ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মূল অন্তরায় সমন্বয়হীনতা

কর্ণফুলীর দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৫ মার্চ ২০১৭

কর্ণফুলীর দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি সংস্থার সমন্বয়ের সাংঘাতিক ধরনের অভাবের কারণে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীর ঘিরে অবৈধ স্থাপনা ও দখলমুক্ত হচ্ছে না। উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত নির্দেশের ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। আদালতের নির্দেশের রায় অবাস্তবায়িতই রয়ে গেছে। তবে রায়ের দিক নির্দেশনা অনুসারে একমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে অবৈধ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে এবং প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। আদালতের রায় অবাস্তবায়িত থাকায় দখল দূষণে গ্রাস হওয়া কর্ণফুলী নদীর সার্বিক পরিস্থিতি অবনতিই ঘটে চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নদী দখল ও দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারী উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসক এ বৈঠকে হাজির থাকতে এখন ঢাকায় রয়েছেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ এবং কর্ণফুলীর উভয় অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটি দীর্ঘ সময় ধরে অবৈধ দখল ও দূষণে একাকার হয়ে আছে। যে কারণে নদীর নাব্যতা, প্রশস্ততা ইতোপূর্বেকার তুলনায় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিকে ২০১৫-১৬ সালের ১৮ আগস্ট হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদীর দু’পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ ২ হাজার ১৮৭টি স্থাপনা তিন মাসের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশনা প্রদান করে। নির্দেশনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃক (চউক), চসিক (চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন), বিআইডব্লিউটিএ (বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি), সিপিএ’র (চিটাগাং পোর্ট অথরিটি বা বন্দর কর্তৃপক্ষ) সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে রায় বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড ইজ ফর বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন হাইকোর্টে কর্ণফুলী নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে একটি রিট মামলা দায়ের করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট উচ্ছেদে রায় প্রদান করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত প্রায় দু’মাস আগে আদালতের রায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের কাছে এসে পৌঁছালেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, চউক, চসিক, বিআইডব্লিউটিএ সমন্বিতভাবে কাজ করার চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে এ পর্যন্ত অবৈধ ১১টি ডক, ১১টি জেটি উচ্ছেদ করেছে। এছাড়া নদী তীরবর্তী জমি দখল করে ডক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্মাণাধীন সাতটি বার্জ জব্ধ করে তা নিলামে বিক্রি করেছে। শনিবার বন্দর সূত্রে জানানো হয়েছে, নতুনভাবে নদী তীরবর্তী ভূমি অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষা করতে কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন, চউকেরও নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। কিন্তু তারা কেন নীরব ভূমিকায় রয়েছে এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের অধীনে ম্যাজিস্ট্রেটের কোন ঘাটতি নেই। অথচ রায় বাস্তবায়নে পুরো বিষয়টি নিয়ে কোন গতি নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়, এ ঘটনার নেপথ্যে একাধিক প্রক্রিয়া জড়িত। প্রথমত, নদীর মালিকানা বন্দরের। আবার নদীর তলদেশের জমির মালিকানা জেলা প্রশাসনের এবং তা খাস জমি হিসেবে। পক্ষান্তরে, চসিকের বিধান অনুযায়ী, মহানগরীতে হাট বা ঘাটের মালিকানা তাদের। আবার চউকের নিয়মানুযায়ী মহানগরী জুড়ে যে কোন স্থানে স্থাপনা তৈরিতে বা তা উচ্ছেদে তাদের অনুমতির প্রয়োজন। বন্দর কর্তৃপক্ষের বিধানে রয়েছে, নদীর উভয় কূলে ৫০ ফুট তীর পর্যন্ত মালিকানা তাদের।
×