ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটি

কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে গত নির্বাচনে সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৯ মার্চ ২০১৭

কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে গত নির্বাচনে সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি। এছাড়া বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মর্যাদার বিষয়ে অবহিত হতে চায় জাতিসংঘ। এদিকে জনগণের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটিকে অবহিত করেছে সরকার। বুধবার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত ৬-৭ মার্চ জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন (আইসিসিপিআর) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক কমিটি উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, মানবাধিকার কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন, লেখক-ব্লগার-সাংবাদিক হত্যার তদন্ত, শিশুশ্রম, মৃত্যুদ- ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী এসব প্রশ্নের উত্তর দেন। বৈঠকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে জড়িতদের বিষয়ে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় আইনমন্ত্রী ওই ঘটনার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। জেনেভার কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বৈঠকে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী জানান, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরই রয়েছে। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে বিশেষ ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে এবং তা অবশ্যই আদালতের অনুমতি নিয়েই হতে হবে। তবে ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়েদের আদালতের অনুমতি নিয়ে বিয়ের সুযোগ রাখা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯২৯ সালের ওই আইনটির আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজে বিয়ের আগে মেয়েদের গর্ভবতী হয়ে যাওয়া এখনও গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয় না। ১৮ বছরের কম বয়সী একটি মেয়ে বিয়ের আগে গর্ভবতী হয়ে গেলে সমাজে তার কোন স্থান থাকে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে কেবল আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে বিয়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন অভিযানের সময় হতাহতের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে এবং কারও অপরাধ প্রমাণ হলে শাস্তি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর সংবিধানের মূল চেতনা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০০০ সালে আইসিসিপিআরে স্বাক্ষর করে। কিন্তু এরপর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, আইসিসিপিআরের প্রতি তাদের কোন অঙ্গীকার ছিল না। বর্তমান সরকার ২০১৫ সালে আইসিসিপিআরের অগ্রগতি প্রতিবেদন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটিতে দাখিল করেছে। আইনমন্ত্রী তার বক্তৃতায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সহিংসতা, বিদেশীদের ওপর হামলার তথ্য দিয়ে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ন্যায্য সমাজ গঠনে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। পর্যালোচনা সেশনের চেয়ারপার্সনসহ কমিটির একাধিক বিশেষজ্ঞ আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। সেশনের চেয়ারপার্র্সন বলেন, আইসিসিপিআর বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করাই এ আলোচনার লক্ষ্য। আইসিসিপিআরের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জেনেভায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি, আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, সশস্ত্র বিভাগ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।
×