ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

বিদায়বেলার হাতছানি পছন্দের বই সংগ্রহে হন্যে পাঠক

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিদায়বেলার হাতছানি পছন্দের বই সংগ্রহে হন্যে পাঠক

মোরসালিন মিজান ॥ বিদায়ের সুর বাজছে। শেষ হতে চলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭। গতকাল শনিবার ছিল ২৫তম দিন। গত কয়েকদিনের মতো এদিনও বই কেনায় দারুণ মনোযোগী ছিলেন পাঠক। বহু মানুষে এসেছিলেন। স্রোতের মতো ঢুকেছে। সবাই বই কেনেনি। তাতে কী? যারা কিনেছেন, তাদের সংখ্যা অনেক। প্রকৃত পাঠক একজনই দশজনের বই কিনে ফেলছেন বলে মনে হয়েছে। সন্ধ্যায় মেলা থেকে ফেরার পথে দেখা গেছে, কারও হাত একধম ফাঁকা। আবার কারও বইয়ের বোঝা এত ভারি যে, বহন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন পাঠক। তেমন একজনের নাম শাহ সুফিয়ান। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। তরুণ শিক্ষক বললেন, বই শখের জিনিস। এটা যত ভারি হবে তত আনন্দ! সাহিত্য এবং গবেষণা নির্ভর বই বেশি কিনেছেন বলে জানান তিনি। বলেন, আরও কেনার ছিল। কিন্তু সময় পেলাম না। তিনি যোগ করেন, মেলাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়। একই সময় খালি হাতে ফিরছিলেন শিহাব ও সুলতানা। দুজন বন্ধু। বই ছাড়াই বইয়ের মেলা? পছন্দ হয়নি কোন বই? এমন প্রশ্নে কিছুটা যেন লজ্জায় পড়ে গেলেন। শিহাব বললেন, বই কিনব। আরেকদিন আসার ইচ্ছা আছে। তবে বই না কিনলেও মেলায় খুব ভাল সময় কাটিয়েছেন বলে জানান তারা। বলেন, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। এর সকাল ১১টায় শুরু হয় মেলা। শিশু প্রহর থাকায় ছোটদের জন্য আগেভাগে প্রবেশ দ্বার খুলে দেয়া। শেষ শিশু প্রহরে এসেছিল বহু ছেলে মেয়ে। বাবা মায়ের হাত ধরে মেলা ঘুরে বেড়িয়েছে তারা। পছন্দের বই সংগ্রহ করা ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুকর্নারে খেলাধুলা করে কাটিয়েছে তারা। বিশেষ করে সিসিমপুরের চরিত্রগুলোর সঙ্গে মজার সময় কাটিয়েছে তারা। প্রকাশকের কথা ॥ মেলায় এদিন কথা হলো পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের কর্ণধার কামরুল হাসান শায়খের সঙ্গে। এবারও ছোটদের প্রচুর বই প্রকাশ করেছেন তিনি। ছোটরা ভিড় করে থাকে প্যাভিলিয়নের সামনে। কেন? আপনার নিজের বিশ্লেষণ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটদের মনোজগতটা বুঝতে হয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করি। তাদের আগ্রহ বোঝার চেষ্টা করি। তার পর বই করি। বইয়ের বিষয় প্রচ্ছদ ইলাস্ট্রেশন সব মিলিয়ে ভাল করার চেষ্টা। এ কারণেই হয়ত শিশুদের আকর্ষণ করা সম্ভব হয়। কবরীর স্মৃতিটুকু থাক ॥ বাংলা চলচ্চিত্রের অনন্য অভিনেত্রী কবরী। সাদা কালো যুগের এই স্বপ্নকন্যা অনেক ‘বই’ করেছেন। তবে লিখছিলেন যে, অনেকেরই জানা ছিল না। অথচ সব কাজ শেষে মেলায় চলে এসেছে বই! কবরীর ঘটনাবহুল জীবনের কথা ‘স্মৃতিটুকু থাক’ শিরোনামে প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড- বিপিএল। শনিবার মেলায় বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, কবরী আমাদের সময়কার হার্টথ্রব। সিনেমার পর্দায় তাকে দেখেছি। এখন বইয়ের পাতা থেকে পাঠ করা যাবে। জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানান মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বই প্রকাশের অনুভূতি জানিয়ে কবরী বলেন, আপনারা আমার সব কথাই জানেন। আমার দর্শক, শ্রোতা, যারা আমাকে ভালবাসেন, তারা আমার মনের কথা জানেন। এর পরও বইটিতে নতুন অনেক কিছুই পাবেন। যতটা