ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নব্য জেএমবির গ্রেনেড গুলোতে আইএসআই প্রযুক্তির ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ মার্চ ২০১৭

নব্য জেএমবির গ্রেনেড গুলোতে আইএসআই প্রযুক্তির ছোঁয়া

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির জঙ্গীদের হাতে তৈরি গ্রেনেড-বোমাগুলো বাড়িঘর, স্থাপনা উড়িয়ে দেয়ার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কিংবা পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠনের মদদে নব্য জেএমবির জঙ্গীদের সংগঠিত করে তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। কুমিল্লায় গ্রেফতার হওয়া বাসযাত্রীবেশী নব্য জেএমবির দুই জঙ্গী ইমতিয়াজ অমি ও মাহমুদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া ইমতিয়াজ অমি ও মাহমুদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায়, তারা যেসব জঙ্গী আস্তানায় থাকত সেখানে দুই-তিনজন বিদেশী নাগরিক আসত, যারা উর্দু ভাষায় কথা বলত। যেসব বিদেশী নাগরিক আসত তারা ‘বড় ভাই’-এর সঙ্গে কথা বলত। তারা উর্দু ভাষায় কথা বলা এসব বিদেশী নাগরিকের নাম-পরিচয় জানে না, জিজ্ঞাসা করেনি, জিজ্ঞাসা করাও নিষেধ। এ দুই জঙ্গী যে ধারণা দিচ্ছে তাতে উক্ত উর্দুভাষীরা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কিংবা তাদের কোন জঙ্গী সংগঠনের লোক হতে পারে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জঙ্গীগোষ্ঠীর কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের আস্তানায় জঙ্গীদের কাছে যে ধরনের হাতে তৈরি গ্রেনেড পাওয়া গেছে তা অনেক বেশি শক্তিশালী, যা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তৈরি। ইতোপূর্বে যেসব হাতে তৈরি গ্রেনেড-বোমা উদ্ধার করা হয়েছে তারচেয়ে কয়েকগুণ বড় ও ধ্বংসাত্মক। গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, গ্রেফতার হয়নি এমন যেসব জঙ্গী গোপন জঙ্গী আস্তানায় লুকিয়ে আছে তাদের কাছেও একই ধরনের গ্রেনেড-বোমার মজুদ রয়েছে। জঙ্গীদের হাতে তৈরি এসব গ্রেনেড-বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এখন আতঙ্কের বিষয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গী বলেছে, চট্টগ্রাম থেকে গ্রেনেডের চালান ব্যাগে করে ঢাকায় আনার পথে কুমিল্লায় পুলিশের তল্লাশির সময় তারা ধরা পড়ার আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে অবস্থানরত জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের গ্রেনেডের চালান নিয়ে যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদের জঙ্গী আস্তানায় ওঠার কথা ছিল। এর আগেও তারা চট্টগাম থেকে ঢাকায় গ্রেনেডের চালান এনেছিল বলে জানায় তারা। দুই জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী তদন্তকারীরা ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কথিত জঙ্গী আস্তানায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঢাকা কিংবা ঢাকার আশপাশের কোন আস্তানায় পলাতক জঙ্গীরা গ্রেনেডগুলো নিয়ে লুকিয়ে আছে, যা দিয়ে সুযোগ পেলেই তারা জঙ্গী হামলা করতে পারে। ঢাকার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সিটিটিসির তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত ইমতিয়াজ অমি ও হাসানের সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। এজন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এ দুই জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের অন্য আস্তানাগুলো শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তদন্তে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কুমিল্লা জেলা পুলিশও আত্মগোপনে থাকা জঙ্গী ও তাদের আস্তানাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা গেনেডগুলো হাতে তৈরি হলেও উদ্ধার হওয়া এগুলোতে যে ধরনের উপকরণ এবং যত বড় করে তৈরি করা হয়েছে, তাতে সহজেই একটি ছোটখাটো ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া যাবে। তাছাড়াও হাতে তৈরি এসব গ্রেনেডে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে, যাতে এসব নিয়ে কোথাও হামলা চালানো হলে তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত ৭ মার্চ বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লার চান্দিনায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে পুলিশ চেকপোস্টে থামানোর পর দুই জঙ্গী পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ইমতিয়াজ অমি ও মাহমুদ হাসান নামে দুই জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অমি প্রথমে নিজের পরিচয় আড়াল করে জসিম পরিচয় দেয়। পরে জানা যায়, অমি এক বছর আগে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে। তার পুরো নাম আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি। সানবীম স্কুলে ‘এ’ লেভেল পড়া অবস্থায় বাসা ছেড়ে যায় সে। অন্যদিকে মাহমুদ হাসানের বাড়ি বান্দরবানে। অমি বর্তমানে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন ও হাসান সাত দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতাকর্মী ও সদস্যদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত বা গ্রেফতার হলেও জঙ্গী সংগঠনটি কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও আবারও তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। দেশের বাইরে থেকে কোন মহল বা শক্তি জঙ্গী সংগঠনটিকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছিল, তার কিছুটা হলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গীর দেয়া তথ্যমতে। তবে দুই জঙ্গীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, এখনও তাদের সহযোগী জঙ্গীদের মধ্যে অনেকেই অধরা রয়েছে। বর্তমানে মাইনুল ইসলাম মুসা নামে একজন নব্য জেএমবিকে নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদীসুর রহমান সাগর, রাশেদ ওরফে র‌্যাশসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন শীর্ষনেতা পলাতক রয়েছে। গোপন জঙ্গী আস্তানায় লুকিয়ে থাকা এসব জঙ্গী যে কোন সময় জঙ্গী হামলা বা নাশকতা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
×