ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও কলেজছাত্রীর ওপর সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আবারও কলেজছাত্রীর ওপর সহিংসতা

২০১৭ সালের শুরুতেই আবারও নতুন করে কলেজছাত্রীর ওপর হামলার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। আক্রমণের শিকার ঝুমা আক্তার সুমা। সে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ইছামতী ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। একই কলেজের ছাত্র বাহাউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে ঝুমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল অভিযোগটি আসে ঝুমা এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে। প্রেম এবং বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বাহাউদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনার দিন ঝুমা তার ছোট ভাইকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল। রাস্তার ধারে ওতপেতে বসা বাহাউদ্দিন অতর্কিতভাবেই ঝুমাকে আক্রমণ করে। দুই হাত এবং পেটে চাপাতির উপর্যুপরি আঘাত হানে। মেয়ের চিৎকারে মা এসে তাকে রক্ষা করতে চাইলে হামলাকারী তাকেও জখম করে। মা-মেয়ে দুজনই সিলেট এমজি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। ঝুমার হাতে অস্ত্রোপচার এবং অনেক সেলাই করা হলেও সে এখন শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এর প্রায় ৩ মাস আগে ২০১৬ সালে ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রী খাদিজার ওপর নৃশংস হামলা চালায় সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র বদরুল আলম। খাদিজার জখম অনেক মারাত্মক এবং সে অনেকটা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বেঁচে আছে। এখনও সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। বদরুল আলমকে পুলিশ আটক করে এবং সে এখন সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিচারিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে এখনও শুরুই হতে পারেনি। এই বিচারহীনতার দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম নতুন কোন ঘটনাকে উসকে দেয় এ কথা বললে বোধহয় বেশি বলা হবে না। ঝুমাকে জখম করার মতো মারাত্মক অপরাধ যে করেছে সেই বাহাউদ্দীনকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি। সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে পুলিশও তাকে খুঁজছে। সে ধরা পড়লেও বিচার প্রক্রিয়া আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। ২০১৬ সালে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ সারা বাংলাকে প্রতিবাদ, আন্দোলন এবং প্রতিরোধের মতো সংগ্রামের মুখোমুখি দাঁড় করায়। অপরাধীদের বিচারের দাবিতে পুরো দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রায়ই অপরাধী ধরাও পড়েÑ কিন্তু আইনী ব্যবস্থায় আজও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। ফলাও করে গণমাধ্যমে এসব নৃশংসতা প্রকাশ পেলেও তার সত্যিকার কোন সুরাহা আজ অবধি হতে পারেনি। জোর দাবি ওঠে দ্রুত বিচার আইনে অপরাধীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তির বিধান করা হোক। কিন্তু অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কব্জায় থাকলেও বিচারের আওতায় এখনও তাদের সেভাবে আনা হয়নি। আর এরই অবধারিত পরিণতি এসব সহিংসতা, পাশবিকতা নতুন মাত্রিক পুনরায় জেগে ওঠা। সমৃদ্ধির নানা সূচকে দেশ সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সন্দেহ নেই কিন্তু এ ধরনের অন্যায় আর অবিচারের মাত্রা যদি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তাহলে উন্নয়নের নিরন্তর গতি থমকে দাঁড়ানো অমূলক নয়। মানুষ হিসেবে মানুষের যে সম্মান, মর্যাদা তা যদি এভাবে ধুলায় লুণ্ঠিত হয় তাহলে সভ্যতার উৎকর্ষতা বজায় থাকে না। সমাজ-সংস্কারের সুস্থ আর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়। সব মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হয় তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাক্সক্ষার যেখানে বিরোধ ঘটে সেখানে কেউই নারী কিংবা পুরুষ যাই হোক না কেন যথার্থ মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে না। অসহায়, পিছিয়ে পড়া অর্ধাংশ নারী জাতির অবস্থা সবচেয়ে সঙ্কটজনক। দেশের বিভিন্ন ভাবে সংঘটিত এসব সহিংস ঘটনা তারই অবশ্যম্ভাবী ফল। এ ধরনের অমানবিক নৃশংসতা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজের মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা প্রত্যেকের আছে কিন্তু অন্যের মত হরণ করার অধিকার কারোরই নেই, যা পাশবিক উন্মত্ততায় আমরা ভুলে যাই। নিজের চাওয়ার সামান্য ব্যতিক্রম হলেই প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে হবে। এ ধরনের অসুস্থ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। আমার ইচ্ছাই সব নয়, আর এক জনের অনিচ্ছাকেও দাম দিতে হবে। অপরাজিতা ডেস্ক
×