ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হলুদে সবুজে মন মাতিয়ে বসন্তের প্রথম দিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

হলুদে সবুজে মন মাতিয়ে বসন্তের প্রথম দিন

মনোয়ার হোসেন ॥ শীতের শুষ্কতার ঘোমটা খুলে এসেছে প্রকৃতির প্রাণসঞ্চারী বসন্ত। বৃক্ষরাজির নবীন পত্রপল্লবের পাশে ঝরা পাতার দৃশ্য জানিয়েছে সেই আগমনী বার্তা। হেসে উঠেছে অজস্র রঙের ডানায় ভর করা গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের পাপড়ি। কোথাও বা গাছের ডালে বসে কুহুতানে কলরব ছড়িয়েছে কোকিল। এভাবেই ঐশ্বর্যময় ষড়ঋতুর বাংলায় পুনরায় ঘটল প্রকৃতির পালা বদল। যদিও যান্ত্রিক শহর ঢাকায় নিসর্গের এ পরিবর্তনের সবটুকু চোখে পড়ে না। তবে ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনে ঠিকই আলোড়িত হয়েছে শহুরে মনন। সেই সুবাদে রাজধানীর ছয়টি ভেন্যুতে হয়েছে বসন্ত উদ্্যাপন। নবঋতুর ঝলমলে রোদের ডানায় ভর করে শীতের কাতরতা ছাপিয়ে উষ্ণতার পরশে চঞ্চল হয়েছে নাগরিক হৃদয়। দৃশ্যপটের পরিবর্তনে এভাবেই এলো ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম মাস ফাল্গুন, প্রকৃতিতে ছড়ালো রূপের আগুন। সোমবার আগুন রাঙা ফাগুনের সেই উত্তাপে সজীব হয়েছে শহর। নাগরিক প্রাণে ঠিকই কবিগুরুর আশ্রয়ে গুঞ্জরিত হয়েছেÑ মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে/মধুর মলয় সমীরে মিলন রটাতে/কুহকলেখনী ছুটায়ে কুসুম তুলিছে ফুটায়ে/লিখিছে প্রণয়কাহিনী বিবিধ বরণছটাতে/হেরো পুরনো প্রাচীন ধরণী হয়েছে শ্যামল বরণী/যেন যৌবনপ্রবাহ ছুটেছে কালের শাসন টুটাতে/পুরনো বিরহ হানিছে, নবীন মিলন আনিছে/নবীন বসন্ত আইলো নবীন জীবন ফুটাতে...। মনের অজান্তেই কেউ বা গেয়েছে ‘ওরে ভাই ফাগুন এসেছে বনে বনে’ কিংবা ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা/এসো হে এসো হে এসো আমার বসন্ত’। রাজধানীতে সবুজ শ্যামলিমার প্রাচুর্যের অভাব থাকলেও বসন্তের বর্ণিলতায় মানুষের মনেও লেগেছিল ফাগুনের ছোঁয়া। রূপময় এ ঋতু বরণে সুবিধামতো সময়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে রাজধানীবাসী। পোশাক ও মননে ছিল বসন্ত বরণের নয়নজুড়ানো দৃশ্য। বাসন্তী কিংবা হলুদ রঙের শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় পেঁচানো গাঁদা ফুলের বন্ধনী অথবা মাথায় ফুলের টায়রা পরে ঘুরে বেড়িয়েছে নারীকুল। হলুদসহ বাহারি রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া জড়িয়েছে পুরুষের শরীরে। শিশুদের পোশাকেও ছিল রঙের সমাহার। উৎফুল্ল মননের সঙ্গে পোশাকের রং মিলিয়ে হয়েছে বসন্তের উদ্্যাপন। সব মিলিয়ে মন ও প্রাণের মমতায় উচ্চারিত হয়েছে বসন্তের জয়গান। করা হয়েছে আপন সংস্কৃতি ও শেকড়ের আবাহন। সেই শেকড়ের টানে বসন্তের উন্মাতাল বাতাস গায়ে মেখে রাজপথে নেমেছে শহরবাসী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরের নানা প্রান্তে ছিল বসন্ত বন্দনার বহুমুখী আয়োজন। সংস্কৃতিপ্রমীরা সেসব আয়োজনে শামিল হয়ে ঘটিয়েছেন প্রাণের প্রকাশ। মাতোয়ারা হয়েছেন বসন্ত বরণের অনাবিল আনন্দে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকাজুড়েই উদ্্যাপনের মাত্রাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজনটি বসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ সেøাগানে এই মঞ্চসহ রাজধানীর চারটি মঞ্চে বসন্ত আবাহনের অনন্য আয়োজনটি করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষৎ। সকাল থেকে রাত অবধি নাচ-গান ও কবিতায় মুখরিত ছিল শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য এ আঙিনা। নাচ-গান-কবিতায় সজ্জিত বসন্তভিত্তিক এ আয়োজনে মিলেছে প্রাণের স্পন্দন। চোখে পড়েছে বন্ধু বা বান্ধবীর হাতে ফুলের প্রীতি বন্ধনী পরিয়ে দেয়ার সম্প্রীতিময় দৃশ্যপট। একে অপরের গালে বা কপালে বসন্তের বর্ণময়তা ছড়িয়ে দিতে মেতেছিল আবির খেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের