের থ্যালাস এলেনিয়া স্পেসের সঙ্গে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রধান কার্যক্রম স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়ের জন্য এক হাজার ৯শ’ ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বিটিআরসি। স্যাটেলাইট সিস্টেম নিয়ে এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিটিআরসি থ্যালাস স্পেসের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকসহ কারিগরি অনেক কাজ শেষ হয়েছে। উল্লেখ যোগ্য কাজ হচ্ছে এলইওপি (কিক অফ মিটিং), জিএসআরএফ (ইকুয়েপমেন্ট ফ্যাক্টরি এ্যাকস্টেন্স টেস্ট), অমনি এ্যান্টেনা এ্যাভেএবুল এট কানস ফরম টুলেস ফ্যাসালিটি), টিআরবি (টেস্ট রিভিউ বোর্ড), ডিআরবি (ট্রান্সমিটার ডিজাইন বোর্ড) সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি টিসিআর (চেকিং এন্ড ইন্টিগ্রেশন মিটিং) হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পিডি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাজ ৫৫ ভাগের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। দুটি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন (গাজীপুর ও বেতবুনিয়া) নির্মাণ কাজ দ্রুত চলছে। স্যাটেলাইট নির্মাণ কাজটিই বড়। গ্রাউন্ড স্টেশন গোটা প্রকল্পের মাত্র ২০ ভাগ। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতি আমদানির কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম লটের যন্ত্রপাতি খালাস করা হয়েছে। দ্বিতীয় লটে এন্টেনা যন্ত্রাংশ দেশে পৌঁছেছে। এ মাসেই এন্টেনা যন্ত্রপাতি খালাস করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২০ অক্টোবর সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থ্যালাস স্পেসকে কাজ দেয়ার অনুমোদন দেয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯শ’ ৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বাকি এক হাজার ৬শ’ ৫২ কোটি টাকা বিডার্স ফাইন্স্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সংকুলান করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য গত বছরের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে একটি চুক্তি মাধ্যমে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল সøট লিজের ভিত্তিতে ক্রয় করা হয়েছে। স্যাটেলাইট প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ জিওবি অংশের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪শ’ ৬৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। পিএ অংশের এক হাজার ৯০ কোটি টাকা। এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জিওবি অংশের ২শ’ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পিএ অংশের ব্যয় হয়েছে ৪শ’ ৫০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল থাকা, পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ই-সেবা নিশ্চিত করাসহ স্পেস টেকনোলজির জ্ঞান সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনেও অনবদ্য ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতিবছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হচ্ছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপন হলে এই টাকা সাশ্রয় হয়েও আর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
×