ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লঙ্কানদের বিরুদ্ধে লড়ছেন সৌম্য-মুশফিক

দুই উইকেট গেলেও শুরু মন্দ নয় বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৯ মার্চ ২০১৭

দুই উইকেট গেলেও শুরু মন্দ নয় বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ দুর্দান্ত খেলছিলেন তামিম ও সৌম্য। যেই ভুল করে আউট হলেন তামিম, শেষ বেলায় ধ্বংসস্তূপেই পড়ে গেল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা যে পথ পাড়ি দিয়েছে। সেই পথেই এগিয়ে চলছিল বাংলাদেশ। পাল্টা জবাবও দিচ্ছিল। কিন্তু ১১৮ রানে যেই তামিম আউট হলেন, শুরু হলো আউট হওয়ার পালা। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার গড়া ৪৯৪ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান করে। এখনও ৩৬১ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশাল রান সংগ্রহ করে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ড আরও মজবুত হয়ে উঠত, যদি মেহেদী হাসান মিরাজ (৪/১১৩) বল হাতে স্পিন বিষ না ছড়াতেন। সেই স্পিন বিষে দ্বিতীয় দিনে শ্রীলঙ্কা আরও ১৭৩ রান যোগ করতে পারে। প্রথমদিন ৪ উইকেটে ৩২১ রান করেছিল লঙ্কানরা। কুশল মেন্ডিস ১৬৬ রানে ও নিরোশান ডিকওয়েলা ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। দুইজনকেই আউট করে দেন মিরাজ। তবে আউট হওয়ার আগে মেন্ডিস আরেকবার ‘নতুন জীবন’ পেয়ে শেষপর্যন্ত ১৯৪ রান করেন। আর ডিকওয়েলা ৭৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপর বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। দুইজন মিলে ১১৮ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওপেনিংয়ে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। এমন সময়ই তামিম ভুল করে বসেন। স্পিনার সান্দাকানের ঘূর্ণি বলটি লেগ সাইড দিয়ে বের হয়ে যায়। উইকেটরক্ষক ডিকওয়েলা আউটের আবেদন করেন। তামিম কী করেন? ক্রিজ থেকে রান নেয়ার জন্য বের হন। সঙ্গে সঙ্গে রান আউট করে দেন ডিকওয়েলা। হতভম্ব হয়ে যান সবাই। কী করলেন তামিম। ২৮ রানের সময় নিশ্চিত ‘নতুন জীবন’ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারলেন না এ ওপেনার। ৫৭ রান হতেই মেজাজ হারিয়ে ফেললেন। তাতে ভুল হলো। সেই ভুলে বাংলাদেশও শেষ বেলায় এসে বিপদে পড়ল। তামিমের আউটের পর ১২৭ রানের সময় মুমিনুল হকও (৭) পেরেরার বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। দিন শেষ হওয়ার আগে দুর্দান্ত একটি দিন কাটানোর কথা। অথচ দিনটি খারাপই গেল। সৌম্য ৬৬ রানে অপরাজিত আছেন। তার সঙ্গে ১ রানে ব্যাট করছেন মুশফিক। আজ তৃতীয় দিন এ দুইজন ব্যাট হাতে নামবেন। এখনও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩৬১ রানে পিছিয়ে থাকলেও আজ তৃতীয় দিনে যদি বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখাতে পারেন, তাহলে শ্রীলঙ্কার স্কোরের কাছাকাছি যাওয়ার সম্ভব। এমনকি স্কোর অতিক্রম করাও সম্ভব। ২০১৩ সালের গল টেস্টে ভাল খেলার স্মৃতি যে আছে। সবই আসলে নির্ভর করছে আজকের দিনটির উপর। এ দিনটিতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের উপরই সব ভরসা। তারা ভাল করলে গল টেস্ট থেকে ভাল ফল বের করে আনা সম্ভব। নয়ত বিপদেই পড়তে হবে। দিনটিতে আসলে মিরাজের দুর্দান্ত বোলিং ও সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত ব্যাটিংই প্রাপ্তি বলা চলে। দলীয়ভাবে দ্বিতীয় দিনেও বাংলাদেশ পিছিয়েই রয়েছে। তবে বল হাতে মিরাজ যে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন আর ব্যাট হাতে সৌম্য ৬৬ রান করে অপরাজিত আছেন, সেটিই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের শান্তি দিচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষে ১১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ৬৮ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। আর তাসকিন, শুভাশিষ ও সাকিব ১টি করে উইকেট নিতে পেরেছেন। দ্বিতীয় দিনে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় দিনে ৪ উইকেটে ৩৯৮ রানে ছিল। সেখান থেকে ৪৯৪ তে শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা যেভাবে এগিয়ে চলছিল, মেন্ডিস ও ডিকওয়েলা যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ৬০০ রানই না হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে ৫০০ রানও করতে দেয়নি বাংলাদেশ। তবে এদিনও হতাশাজনক ঘটনা ঘটেছে। সেই মেন্ডিসই হতাশার কারণ। প্রথমদিনে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হতেন মেন্ডিস। কিন্তু শুভাশিষ রায় ক্রিজের বাইরে পা রাখায় ‘নো’ হয়। তাতে বেঁচে গিয়ে প্রথমদিনে ১৬৬ রান করেন মেন্ডিস। দ্বিতীয় দিন ১৮৫ রানে আবারও সেই শুভাশিষের বলেই আবারও ‘নতুন জীবন’ পান মেন্ডিস। দিনের সপ্তম ওভারের পঞ্চম বল ছিল। শর্ট বল দেন শুভাশিষ। হুক করেন মেন্ডিস। ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে ক্যাচটি ধরেন মুস্তাফিজ। কিন্তু দড়িতে পা লেগে যায়। তাতে ছক্কাও হয়। শুভাশিষ তখন আনন্দ উদযাপন করতে থাকেন। কিন্তু সঙ্গী পান না। উইকেট পাওয়ার উদযাপন ক্ষণিক সময়ের জন্য থাকে। শুভাশিষ দেখেন সতীর্থরা নিশ্চুপ। তখনই বুঝে যান, আউট হননি মেন্ডিস। সেই মেন্ডিস শেষপর্যন্ত ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ৪ রান আগে মিরাজের বলে আউট হন। এরপর মিরাজ আরও ২টি উইকেট নেন। যা বাংলাদেশকে এগিয়েই রাখে। কিন্তু ব্যাট হাতেই যত গরমিল হয়ে গেল। প্রথম দিনে ৪ উইকেটে ৩২১ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। মেন্ডিস ১৬৬ রানে ও ডিকওয়েলা ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। মিরাজ দিন শেষে বলেছিলেন, ‘ওদের চার ব্যাটসম্যান এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে। এখন ওদের শেষ দুই মূল ব্যাটসম্যান রয়েছে। মেন্ডিস, ডিকওয়েলাকে দ্রুত ফেরাতে পারলে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা চলে আসবে। লোয়ারঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা এই উইকেটে বেশি রান করতে পারবে না। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, সকালে ওদের দুজনের উইকেট তুলে নেয়ার।’ মিরাজ তাই করে দেখান। শ্রীলঙ্কার হাতে থাকা ৬ উইকেটের ৩টিই তুলে নেন। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই মেন্ডিস ও ডিকওয়েলাকেও সাজঘরে ফেরান। কিন্তু তামিম ও মুমিনুল ব্যাট হাতে উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি। ভুল করে আউট হয়ে তামিম তো দলকেই বিপদে ফেলে দিলেন। সুন্দর শুরুর পর শেষবেলায় এসে বিপদে পড়ল বাংলাদেশ।
×