আঙিনায় বসন্ত বরণের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন সমগীত। সন্ধ্যায় ছিল শিল্পকলা একাডেমির বসন্ত আবাহনের আয়োজন। এর বাইরে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার দুই ক্যানভাস বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বসন্তের আনন্দ আবাহনের পাশাপাশি বইয়ের প্রতি ভালবাসায় অনেকেই গিয়েছেন একুশে গ্রন্থমেলায়। বসন্তের রঙের ছটায় বেড়েছে ভাষাশহীদদের নিবেদিত এ মেলার ঔজ্জ্বল্য। এর বাইরেও ঢাকাবাসীর অনেকেই কোন আয়োজনে না গিয়েও বসন্তের উদাসী হাওয়া গায়ে মেখে ঘুরে বেরিয়েছেন আপন খেয়ালে। শাহবাগসহ রাজধানীর ফুলের দোকানগুলোয় চোখে ঋতুরাজ উদ্্যাপনের সৌন্দর্যময় দৃশ্যপট। এসব পুষ্পবিতানে গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা ফুলে গড়া মালা, বন্ধনী কিংবা টায়রা সংগ্রহ ঋতুরাজ বরণকারী নর-নারীরা। ঐশ্বর্যময় বসন্ত ঋতু বরণে সাতসকালে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে সংস্কৃতিপ্রেমী নগরবাসী। পথে পথে তাঁরা ছড়িয়ে দিয়েছে সুন্দরের ¯িœগ্ধতা। দিনভর বসন্তের দখিনা বাতাস গায়ে মেখে উচাটন হয়েছে নাগরিক মন। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিশু-কিশোর, মধ্যবয়সীর পাশাপাশি অনেক বয়োবৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অনুরাগীরাও সমবেত হয়েছিলেন বসন্ত বন্দনার বিভিন্ন আয়োজনে। তেমনই একজন মোঃ আবদুল রশীদ। চারুকলায় কথায় হয় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের সঙ্গে। এমন উৎসবের আগমন প্রসঙ্গে বলেন, আমি মনে-প্রাণে একজন বাঙালী। আর প্রতিটি জাতিরই আছে সংস্কৃতির স্বতন্ত্র শেকড়। তেমনি এই বসন্ত উৎসব কিংবা বর্ষবরণ হচ্ছে আমাদের আত্মপরিচয়ের উৎসব। এমন উৎসব আমাকে সংকীর্ণ চেতনা থেকে মুক্ত থাকার রসদ জোগায়। বাঙালীর এসব আচার কিংবা উৎসব অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক হওয়ার প্রেরণা দেয়ার পাশাপাশি এঁকে দেয় বিশ্বজনীন হওয়ার পথরেখা। ভোরের আলস্য কাটিয়ে রোদ ঝলমলে সকালের আলো তখন ছড়িয়েছে বকুলতলায়। সবুজ পাতার ফাঁক গলে মিষ্টি রোদের কিরণে উদ্ভাসিত মঞ্চ। ভেসে এলো সারেঙ্গীর মোহময় সুর। যন্ত্রশিল্পী মতিয়ার রহমান পরিবেশিত রাগ ভৈরবীর সুরেলা শব্দধ্বনিতে ঋতুরাজকে বরণকারীদের মনে ছড়িয়ে দিলেন ভাললাগার অনুরণন। যন্ত্রের বাদন শেষে উপস্থাপিত হয় অসিত রায়ের শাস্ত্রীয়সঙ্গীত। গেয়ে শোনান বসন্তভিত্তিক একটি ধ্রুপদী রাগ। ঋতুরাজকে স্বাগত জানিয়ে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী গেয়ে শোনায় ‘আয়রে বসন্ত নবীন পাখা মেলে’। পরের পরিবেশনায় উপস্থাপিত হয় সাঁওতালি নাচ। মাদলের তালে তালে সুন্দর শরীরী ভঙ্গিমায় নৃত্য পরিবেশন করেন চার সাঁওতাল তরুণ-তরুণী। ঢোল, মাদল, খরতাল ও করতালে সহযোগে নাচ নিয়ে মঞ্চে আসে নৃত্যদল কাদামাটি। ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’ গানের সুরে মঞ্চের সামনের শ্রোতা-দর্শকদের পানে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দেয় নাচের প্রকাশে। তামান্না রহমানের নির্দেশনায় ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানের সুরে নাচ করে নৃত্যম। এরপর কবিতায় বসন্তের কথা বলে যান বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঠ করেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘শেষ বসন্ত’। ফাহিম হোসেন চৌধুরী গেয়ে শোনান ‘অলি বারবার আসে। ‘আমার মল্লিকা বনে’ শিরোনামের গান শোনান বুলবুল ইসলাম। ‘জাগাও জাগাও দখিন হাওয়া’ গানের সুরে নাচ করে নৃত্যনন্দন। ‘বসন্ত এলো এলো এলো রে’ শীর্ষক সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে গানের দল সুরসপ্তক। ‘বসন্ত বর্ণন’ নামের মণিপুরি নাচ পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও তাঁর দল ধৃতি নর্তনালয়। বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের আশ্রয়ে ঋতুরাজের বন্দনা করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস। গেয়ে শোনান ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...’