ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লড়াই হবে নৌকা আর ধানের শীষে

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৪ মার্চ ২০১৭

লড়াই হবে নৌকা আর ধানের শীষে

শংকর লাল দাশ, রাঙ্গাবালী ঘুরে এসে ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনের প্রচার এখন তুঙ্গে। রাতদিন ভুলে প্রার্থীসহ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ব্যস্ত গণসংযোগে। হাটবাজারের মতো জনসমাগম স্থানগুলোতে একের পর এক অনুষ্ঠিত হচ্ছে পথসভা ও উঠোন বৈঠক। চলছে ঘরোয়া আড্ডা। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে তাদের সামনে প্রার্থী ও সমর্থকরা তুলে ধরছেন এলাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি। প্রার্থীদের গুণাগুণের চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রচারের সুবাদে নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। ভোটাররাও অসময়ের এ উপনির্বাচনে বেজায় খুশি। এলাকার মানুষের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। উপনির্বাচন ঘিরে রাঙ্গাবালীর কয়েকটি চরাঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার অবস্থান পটুয়াখালী জেলার সর্বশেষ দক্ষিণে। বঙ্গোপসাগর এবং সাগর মোহনার একাধিক চ্যানেল রাঙ্গাবালীকে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। অগুনতি চর-দ্বীপ ঘেরা পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের এটি দ্বিতীয় নির্বাচন। ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপজেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতা আহসান কবীর চান গত বছরের ২ জুলাই মারা যান। যে কারণে চেয়ারম্যান পদে এ উপনির্বাচন ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর হোসেন ও হাতপাখা প্রতীকে চরমোনাই পীরের মুরিদ আমির হোসেন মোল্লা। মোল্লারবাজার, গৈনখালী, বাহেরচর বন্দর, রাজাবাজার, নেতাবাজার, খালগোড়া, মৌডুবী, কানকুনিপাড়া ও চরমোন্তাজসহ রাঙ্গাবালী উপজেলার কয়েকটি হাটবাজার ও চরদ্বীপ ঘুরে দেখা গেছে, হাতপাখা প্রতীকের আমির হোসেন মোল্লাসহ ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের তেমন তৎপরতা নেই। অধিকাংশ ভোটারের কাছে প্রার্থী নিজেও অপরিচিত। তবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ প্রার্থীদের তৎপরতা তুঙ্গে। প্রত্যেকটি হাটবাজারে বিকেল হলেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে পথসভা। ছোট ছোট মিছিলে সরব হয়ে উঠছে গ্রামীণ জনপদ। এর বাইরে চলছে ব্যক্তিগত পর্যায়ের গণসংযোগ। প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। রাজাবাজার সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে জনসংযোগে ব্যস্ততার মাঝে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন নিজের বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে জনকণ্ঠকে বলেন, এ অঞ্চল ঘিরে সোনারচর পর্যটন কেন্দ্র, তাপবিদ্যুত কেন্দ্র, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পসহ বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে গোটা এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে। উন্নয়নে সমৃদ্ধ হবে এ জনপদ। কিন্তু এসব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়েও যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। স্থানীয় মানুষও এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তাই মানুষের সমর্থনও পাচ্ছি ব্যাপক। যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই সাড়া পাচ্ছি। প্রথম বারের মতো নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা মিষ্টভাষী এ প্রার্থী আরও বলেন, এলাকায় কোন নির্বাচনী সহিংসতা নেই। যা একটি দৃষ্টান্ত। নেতাকর্মীরাও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ষাট-সত্তর ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার আশা রাখি। অন্যদিকে, রাঙ্গাবালী সদরের একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অভিজ্ঞ বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনও নিজের বিজয়ের সম্ভাবনা তুলে ধরে জানান, মানুষ যেন নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে। ভোট যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভীতিমুক্ত, শুধু এ দাবি জানাচ্ছি। নানা বয়সী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের এ উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কেবল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। যদিও উভয় দলে কমবেশি কোন্দল রয়েছে। দলীয় কোন্দল অস্বীকার করে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, এখানকার মানুষ ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে। নৌকা থাকলে জয় অনিবার্য। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। উৎসবের আমেজে বিষয়টি তুলে ধরে চরমোন্তাজের পশু চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, মানুষ কেবল নিরাপদে ভোট দিতে চায়। এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই এলাকার গৃহবধূ পারভিন আক্তার জানান, ভোটের কারণে মানুষ উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। এভাবেই ভোট হওয়া উচিত। একই ধরনের মতামত দিয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন ভোটার।
×