ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ইতিহাস গড়তে  পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ হাতে আছে একদিন ও ৭ উইকেট। জিততে দরকার ৩৫৬ রান। পারবে বাংলাদেশ হায়দরাবাদ টেস্টে জিততে কিংবা ড্র করতে? নাকি হারই হবে নিয়তি? যদি আজ টেস্টের পঞ্চমদিনে কঠিন কাজটিই করে ফেলে বাংলাদেশ, জিতে যায় কিংবা ড্র করে, তাহলে ইতিহাস হয়ে যাবে। আর হারলে, বাংলাদেশের মাটিতে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে হারের পর ভারতের মাটিতেও প্রথমবার খেলে একই পরিণতি হবে। বাংলাদেশের সামনে জিততে ৪৫৯ রানের টার্গেট দিয়েছে ভারত। প্রথম ইনিংসে ভারত ৬৮৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছে। তৃতীয়দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ৩২২ রান করে। চতুর্থদিনে প্রথম সেশনের একটু আগ পর্যন্ত এসে বাকি থাকা ৪ উইকেট হারিয়ে আরও ৬৬ রান যোগ করে বাংলাদেশ। ৩৮৮ রানে অলআউট হয়। তা সম্ভব হয় মুশফিকুর রহীমের ১২৭ রানের জলজ্যান্ত ইনিংসে। ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। তাতেও প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ফলোঅনেও পড়ে। কিন্তু ভারত আবার বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে না পাঠিয়ে নিজেরাই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে। চতুর্থদিনের দ্বিতীয় সেশন পুরোটা ব্যাট করে ভারত। তাতে ৪ উইকেটে ১৫৯ রান করে আবারও ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর আবার বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৭৫ রানেই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট হারিয়ে বসে। তামিম, সৌম্যের পর মুমিনুলও সাজঘরে ফেরেন। এরপর চতুর্থ উইকেটে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ (৯*) ও সাকিব (২১*) মিলে ২৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। আজ এ দুইজন ব্যাট হাতে নামবেন। এরপর মুশফিক, সাব্বির, মিরাজ, তাইজুল, তাসকিন ও রাব্বি রয়েছেন। সবাই মিলে দিনটি শেষ করে দিতে পারলেই হয়। অন্তত ম্যাচটি ড্র হয়ে যাবে। আবার ম্যাচ জেতাও সম্ভব। এ জন্য একটু দ্রুত রান তুলতে হবে। তা করে ফেললে ইতিহাসই গড়বে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত কোন দলই ৪১৮ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে জিততে পারেনি। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের টার্গেট নিয়ে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ জয়টিই ইতিহাসের পাতায় টার্গেট অতিক্রম করে জয়ের দিক দিয়ে সবার ওপরে আছে। ৪০০ রানের বেশি টার্গেট পড়া ম্যাচ এখন পর্যন্ত ২৮৪টি রয়েছে। এরমধ্যে ২২৪টি ম্যাচেই হার লেখা আছে। ৫৬টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। মাত্র ৪টি ম্যাচে জয়ের দেখা পাওয়া গেছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, ৪০০ রানের ওপরে টার্গেট মানেই হারের সম্ভাবনাই বেশি। বাংলাদেশ আবার নিজেদের ইতিহাসে কখনই ২১৫ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে জিততে পারেনি। ২০০৯ সালে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেট নিয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ, সেটিই নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টার্গেট অতিক্রম করার রেকর্ড। ৪৫০ রানের ওপরে টার্গেট নিয়ে তাই বাংলাদেশের জেতাটা কল্পনাই করা যায় না। তবে ড্র’র সম্ভাবনা ঠিকই আছে। এখন পর্যন্ত ১০টি টেস্টে ৪৫০ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। ৯টিতেই হেরেছে। একটি ম্যাচই শুধু ড্র করতে পেরেছে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৬৭ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচটি ড্র করে। সেই ম্যাচটিতে পঞ্চমদিন পুরোটা খেলে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটিই তাই বাংলাদেশের সামনে প্রেরণা হয়ে ধরা দিতে পারে। একদিনে ৫৮৮ রান করারও রেকর্ড আছে। ১৯৩৬ সালে ভারতের বিপক্ষেই দ্বিতীয়দিনে করেছিল ইংল্যান্ড। পঞ্চমদিনে ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ৪৫৯ রান পর্যন্তও হয়েছে। বাংলাদেশ অবশ্য চতুর্থ ইনিংসে কখনই ৪১৩ রানের বেশি করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৮ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এই রান করেছিল বাংলাদেশ। তার মানে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনার চেয়ে ড্র’য়ের সম্ভাবনার দিকেই হাঁটতে হবে। ড্র হলেও তো ইতিহাস রচনা হবে। ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই ড্র করবে। সেই ড্র’টি আবার দাপটের সঙ্গে খেলেই করবে। ব্যাটসম্যানরা যদি হাল ধরতে পারেন, তাহলে অন্তত ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো লড়াই করে ড্র করার ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ। সেই আশাই এখন করা হচ্ছে।
×