ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাসননীতি ও দেয়াল নির্মাণের বিরুদ্ধে হাজার হাজার লোক রাজপথে

মেক্সিকোতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মেক্সিকোতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসননীতি ও এক সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনার প্রতিবাদে মেক্সিকোতে হাজার হাজার লোক রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মেক্সিকোর এক ডজনেরও বেশি শহরে সাদা পোশাক পরা বিক্ষোভকারীরা মেক্সিকোর পতাকা ওড়ায় ও ট্রাম্প-বরোধী প্ল্যাকার্ড বহন করে। সংগঠকরা বলেন, মেক্সিকো যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ তারা সে বার্তা পাঠাতে চান। তারা দুর্নীতি দমন ও সহিংসতা হ্রাস করতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতোরও সমালোচনা করেন। প্রতিবাদী মারিয়া আমপারো কাসার বলেন, ট্রাম্পের অভিবাসননীতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি হুমকি। তিনি বলেন, অভিবাসীরাই যে আমেরিকান সমাজ গড়ে তুলেছে এবং গড়ে তুলে যাচ্ছে এ কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। খবর বিবিসি ও এনবিসির। মেক্সিাকোসংলগ্ন মার্কিন সীমান্ত বরাবর এক দেয়াল নির্মাণ করতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ওই দেশের নাগরিকদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। পেনা নিয়েতো দেয়াল নির্মাণের ব্যয় মেটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি পূরণ করতে বারবার অস্বীকার করে এসেছেন। নিয়েতো বলেন, মেক্সিকো দেয়ালে বিশ্বাস করে না। ট্রাম্প মেক্সিকোসংলগ্ন মার্কিন সীমান্ত বরাবর ‘অনতিক্রমনীয় প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক’ দাঁড় করানোর জন্য ইতোমধ্যে এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। মেক্সিকোর মানুষেরই সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে ট্রাম্প দাবি জানিয়েছেন। তিনি বারবার বলেন যে, মধ্য আমেরিকা থেকে অবৈধ অভিবাসীদের আগমন নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়া ঠেকাতে দেয়াল প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। মেক্সিকোর সীমান্ত বরাবর দুই হাজার মাইল দেয়াল নির্মাণ ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মেক্সিকানদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। প্রেসিডেন্টের নতুন ব্যবস্থার আওতায় তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প অপরাধ ও মাদক চক্রগুলোকে দমন করতে তিনটি নির্বাহী আদেশে সই দিয়েছেন। এরূপ অপরাধ করেছিল এমন সব অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করাই এর উদ্দেশ্য। প্রতিবাদীদের সংগঠক মারিয়া এলেনা মোরেরা বলেন, আমেরিকান জনসাধারণকে নয়, ট্রাম্পের নীতিকে লক্ষ্য করেই ওই বিক্ষোভ দেখানো হয়। মন্টেরে, পুয়েনলো ও টিজুয়ানা শহরে এ কর্মসূচী পালন করা হয়। মোরেরা বলেন, মেক্সিকোর জনগণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকানদের প্রভাবিত করবে এমন সব আলোচনাতেই যাতে মেক্সিকান সরকারের ভূমিকা থাকে, এমন দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করতেই ওই মিছিলের আয়োজন করা হয়। আরেক সংগঠক গ্রুপ ভিব্রা মেক্সিকোর ওয়েবসাইটে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেষ্টার প্রতি আমাদের বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে এবং এসব সমস্যার বাস্তব সমাধান খুঁজে পেতে মেক্সিকান নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ ও এককণ্ঠ হওয়ার এখনই সময়। সম্ভবত আশ্চর্যের কথা, রবিবারের আগে মেক্সিকানরা ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সম্মিলিতভাবে রাস্তায় বের হয়নি। অথচ তারাই ছিল ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও কড়া কথাবার্তার, বিশেষত সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ ও অভিবাসন সম্পর্কিত এক নির্বাহী আদেশের লক্ষ্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকান নাগরিকদের বের করে দেয়ার ছবি ছাপা হলে মেক্সিকো সিটিতে মেক্সিকানরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। বিশেষত দু’সন্তানের ৩৬ বছরের এক মাকে সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড নিয়ে মিথ্যা বলায় বহিষ্কার করা হলে ক্ষোভ চরমে পৌঁছে। স্বেচ্ছায় মেক্সিকোতে ফিরে আসা ২৫ বছরের ইয়োভানি দিয়াজ বলেন, আমি বিরক্ত বোধ করছি। খোলাখুলি বলতে গেলে, আপনারা আমাদের সম্প্রদায়ের সদস্যদের তাদের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও তাদের কাজ থেকে জোর করে বের করে দিচ্ছেন। প্রায় ৭০টি সংগঠন ওই সমাবেশে জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ছিল এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি সংগঠন এবং অসংখ্য যুব সংগঠন।
×