সম্ভব লেখার চেষ্টা করেছি। পাঠককে বইটি পড়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি। চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, কবরী ইজ কবরী। তার দীর্ঘ জীবন নিয়ে হয়ত অনেক বড় বই করা যেত। ৫০ বছরের সব গল্প সৎভাবে তিনি লিখে গেছেন। এটা দর্শকদের অনেক বড় পাওয়া। অনুষ্ঠানে বিডি নিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা থেকে কবরীকে বর্ণনা করেন। মোড়ক উন্মোচনের পর কবরী বিপিএলের স্টলে যান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ কবরীর অটোগ্রাফসহ বই সংগ্রহ করেন। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবির মধ্য দিয়ে রূপালী পর্দায় অভিনয় শুরু কবরীর। পঞ্চাশ বছরের ক্যারিয়ারে দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন কবরী। নিজের এসব কথা নিজের কথা লিখতে গিয়ে বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের চমকপ্রদ ইতিহাস তুলে ধরেছেন বইটিতে। চলচ্চিত্র শিল্পের উপর মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতির প্রভাব সম্পর্কে লিখেছেন। নির্বাচিত বই ॥ বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের সঙ্কলন গ্রন্থ ‘ওঙ্কারসমগ্র।’ মেলা শুরুর পর পরই বইটি প্রকাশ করে ঐতিহ্য। সাধারণ মানুষ মহান নেতার কয়েকটি ভাষণ সম্পর্কে জানেন। এ বইতে তারা অনেকগুলো ভাষণ হুবহু পাবেন। সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই। মাওলা ব্রাদার্স থেকে মেলায় এসেছে সমকালীন কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম শাহাদুজ্জামানের প্রবন্ধ সঙ্কলন ‘ইলিয়াসের সুন্দরবন এবং অন্যান্য।’ বইতে সাহিত্যসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের লেখার পাশাপাশি আছে লেখকের কয়েকটি সাক্ষাতকারও। ড. জাহিদুল কবীরের বই ‘ভাটিয়ালি গানের উদ্ভব ও বিকাশ।’ প্রকাশ করেছে অন্বেষা। ভাটিয়ালী গানের পরিচিতি, উদ্ভব, প্রভাব স্বরলিপিসহ নানা আলোচনা বইতে যুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পের বই ‘বাবার মতো মুক্তিযোদ্ধা।’ লিখেছেন মঞ্জু সরকার। সাদামাটা গল্প নয়। ইতিহাসকে আশ্রয় করে লেখা। সৈয়দ আবিদ রিজভির অনুবাদ ‘মোগল সম্রাট শাহজাহান।’ ইতিহাসের বহুল আলোচিত চরিত্রটি সম্পর্কে জানতে ভাল সহায়তা করবে এই বই। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। শিক্ষা বিষয়ে সমৃদ্ধ রচনা আবু নাছের টিপুর ‘শিক্ষা সংস্কারের দুইশ বছর।’ প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য। নতুন বই ॥ মেলার ২৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৬৩টি। এগুলোর মধ্যে গল্প ২৪, উপন্যাস ২২, প্রবন্ধ ৮, কবিতা ৫৪, গবেষণা ৩, ছড়া ৬, শিশুসাহিত্য ৭, জীবনী ৫, মুক্তিযুদ্ধ ৪, নাটক ১, রাজনীতি ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ২, কম্পিউটার ১, রম্য/ধাঁধা ১, ধর্মীয় ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর রয়েছে ২৪টি বই। মোড়ক উন্মোচন ॥ মেলায় এদিন ৪১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মূল মঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকুর রশিদ। আলোচনা করেন আমীরুল ইসলাম এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন জাকির তালুকদার। সন্ধ্যায় ছিল ‘স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র’ এবং ‘ঘাসফুল শিশুকিশোর সংগঠন’র সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন কমলিকা চক্রবর্তী, আরিফ রহমান, শ্যামল কুমার পাল, সালমা চৌধুরী, রাজিয়া সুলতানা, ডাঃ রেজাউর রহমান প্রমুখ।
×