ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিকের আরেকটি ‘গ্রেট’ সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মুশফিকের আরেকটি ‘গ্রেট’ সেঞ্চুরি

স্পোর্টস রিপোর্টার হায়দরাবাদ থেকে ॥ বাংলাদেশ-ভারত হায়দরাবাদ টেস্ট শুরুর আগে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মতো হতে পারবেন কে? বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে খেলা প্রথম টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি করেন বুলবুল, ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার খেলে প্রথম সেঞ্চুরিটা কে করবেন? সেই কাজটি করে দেখালেন মুশফিকুর রহীম। নিজে সেঞ্চুরি করলেন। সময়োপযোগী একটি বড় ইনিংস খেললেন। ২৬২ বলে ১৬ চার ও ২ ছক্কায় ১২৭ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশের ‘গ্রেট’ সেঞ্চুরিও হয়ে থাকল। তার সেঞ্চুরিতেই যে স্কোরবোর্ডে বড় রান যোগ করা গেছে। না হলে তো চারদিনেই খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারত। দলের বিপর্যয়ের সময় নিজেকে উজাড় করে দেন। যতক্ষণ পারেন উইকেট আঁকড়ে থাকেন। যত বেশি পারেন, রান করার চেষ্টা করেন। এইসব কাজ ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদ টেস্টে করে দেখালেন মুশফিক। ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য তাই এ টেস্টটি ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট। এমন টেস্টের প্রথম ইনিংসে মুশফিক ‘গ্রেট’ একটা ইনিংসই খেললেন। এ ইনিংস খেলে তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের পর টানা দুই টেস্টে কোন না কোন ইনিংসে টানা দুই সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও গড়লেন মুশফিক। ভারতের ৬৮৭ রানের জবাবে ২৩৫ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তখনও ভারত থেকে ৪৫২ রানে পিছিয়ে থাকে। খাদের কিনারায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। সৌম্য, তামিম, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, সাব্বির; দলের সেরা ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। এমন অবস্থায় মুশফিক ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই টিকে থাকেন না। মেহেদী হাসান মিরাজ থাকেন। কিন্তু টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর থেকে যে মিরাজ ব্যাটিংয়ে নিষ্প্রভ হয়ে ছিলেন, তাতে ভরসা ছিল না। মিরাজের পর তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি ব্যাটিংয়ে থাকেন। সেই হিসেবে মুশফিক, মিরাজ, তাইজুল, তাসকিন ও রাব্বি ছিলেন। এ পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে একমাত্র মুশফিকই ছিলেন ভরসা। সেই ভরসার প্রতিদান দিলেনও তিনি। তার সঙ্গে বিপত্তিতে পড়া বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করেন মিরাজও। মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দেন। কিন্তু মিরাজ যে শতকের মতো একটি ইনিংস খেলতে পারবেন না, তা সবারই ধারণা ছিল। তাই যা করার মুশফিককেই করতে হবে। বড় ইনিংস খেললে মুশফিককেই খেলতে হবে। এত কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়ে শতকও তুলে নিলেন। ২৩৫ রানে সাব্বির যখন আউট হন, তখন মুশফিকের স্কোরবোর্ডে ৪৬ রান জমা ছিল। তখন অর্ধশতকও হয়নি। এমন পরিস্থিতি থেকে মিরাজকে নিয়ে বড় স্কোর গড়ার দিকে এগিয়ে যান মুশফিক। তৃতীয়দিনেই অপরাজিত ৮১ রান করেছিলেন। মিরাজও অপরাজিত ৫১ রান করে মুশফিক যেন উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারেন, সেই সাহস দিয়ে যান। দুইজন মিলে সপ্তম উইকেটে ৮৭ রানের জুটিও গড়েন। চতুর্থদিন খেলা শুরু হতেই যখন মিরাজ আউট হয়ে যান, তখন মনে হয় মুশফিক বোধহয় সেঞ্চুরিটিও করতে পারবেন না। কিন্তু কি দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এ মুহূর্তে সবচেয়ে পরিশ্রমী ক্রিকেটার মুশফিক। কি অসাধারণ ব্যাটিং করলেন। মুশফিক নিজেই একপ্রান্ত আগলে রাখলেন। যত কম পেরেছেন মিরাজের পর বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তারপরও এক এক করে ব্যাটসম্যান আউট হতে থাকলেন। কিন্তু মুশফিক উইকেটে অবিচলই থাকলেন। শেষ পর্যন্ত দলের যখন ৩৮৮ রান হয়, তখন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের করা ‘ক্যারম বলে’ সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়ে যান মুশফিক। অশ্বিনের বলটি গ্লাভসের ছোঁয়া লেগে উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার তালুবন্দী হয়। মুশফিকও আউট হন, সেই সঙ্গে বাংলাদেশেরও ১০ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ভারত থেকে ২৯৯ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়। অনেক রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে চার শ’ রানের যে কাছাকাছি যেতে পেরেছে বাংলাদেশ, সেটিতো মুশফিকের এ সেঞ্চুরিটির সুবাদেই। দলের মূল বোলার খ্যাতি পেয়ে যাওয়া মিরাজ, তাইজুল, তাসকিন, রাব্বির মতো ব্যাটসম্যানদের নিয়ে এগিয়ে যান এতদূর। অন্য কোন ব্যাটসম্যান হলে কি পারত? সেই প্রশ্ন থাকছেই। আবার তৃতীয়দিনের শেষ ওভারে ইশান্ত শর্মার বাউন্সারে আঙ্গুলেও ব্যথা পান। সেই ব্যথা নিয়েই এত সুন্দর একটি ইনিংস খেলেছেন। দলের যখন ৩৪৮ রান, তখন মুশফিকের স্কোরবোর্ডে ৯৬ রান জমা। এমন সময়ে মুশফিকের প্যাডকে লক্ষ্য করে বল ছোড়েন উমেশ যাদব। বলটিকে কবজির দক্ষতায় ফ্লিক করে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ১৫৯ রানের একটি ইনিংস খেলা মুশফিক। এ সেঞ্চুরিটি ভারতের বিপক্ষে মুশফিকের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। যেটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। ৫২ টেস্টে এ নিয়ে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিটিও করে ফেললেন মুশফিক। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম ইকবালের ৮টি ও সাবেক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুলের ৬টি টেস্ট সেঞ্চুরির পরেই মুশফিক সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরি করার যোগ্যতা দেখান। এ টেস্ট সেঞ্চুরি করে ৪টি করে সেঞ্চুরি করা মুমিনুল হক ও সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলে দিলেন মুশফিক। আর তিন হাজার রান করার দিক দিয়ে হাবিবুল বাশার সুমনকেও (৩০২৬) পেছনে ফেলে দিলেন মুশফিক (৩০৪৯)। তবে তামিম ইকবাল (৩৪৬৮) ও সাকিব আল হাসানের (৩২৯৫) পরেই আছেন মুশফিক। যেভাবে খেলে চলেছেন মুশফিক, তাতে খুব সময় হয়ত লাগবে না তামিম ও সাকিবকেও ছাড়িয়ে যেতে। দলের কঠিন সময়ে ‘গ্রেট’ সেঞ্চুরিটি করে সেই পথেই এগিয়ে চলেছেন মুশফিক।
×