ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মফস্বল শহরে পরিপূর্ণ ডিজিটাল স্কুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মফস্বল শহরে পরিপূর্ণ ডিজিটাল স্কুল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের অনন্য নজির স্থাপন করেছে যশোর উপশহরে অবস্থিত বাদশাহ ফয়সাল ইসলামী ইনস্টিটিউট। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গতানুগতিকভাবেই চলছিল যশোর উপশহরের বাদশাহ ফয়সাল ইসলামী ইনস্টিটিউট। বর্তমান পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বদলে যেতে থাকে স্কুলটি। বাইরের কোন সহায়তা ছাড়াই প্রত্যেকটি শ্রেণিকক্ষসহ পুরো স্কুল ক্যাম্পাসে বসানো হয় ৩২টি সিসি ক্যামেরা। শিক্ষার্থী হাজিরার ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে চালু করা হয় ফিঙ্গার প্রিন্ট সিস্টেম। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে দেয়া হয় মাল্টিমিডিয়া সেট। তৈরি করা হয় নিজস্ব ওয়েবসাইট। যার মাধ্যমে অনলাইনে বেতন ও অন্যান্য ফিসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। প্রত্যেকটি ক্লাসে রয়েছে সাউন্ড সিস্টেম, যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে। এই সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ক্লাস টিচার কিংবা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আবার অবসর সময়ে দেশাত্মবোধক গানও শোনানো হয় শিক্ষার্থীদের। স্কুলটিতে রয়েছে আধুনিক মানের কম্পিউটার ল্যাব ও সায়েন্স ল্যাব। প্রধান শিক্ষক আছাহাবুল গাজী বলেন, পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সিসি ক্যামেরা থাকায় স্কুল চত্বর ও সংলগ্ন এলাকায় ইভটিজিং পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষগুলোতে সর্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এমনকি শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন কি-না, তাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সনাতন হাজিরা পদ্ধতির বদলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী সবার হাজিরা নেয়া হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে। আবার ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও নেয়া হয় সবার ফিঙ্গার প্রিন্ট। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়েছে। এছাড়া স্কুলটির নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে আলাদা আইডি। এই আইডি সারাজীবন সংরক্ষণ করা হবে। কোন শিক্ষার্থী ৫০ বছর পরেও যদি তার আইডি দিয়ে ওয়েবসাইটে ঢোকে তাহলে তার স্কুলজীবনের যাবতীয় তথ্য তিনি তখনও দেখতে পারবে।’ সারাদেশের স্কুল যখন ধীরে ধীরে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে, তখন সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে বাদশাহ ফয়সাল ইনস্টিটিউট স্কুলটিকে প্রায় শতভাগ ডিজিটাল করে ফেলেছে। এর ফলাফলও পেয়েছে তারা। গত পাঁচ বছর ধরেই পিএসসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় এই স্কুলে পাসের হার শতভাগ। যদিও স্কুলটিতে শিক্ষার্থী বাছাই করে ভর্তি করা হয় না। গড়ে সব শিক্ষার্থীই ভর্তি করা হয়। একটানা গত কয়েকবছর ধরে এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভাল ফল করায় এখন এখানে ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করার জন্য অনেক অভিভাবক আগ্রহী হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামীতে যদি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে এ স্কুলের গড় ফল আর ভাল করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, চীন, জাপানসহ ইউরোপের দেশগুলোতে যেভাবে স্কুল পরিচালনা করা হয়, সেগুলো আমি খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। যশোর উপশহর বাদশাহ ফয়সাল ইসলামী ইনস্টিটিউটকে আমরা সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। স্কুল পরিচালনায় ইতিমধ্যেই সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামীতেও এই ক্ষেত্রে যেসব নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে, সেগুলো দ্রুতই এই স্কুলে সংযুক্ত করা হবে।
×