ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দাম বাড়ানো হয়েছে ২২ দশমিক সাত ভাগ হারে;###;১ মার্চ ও ১ জুন দুই ধাপে কার্যকর;###;আবাসিক খাতে ৪৬ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি;###;বছরে অন্তত চার হাজার ১৮৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে;###;এর ৮১ ভাগই সরকারী কোষাগারে জমা হবে

গ্যাসের দাম বাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গ্যাসের দাম বাড়ল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনিশ্চিত স্বাভাবিক সরবরাহের মধ্যেই সকল ক্ষেত্রে গ্যাসের দর বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার বিকেলে ২২ দশমিক ৭ ভাগ হারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে। আগামী ১ মার্চ এবং ১ জুন দুই ধাপে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন দাম গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে। সাবেক বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম কমিশন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করলেন। আবাসিক গ্রাহকের ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে পরিবহন ভাড়া। দর বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়লেও স্বাভাবিক সরবরাহবঞ্চিত গ্রাহকের জন্য কিছুই করার নেই কমিশনের। কমিশন এবার আবাসিক খাতে সবচেয়ে বেশি ৪৬ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। অতীতে কোনদিনই গৃহস্থালিতে এ বিপুল পরিমাণ গ্যাসের দর একবারে বাড়েনি। সরকার পর্যায়ক্রমে আবাসিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে এলপিজির সমান করার নীতি গ্রহণ করেছে। কমিশনের এ দর বৃদ্ধি সরকারের সে নীতিকেই সমর্থন করল। যদিও কমিশন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এ দাম বৃদ্ধিকে ন্যায্যতার ভিত্তিই বলছেন। তার মতে, তিনি যখন গ্রামে থাকতেন তখন রান্নার জন্য তিন হাজার টাকার কাঠ প্রয়োজন হতো। আবার একজন এলপিজি গ্রাহক প্রতি মাসে রান্নার জন্যই আড়াই হাজার টাকা ব্যয় করেন। সেখানে এ স্বল্পদামে গ্যাস ব্যবহার করা গ্রাহকদের এখনও ভাগ্যবান বলেই মনে করছেন কমিশন চেয়ারম্যান। কমিশন সূত্র বলছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বছরে অন্তত চার হাজার ১৮৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে। এ রাজস্বের ৮১ ভাগই সরকারী কোষাগারে জমা হবে। বাকি ১৯ ভাগ যাবে বিতরণ কোম্পানি পেট্রোবাংলা এবং উৎপাদনকারীদের পকেটে। এর আগে কমিশন দাম বৃদ্ধির সময় বিদ্যুত খাতকে বাইরে রেখেছিল। এবার দাম বৃদ্ধিতে বিদ্যুত খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিশন মনে করছে, এখন অন্তত ৬০ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিরাট এ অংশ দাম বৃদ্ধির বাইরে থেকে গেলে সার্বিকভাবে রাজস্ব আদায় কমে যাবে। যদিও এ দাম বৃদ্ধি বিদ্যুত উৎপাদন ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনই পিডিবি বলছে, তাদের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় সরবরাহ ব্যয় কম। এতে তারের লোকসান হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার গ্যাসের সঙ্কট সমাধানে এলএনজি আমদানির চেষ্টা করছে। এতে ধাপে ধাপে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে এলএনজিকে ভর্তুকি দেয়ার বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ গঠিত কমিটি সুপারিশ করেছে। যদিও কমিশন সরাসরি এ বিষয় মন্তব্য না করে বলছে, বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে যে দরে আমরা গ্যাস কিনি তারচেয়ে অনেক কম দামে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করা হয়। এতে একটি বড় অংশ পেট্রোবাংলাকে ভর্তুকি দিতে হয়। ক্রমান্বয়ে দাম বৃদ্ধি করে সে পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। কমিশন সদস্য রহমান মুরশেদ দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সময় বলেন, সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মার্জিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি করা হয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) সঞ্চালন মাসুলও। এক্ষেত্রে জিটিসিএলের সঞ্চালন মাসুল দশমিক ১৫৫৬ টাকা থেকে দশমিক ২৬৫৪ টাকা করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটারে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত বছরের অক্টোবরে বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে কমিশন গঠিত কারিগরি কমিটি বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করা হয়। তবে কমিশন বলছে, যেসব ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটি দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেছে সেসব ক্ষেত্রে আমরা দাম বৃদ্ধি করিনি। এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করা হয়। তবে যেহেতু গ্যাস বিতরণ কোম্পানি পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন নেই এবং গ্যাস খাত লাভে রয়েছে তাই বিতরণ কোম্পানি বা পেট্রোবাংলাকে এ অর্থ দেয়া হয়নি। এ অর্থে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল করা হয়। তহবিলের অর্থেই পেট্রোবাংলা গ্যাস খাতের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ করে। গ্রাহকের টাকায় গ্যাস খাতের উন্নয়ন হলেও আবার সেই গ্রাহককেই বাড়তি দর দিতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি ঘোষণা করার সময় কমিশন চেয়ারম্যান ছাড়াও সদস্য আব্দুল আজিজ খান, রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভূঁইয়া এবং মোঃ মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×