ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাল্ট আমাদের পক্ষেই আসবে’

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রেজাল্ট আমাদের পক্ষেই আসবে’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কা সফরের উদ্দেশে অনুশীলন পর্ব শেষ। আজ শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে টেস্ট দলের ক্রিকেটাররা দেশ ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন। তার আগে রবিবার শ্রীলঙ্কা সফরপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম জানালেন, ‘আমাদের পক্ষেই রেজাল্ট আসবে।’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে মুশফিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও দুই টি২০ ম্যাচের সিরিজ নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো। প্রশ্ন ॥ মুশফিক, আপনি কি মনে করেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জেতার এটাই সেরা সুযোগ? মুশফিকুর রহীম ॥ বলতে পারেন। সুযোগ তো অবশ্যই। প্রতিটি সিরিজেই নতুন নতুন সুযোগ থাকে ভাল কিছু করার জন্য। ওদের দলে অনেকদিন ধরে ভাল খেলেছেন, এমন কয়েকজন (কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলকারতেœ দিলশান, অজন্থা মেন্ডিস, নুয়ান কুলাসেকারা) নেই। নিয়মিত অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও নেই। তারপরও আমি মনে করি, আমাদের ভুললে চলবে না যে, এটা তাদেরই দেশে খেলা। তারা যদিও চাপে থাকবে। কারণ তারাও জানে যে, বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই ভাল ক্রিকেট খেলছে। সবদিক বিবেচনা করে বলব যে, অবশ্যই সুযোগ আছে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে আমরা কতোটা সেরা ক্রিকেট খেলতে পারব, সেটার ওপর। আমরা যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি, তাহলে আমাদের পক্ষেই রেজাল্ট আসবে। আমাদের কোচিং স্টাফদের মাধ্যমে কিছু তথ্য আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। সেটাও হয়ত কাজে দিবে। প্রশ্ন ॥ আগের গল টেস্টের স্মৃতি ... মুশফিক ॥ আমাদের কিন্তু সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। গলের উইকেট স্পিনিং ট্র্যাক হয়। সাধারণত অন্যান্য দলের বিপক্ষে। সর্বশেষ আমরা যখন সেখানে খেলেছি, তখন হয়ত ব্যাটিং উইকেট ছিল। এ কারণে ফলাফল ভাল হয়েছে। তবে আমাদের অনেক কষ্ট করে খেলতে হয়েছে। কারণ তারাও স্কোরবোর্ডে বড় রান তুলেছিল। আমার মনে হয়, যে উইকেটেই খেলা হোক না কেন আমাদের দলে ভারসাম্য আছে। বৈচিত্র্য আছে। উইকেট যাই হোক, আমরা চেষ্টা করব ফলাফল আমাদের পক্ষে আনার। প্রশ্ন ॥ এই সিরিজের আগে দুই তিনটি সিরিজ (ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত) গেছে। বাংলাদেশ এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগে সেরা প্রস্তুতিই নিয়েছে কিনা? মুশফিক ॥ এটা সত্য যে, আমরা আমাদের ক্রিকেটের লেভেলটা একটু ওপরে নিয়ে আসতে পেরেছি। ফলে প্রত্যাশা একটু একটু করে বাড়ছে। টেস্ট বা ওয়ানডে, টি২০; যাই হোক না কেন, মানুষ মনে করে যে, বাংলাদেশ যে কোন দলের বিপক্ষে ভাল খেলে জিততে পারে। এটা আমাদের জন্য খুব ভাল ব্যাপার। একটা কথা বলব যে, সাকিব, মুস্তাফিজ, মিরাজ; এ রকম তিনজন আলাদা আলাদাভাবে স্কিলফুল বোলার যখন একটা দলের হয়ে বোলিং করবে, তখন প্রতিপক্ষের জন্য সেটা চাপের ব্যাপারই হবে। এটা আমাদের দলের জন্য দারুণ ব্যাপার। এছাড়া আমরা টানা তিনটা টেস্ট খেলে এই সিরিজ খেলতে যাচ্ছি, এটাও আমাদের এগিয়ে রাখবে। প্রস্তুতির জন্য এটা ভাল সুযোগ ছিল। সব ঠিক আছে। শ্রীলঙ্কায় অনুশীলন ম্যাচ দিয়ে সিরিজ শুরু হবে। প্রত্যাশা থাকবে, সেখানে যাতে সবাই নিজেদের দক্ষতার সেরা ছন্দটা ফিরে পায়। প্রশ্ন ॥ রঙ্গনা হেরাথের বিপক্ষে কিভাবে খেলার পরিকল্পনা? মুশফিক ॥ প্রত্যেকটা দলেই কিছু ম্যাচ উইনিং বোলার-ব্যাটসম্যান থাকে। হেরাথ অনেকদিন ধরে শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলছে। সে পৃথিবীর সেরা বোলারদের একজন। প্রতিটি খেলোয়াড়ের বিপক্ষে আমাদের পরিকল্পনা আছে। তার বিপক্ষেও আছে। যা আমরা মাঠে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। আমি এবং আমাদের দলের যারা আগে তার বিপক্ষে খেলেছে, সবার মোটামুটি জানা আছে, তার বিরুদ্ধে কিভাবে খেলতে হবে। আমরা তাকে খুব বেশি উইকেট না দেয়ার চেষ্টা করব। সে যদি বেশি উইকেট না পায়, তাহলে স্কোরবোর্ডে আমরা অনেক বেশি রান জমা করতে পারব। প্রশ্ন ॥ তামিম, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ পিএসএল খেলছে, তাদের প্রস্তুতিটা ঠিকঠাক হলো তো? এত খেলার কারণে কোন অবসাদ? মুশফিক ॥ ওরা (সাকিব, তামিম, রিয়াদ) যে খেলছে, সাধারণত আমাদের এতো খেলা থাকে না। এ বছর অনেক খেলা আছে। এতে হয়ত শারীরিকভাবে কিছুটা চাপ পড়ে। একই সঙ্গে শিক্ষণীয় অনেক ব্যাপারও থাকে। এটাতে শুধু আর্থিক ব্যাপার নয়, বরং শেখার যে বিষয়টা; এটা কিন্তু বড় একটা ব্যাপার। এর প্রমাণ আগে কিন্তু আপনারা দেখেছেন। বিপিএল খেলার পর কিন্তু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলোয়াড়দের দক্ষতা বেড়েছে। সাহসও বেড়েছে। একই ড্রেসিংরুমে তারা সাঙ্গাকারা-গেইলকে দেখেছে। আর তামিম, সাকিব, রিয়াদরা পিএসএল খেলছে। সবমিলিয়ে অনেক ক্রিকেট খেলেছে। এতে হয়ত তাদের কিছুটা অবসাদ থাকতে পারে। আশা করছি, অনুশীলন ম্যাচের আগে এবং অনুশীলন ম্যাচ দিয়ে তারা প্রস্তুত হয়ে উঠবে। তারা কেউ ইনজুরও নয়। আশা করছি, আমাদের কোচ ট্রেনাররা তাদের সঙ্গে কাজ করবেন, তাদের প্রস্তুত করে তুলবেন। এছাড়া তারা তিনজনই অনেক পরিপক্ব। প্রশ্ন ॥ বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট? মুশফিক ॥ ব্যাটিং ইউনিটে আমরা যতোটা উন্নতি করেছি, ততোটা কিন্তু বোলিংয়ে হয়নি। এটার একটা কারণ হলো, তারা বেশ অনভিজ্ঞ। এখন তারা যত খেলবে, ততোই পরিণত হয়ে উঠবে। তাদের প্রত্যাশিত সফল না হওয়ার পিছনে আমাদের ফিল্ডারদেরও দায় আছে। আমি মনে করি, মুস্তাফিজ, তাসকিন, রুবেল, শুভাশীষ, মিরাজ, সাকিব; এরা সবাই যদি পারফর্ম করে তবে ওদের ২০টি উইকেট নেয়া অবশ্যই পসিবল। আমরা এবার বেশ শক্তিশালী ইউনিট নিয়েই শ্রীলঙ্কা যাচ্ছি। প্রশ্ন ॥ শততম টেস্ট? মুশফিক ॥ এটা তো অবশ্যই রোমাঞ্চিত হওয়ার ব্যাপার। এটা একটা মাইলস্টোন। আমরা যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি২০তে সিরিজ জিততে পারি, তাহলে আমাদের রেটিং পয়েন্ট বাড়বে। আর যেটা বলা হচ্ছে, শততম টেস্ট; এটা শুধু আমার জন্য নয় বরং অবশ্যই পুরো বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বড় মাইলফলক, আমাদের জাতির জন্যই একটা বড় উপলক্ষ। এই উপলক্ষকে সামনে রেখে আমরা এমন কিছু যেন করতে পারি, যা আমাদের দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে। আমরা সেটার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। প্রশ্ন ॥ শ্রীলঙ্কায় জয়ের আশা কতটা করছেন? মুশফিক ॥ আপনি যখনই ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন না কেন, সেটা তো জয়ের জন্যই খেলতে হবে। কিন্তু আমি যেটা বললাম, টেস্টে এখনও আমরা কোন দলকে বলে কয়ে হারিয়ে দেয়ার মতো জায়গায় নেই। গত কয়েকটি সিরিজের কথা বলব, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা খুব কাছে গিয়ে একটা ম্যাচ হেরেছি। এরপর নিউজিল্যান্ডেও আমরা একটা টেস্টে লড়াই করেছি, ম্যাচে থেকেছি। এরপর ভারতের বিপক্ষে, বিশ্বের এক নম্বর দলের বিপক্ষে চারদিন পর্যন্ত আমরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয়, টেস্টে আমরা এখনও একটু অনভিজ্ঞ। পরবর্তীতে এ ধরনের পরিস্থিতি এলে, আমরা আরও ভাল করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। আমরা যত ম্যাচ জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারব, তত ভাল শিখতে পারব। আর টেস্ট জিততে হলে আমাদের তিনদিন নয়, বরং পাঁচদিন ভাল খেলতে হবে। সেটার জন্য আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। আশা এটা হবে। আমাদের সামর্থ্য আছে, তবে মাঠে তা প্রয়োগ করতে হবে। আমরা নিজেদের নিয়েই বেশি চিন্তা করছি। আমরা যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার ক্ষমতা আমাদের আছে। প্রশ্ন ॥ আপনি কিপিংটা কন্টিনিউ করতে চান কিনা। কিপিংয়ের জন্য আপনার ব্যাটিংটা প্রভাবিত হয় কিনা? মুশফিক ॥ আমি তো এনজয় করি। আমার ইচ্ছেও করে। কিন্তু আমার তো বোলিংও করতে ইচ্ছে করে। এতে যদি দলের উপকার হয়। কিন্তু আমি ইচ্ছে করলেই তো সবকিছু হবে না। মেইন ব্যাপার হলো, আমার যে দায়িত্ব আছে, তা পালন করার। কোচ আছে, ম্যানেজমেন্ট এবং বোর্ড আছে। তারা সিদ্ধান্ত নিবেন আমি কি করব। গতবছর যে এশিয়া কাপ হয়েছে, সেখানে কিন্তু আমি কিপিং করিনি, শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই তিনটা ম্যাচ খেলেছি। এটা কিন্তু ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ছিল। এখনও ম্যানেজমেন্টই সিদ্ধান্ত নিবেন। যদি ব্যক্তিগতভাবে বলতে বলা হয়, এখনও আমার মনে হয় যে কিপার এবং ব্যাটসম্যান হিসেবেই আমি দলের জন্য সবচেয়ে ভাল অবদান রাখতে পারি। এখন আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হবে, সেটাই পালন করব। বাকিটা টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর নির্ভর করছে। আমরা সবসময়ই সজাগ থাকি। তারপরও অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। যদিও আমাদের চেষ্টাটা একই রকম থাকে। সে জন্যই জাতীয় দলে আসা। ক্রিকেট আমাদের রুটিরুজির উপায়। এখানে বেঈমানী করার কোন সুযোগ নেই। আমরা সবসময় সবকিছু ঠিক রাখার চেষ্টা করি। তারপরও আমরা মানুষ, ভুল হয়ে যায়। হতেই পারে। প্রশ্ন ॥ টপ অর্ডারের কাছে প্রত্যাশা? মুশফিক ॥ এটা আসলে সব সিরিজেই টপ অর্ডারের ক্লিক করাটা আশাকরি। তারা ভাল কিছু করলে দলের জন্য খুব ভাল হয়। গত দুটি সিরিজে হয়ত ভাল হয়নি। তবে এই সিরিজে তামিম, সৌম্য, মুমিনুল ও রিয়াদ ভাই খুব ভাল খেলবেন বলে মনে করি। তারা সবাই খুব পরিশ্রম করছে। আশাকরি এই সিরিজে তারা এমন কিছু করবে, যা বাংলাদেশ দলের জন্য দারুণ কাজে লাগবে।
×