অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোবাইল ব্যাংকিংকে এক ধরনের প্রতারণা বলে দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, এটি তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উদ্যোগ নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে তামাশা করা হচ্ছে। এখানে ১০০ টাকা স্থানান্তর করতে হলে ১ টাকা ৮৬ পয়সা দিতে হচ্ছে, যেখানে ব্যাংকিং সিস্টেমে মাত্র ৪০ পয়সা খরচ হয়। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে বিদেশীরা লাভবান হচ্ছে। কিভাবে এটিকে ব্যাংকিং সিস্টেমের আওতায় আনা যায় তা নিয়ে ভেবে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গবর্নর বলেন, প্রয়োজন না হলে কোন গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব দেখা উচিত নয়। শুধু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেই গ্রাহকের হিসাব খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ এটা মানুষের আমানত, তা রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, আধুনিক ও সম্পূর্ণ করবান্ধব পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। এখানে কেউ ছোট-বড় নয়। যিনি কর দিচ্ছেন, তিনি দেশ গড়ার জন্য কর দিচ্ছেন- এটা বুঝাতে হবে। যত বেশি রাজস্ব আদায় হবে, তত বড় প্রকল্প তৈরি সম্ভব হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো রেল খাতেও উন্নতি সম্ভব হবে। কৃষিতে করারোপের বিষয়টি চিন্তা করার জন্য এনবিআরকে পরামর্শ দিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, অনেকে কৃষিকে বাণিজ্যিক রূপ দিয়েছে। এছাড়া ভূমিকর, মিষ্টি ও ওষুধের দোকানের ব্যবসার ওপর করারোপের চিন্তার সময় এসেছে।
অনাদায়ী রাজস্ব আদায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) মামলায় এনবিআর কর্মকর্তারা এগিয়ে যেতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, এডিআর মামলায় কর্মকর্তাদের অভয় দিতে হবে এনবিআরকে। তারা যেন মামলায় হার-জিতকে প্রাধান্য না দিয়ে নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে যান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে এনবিআর আয়োজিত উপ-কর কমিশনার সম্মলনে এসব কথা বলেন তিনি। আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, এডিআরের মামলা নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তারা এগিয়ে যেতে পারছেন না। কারণ এটা নিয়ে হয়ত তারা পুরোপুরি পরিষ্কার নন। মামলায় হেরে যাওয়ার ভয় তাদের মধ্যে কাজ করে। এতে দীর্ঘদিন মামলাগুলো পড়ে থাকছে। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের অভয় দিতে এনবিআরকে পরামর্শ দেন তিনি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, অভয় দেয়া হলে এডিআরে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে এডিআর নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, এখানে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আটকে রয়েছে। যদি আগামী ৩ বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যায়, তবে বাজেটে এর একটা বড় প্রভাব পড়বে।