ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদের পথ থেকে ফিরে আসলে পুনর্বাসন করা হবে

প্রকাশিত: ০১:১৩, ১ মার্চ ২০১৭

জঙ্গীবাদের পথ থেকে ফিরে আসলে পুনর্বাসন করা হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ভবিষ্যতে যেসকল বিপথগামী জঙ্গীসদস্য জঙ্গীবাদের পথ থেকে ফিরে আসবে তাদেরকে আইনী সহায়তা প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদকে ঘৃণা করে। আর দেশের সুষম উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্যও সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ হুমকি স্বরূপ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গীবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহন করে। এ জন্যে জঙ্গী দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিচু সফল অভিযানে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হয়। এতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, এ সকল অভিযানের ফলে বর্তমানে জঙ্গী তৎপরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং জঙ্গী দমনে এ সাফল্যে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দও বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ বিরোধী অবস্থানের ভূয়শী প্রশংসা করেছেন। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরও জানান, জঙ্গীবাদ বিরোধী ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গী সদস্য ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাদেরকে মোটিভেশন ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সন্দেহভাজন নিখোঁজ ব্যক্তি এবং পলাতক জঙ্গীদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। অনেকে তাদের নিজ গৃহে ফিরে এসেছে। এটি বর্তমান সরকারের জঙ্গীবাদ বিরোধী অন্যতম সফলতা। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, জঙ্গী সংগঠনগুলোর অনলাইন ভিত্তিক প্রচারণার দিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ জাতীয় প্রচারণার মাধ্যমে যাতে জনগণের মধ্যে জঙ্গীবাদী মতাদর্শের র্যা ডিক্যালাইজেশন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জঙ্গী দমনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি জানান, জঙ্গীবাদ বিরোধী ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, মসজিদের ইমাম, আলেম সমাজ, শিক্ষক-ছাত্র সমাজ, অভিভাবকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গীবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ব্যবসা-বান্ধব কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে। আওয়ামী লীগ সরকার যুগোপযোগী রফতানি নীতি ও আমদানী নীতি আদেশ প্রণয়ন করে আমদানি রফতানি খাতকে বেগবান করেছে। তিনি বলেন, রফতানি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। রফতানি পণ্যের অধিক পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান সরকার দূরদর্শী ও অক্লান্ত বাণিজ্যিক কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা আদায় করেছে। ফলে এ সকল দেশে পণ্য রফতানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আমদানি রফতানি প্রক্রিয়া সহজীকরণে বর্তমান সরকার সর্বদাই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের রফতানি বান্ধব নীতি ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রফতানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। রফতানি প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে আরও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে বর্তমান সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে। সমীক্ষার মাধ্যমে মোট ২২৭টি দূর্ঘটনাপ্রবণ (ব্লাক স্পট) স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ খাতের আওতায় বিভিন্ন মহাসড়কের ২৭টি ব্লাক স্পটের প্রতিকারমূলক কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ব্লাক স্পটে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে। তিনি জানান, জাতীয় মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে ধীরগতি যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণের নিমিত্তে ১ হাজার ৬৬৬ কিলোমিটার মহাসড়কের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও ডিটেইল্ড ডিজাইনের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিং ও ইন্টার সেকশনে যথাক্রমে ওভারপাস ও ফ্লাইওবার নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন/রিস্কা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংসদ নেতা জানান, সড়ক পথে দূর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফিটনেস বিহীন মোটরযান যাতে রাস্তায় চলাচল করতে না পারে সে কারণে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ম্যানুয়েল পদ্ধতির পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদানের লক্ষ্যে চারটি বিভাগীয় শহরে ৫টি মোটরযান পরিদর্শন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পথচারীকে জেব্রাক্রসিং, ফুটওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
×