। নজরুলের ‘বাসন্তী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বেলায়েত হোসেন। ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ গানের সুরে নেচে ওঠে নৃত্যদল নটরাজ। ‘আমি সুর তুলিতে এলাম বনে’ গানের সুরে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন আলো ও মিলন। রবীন্দ্রনাথের বসন্ত গানে সাজানো নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে পূজা সেনগুপ্ত। ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’ গানটি গেয়ে শোনান বুলবুল ললিতকলা একাডেমি। ‘আহা আজি এ বসন্ত’ গানের সুরে নাচ করে নৃত্যাক্ষ। আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করে রাঙামাটি থেকে আগত অন্তর দেওয়ান ও তাঁর দল। বসন্ত আবাহনের এ আয়োজনে অতিথিদের ফুলের প্রীতি বন্ধনী পরিয়ে দেয় নির্মল মন ও প্রাণের শিশুরা। কিছুক্ষণের জন্য চলে ডালায় সাজানো লাল, নীল, হলুদসহ নানা রঙের আবির মাখিয়ে দেয়ার পর্ব। একে অন্যের গাল ও কপালে নানা বহু বর্ণের আবির দিয়ে উৎসবটিকে যেন আরও রাঙিয়ে দন। সব শেষে বের করা হয় বর্ণাঢ্য বসন্ত শোভাযাত্রা। চারুকলা অনুষদ থেকে বেরিয়ে টিএসসি ঘুরে পুনরায় মঞ্চের কাছে এসে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি। বকুলতলায় বিকেলের পর্বেও বসন্ত উদযাপনে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ছিলে বসন্তভিত্তিক নৃত্য-গীত ও কবিতার পরিবেশনা। এছাড়া বিকেলে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চেও ছিল বসন্ত পরিষৎ আয়োজিত উৎসবের আয়োজন। এতে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে পঞ্চ ভাস্কর, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, সুরবিহার, বহ্নিশিখা, সুরধ্বনিসহ বিভিন্ন সংগঠন। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন, ভাবনা, নৃত্যমঞ্চম দিব্য, বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টসসহসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা। একক কণ্ঠে গান শেনান অনিমা রায়, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, সঞ্জয় কবিরাজ, মহাদেব ঘোষ, মামুন জাহিদ খানসহ অনেকে। একক আবৃত্তি পরিবেশন করে মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, রফিকুল ইসলাম ও তামান্না সারোয়ার। এছাড়া একই সময়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কেও ছড়িয়েছিল বসন্ত উৎসবের রং। বসন্ত কথনের সঙ্গে ছিল দলীয় সঙ্গীত, একক সঙ্গীত দলীয় আবৃত্তি ও সমবেত নৃত্য। আধুনিক ঢাকার ও উত্তরার ৭ নম্বর পার্ক মাঠেও অনুষ্ঠিত হয় নানা পরিবেশনায় বসন্ত উৎসব। এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে ফাল্গুনের প্রথম দিনটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমগীত’। ‘জাগাও প্রাণ প্রকৃতি গান এই ফাগুনে’ স্লোগানে কলাভবনের সম্মুখের বটতলায় তাদের আয়োজনে ছিল দেশীয় নাচ, গান পরিবেশনা। এ আয়োজনে সহজিয়া সুরের গানে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখে জলের গান। বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বসন্ত বরণে শিল্পকলা একাডেমিতে সোমবার বিকেলে শুরু হয় তিন দিনের বসন্ত উৎসব। একাডেমির নন্দনমঞ্চে শুরু হয় এ উৎসব, যার আয়োজক একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। অনিক বোসের পরিচালনায় ‘বসন্ত মনে দিচ্ছে উঁকি’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পী দল। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ, ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। একক কণ্ঠে গান শোনান সালমা আকবর, খায়রুল আনাম শাকিল, অদিতি মহসিন ও ইয়াসমিন মুশতারী। কবিতার দোলায়িত ছন্দে আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝর্ণা সরকার, নায়লা তারান্নুম কাকলী, বেলায়েত হোসেন ও মাসকুর-এ-সাত্তার কলোল।
×