ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারীদের আইনী আওতায় আনতে রুল

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারীদের আইনী আওতায় আনতে রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন বা কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় কেন আনা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, যোগাযোগ সচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও আইজিপিকে বিবাদী করা হয়েছে। তাদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে। আদেশে ইনকোয়ারি এ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুসারে এই কমিশন বা কমিটি গঠনে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বুধবার এই রুল জারি করেন। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবে ‘ইউনূসের বিচার দাবি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি পত্রিকায় আসা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত এই রুল জারি করেছে। বিষয়টি আগামী ২০ মার্চ শুনানির জন্য আবার আদালতে উঠবে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়। সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী কিছু ব্যক্তিত্বের দৌড়ঝাঁপ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্ম ও মিডিয়ার অতি উৎসাহ পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকারতে বিপাকে ফেলে দেয়। যা ছিল সরকারের জন্য চরম অবমাননাকর’। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। পরে তাদের বাদ দিয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত গত শুক্রবার ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেয়। রায়ে বিচারক বলেছেন, এই মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশীরাও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেল জয়ী বাংলাদেশী মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল। মঙ্গলবারও একনেক বৈঠকের শুরুতে কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ‘মিথ্যা অভিযোগের’ পেছনে অন্য কোন কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন। দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র্র্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওই মামলায় কারাগারেও যেতে হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে তদন্তের পর জানানো হয়। দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে। সচিব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় আদালত। অন্যদিকে মঙ্গলবার ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ড. ইউনূস জড়িত উল্লেখ করে বলেছিলেন, সেতুর অর্থায়ন বন্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্র কাউকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দেয়ার জন্য ছিল না। এটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। আমরা যে কারও কাছে মাথা নত করি না সেটা আমাদের শিখিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘প্রধানমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি ড. ইউনূস সাহেব পদ্মা সেতু অর্থায়ন বন্ধ করার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।
×