ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বসেরা দশ উদ্যোগের তালিকায় দেশীয় অনলাইন ই-কমার্স

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিশ্বসেরা দশ উদ্যোগের তালিকায় দেশীয় অনলাইন ই-কমার্স

বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। কিন্তু ঠিক কি উপায়ে কাজ করলে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়া যাবে সে সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। বেশিরভাগ মানুষ কিছুদিন পরিশ্রম করে এই পথ থেকে সরে আসেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রচুর পরিশ্রমের সঙ্গে লাগবে ধৈর্য। ইতোমধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে যারা সফল হয়েছেন তাদের অনেকেরই মতে, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। তবেই উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়া সম্ভব। জিয়া আশরাফ আর তার দুই বন্ধু ওয়াসিম আলিম, তেজাস বিশ্বনাথ তাদের নতুন উদ্যোগের নাম খুঁজছিলেন। প্রথম দিকে গার্মেন্টসের ব্যবসা করার চিন্তা থাকলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে তা আর করা হয়নি। পরে মার্কেট রিসার্চ করে দেখা যায় অনলাইন ই-কমার্স সাইটগুলো নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তখন জিয়া আশরাফ আর তার দুই বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেন ই-কমার্স ব্যবসা করবেন। কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় তারা অনলাইনে ঠিক কি ধরনের পণ্য বিক্রি করবেন তা নিয়ে। অনেক চিন্তাভাবনা ও মার্কেট রিসার্চ করার পর তিন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে তারা অনলাইন ই-কমার্স সাইটে ব্যবসা করবেন। যে পণ্যগুলো সব মানুষের প্রতিদিনই প্রয়োজন হয়। কিন্তু কি নাম দেবেন, কোন নামই তাদের মনে ধরছিল না। ঘরে বা বাইরে থাকেন, যেখানেই যান সারাক্ষণ মাথায় নামের চিন্তা। একদিন জিয়া আশরাফ কোথাও যাওয়ার জন্য রিকশায় চেপে বসতেই রিকশাওয়ালা বলল, ‘স্যার, আজ তো বাংলাদেশে চাল আর ডালের দামও বেড়ে গেল।’ চট করে চালডাল নামটা জিয়া আশরাফের মাথায় ঢুকে যায়। আরে এই নামটাই তো আমরা খুঁজছি! আমরা যে কাজটা করতে চাই তার এই নামটিই উপযুক্ত। বন্ধুদের বললে প্রথমে তারা বিষয়টা ততটা আমলে না নিলেও এক সময় সবার পছন্দ হয়ে যায় নামটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে শুরুর দিকে অনলাইন ই-কমার্স (গ্রোসারি শপ) সাইট ‘চালডালডটকম’ চালু হয়। এরপর লোগো বানানো পালা। তখন অনলাইন শপ নিয়ে মানুষের ধারণা খুব একটা পরিচিত নয়, তার ওপর আবার বাসার কাছের পণ্য অনলাইনে কেনার কথা তো চিন্তাই করতে পারত না কেউ! সবার কাছেই মনে হলো, এটা একটা পাগলামি ছাড়া কিছুই না। কিন্তু আমরা তখন নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। জীবনের নতুন এক পয়েন্টে আমরা দাঁড়িয়ে তখন। কিছু করে দেখানোর তাগাদা মনের মধ্যে, আমাদের পেছনে ফিরে তাকানোর সময় কই? সময়মতো মানসম্পন্ন পণ্য পৌঁছে দেয়াই প্রধান পরিকল্পনা ছিল আমাদের। জীবন এক ভিন্ন মোড় নিল তিন বন্ধুর। নিজেদের পকেটের টাকাগুলো একসঙ্গে করে চালু হলো এই অনলাইন দোকান। প্রথম দিকে গুলশান, বনানী ও বারিধারায় পরিচিত মানুষজনের কাছে সার্ভিস দেয়া শুরু করে ‘চালডালডটকম’। তারপর ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। চালডালের বর্তমানে ছয়টি বড় বড় ওয়্যারহাউস আছে সারা ঢাকায়। ফলে যে কোন পণ্য অর্ডার করার এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যায় ক্রেতার দরজায়। ২০০ টাকা ওপরে যে কোন পণ্য কিনলে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য চালডালকে কোন অতিরিক্ত ফিও দিতে হয় না। ২০০ টাকার নিচে পণ্য কিনলে অতিরিক্ত ফি ৪০ টাকা। ‘চালডালের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা আছে। ফলে যখনই কোন পণ্যের অর্ডার আসে তখনই কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিরা সেই ক্রেতাকে ফোন দিয়ে অর্ডার কনফার্ম করেন। সারা ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ওয়্যারহাউস থাকায় এটি আরও সহজ হচ্ছে। কিছুদিন আগে পৃথিবীর সেরা পাঁচ শতাধিক নতুন উদ্যোগের মধ্যে চালডালকে সেরা দশে নির্বাচন করেছে বিশ্বসেরা স্টার্টআপ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াই কম্বিনেটর। বিশ্বসেরা দশ নতুন উদ্যোগের তালিকায় নয় নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের গ্রোসারি শপ চালডালডটকম। ওয়াই কম্বিনেটর প্রকাশিত বিশ্বসেরা নতুন উদ্যোগের তালিকায় চালডালের নাম দেখে আরও বেশি উদ্যমী হয়ে ওঠেন এর সঙ্গে যুক্ত সকল উদ্যমী তরুণ। তারা চান, ঢাকার প্রতিটি অঞ্চলের পাশাপাশি দেশের ব্যস্ত শহরগুলোতেও চালডালের ওয়্যারহাউস প্রতিষ্ঠা করতে এবং এর মাধ্যমে সারাদেশের মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সবধরনের পণ্যের হোম ডেলিভারি সুবিধা দিতে। চালডাল বাংলাদেশের জনগণকে এক দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য পাওয়ার সুবিধা দিচ্ছে। রয়েছে ৪ হাজারের বেশি প্রোডাক্ট। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ কাস্টমারদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে তারা। এক ঘণ্টার মধ্যেই পণ্য কাস্টমারদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে চালডাল।
×