ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

হায়দরাবাদে কঠিন পরীক্ষায় মুশফিকরা!

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

হায়দরাবাদে কঠিন পরীক্ষায় মুশফিকরা!

সতেরো বছর পেরিয়ে গেল! ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট ম্যাচটাই খেলেছিল বাংলাদেশ দল। ২০০০ সালে যাত্রাটা যাদের বিরুদ্ধে শুরু ঘরের মাঠে, তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত খেলা হয়নি ভারতের ভূমিতে। অবশেষে কাটছে সেই অপেক্ষার প্রহর। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ দল। হায়দরাবাদের রাজিব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে এ নতুন মাইলফলক ছোঁয়ার স্থান। হায়দরাবাদ ঐতিহাসিক এক স্থান বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। কারণ প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ এখানেই জিতেছিল বাংলাদেশ দল। ১৯৯৮ সালে হায়দরাবাদের হোমগ্রাউন্ড লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে কেনিয়ার বিরুদ্ধে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই জয়টা ভূমিকা রেখেছিল টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির প্রথম সোপান হিসেবে। এবারও সেই হায়দরাবাদ, তবে ভেন্যু আলাদা- রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেখানেই প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ দল। সেটা যে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে তা একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোন বিভাগেই দারুন কিছু করতে পারেনি দল। ভারতের দ্বিতীয় দলটির বিরুদ্ধেই দু’দিনের ম্যাচ খেলতে নেমে গলদঘর্ম দলটি বিরাট কোহলির বিশ্বসেরা টেস্ট দলের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষায় পড়বে তা সহজেই অনুমেয়। ভারতে পৌঁছানোর পর দু’দিন মাত্র রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন মুশফিকুর রহীমরা। ৯ ফেব্রুয়ারি একমাত্র টেস্ট লড়াইয়ে নামার আগে রবিবার একটি দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে ভারত ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরে যেই ইনজুরির করাল থাবা একের পর এক হামলে পড়েছিল সেটাই আবার ফিরে এসেছে। প্রস্তুতি ম্যাচেই ইনজুরির কারণে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে ওপেনার ইমরুল কায়েসকে। নিউজিল্যান্ড সফরে ঊরুর টান ও ব্যথা আবার বেড়েছে। তাই প্রস্তুতি ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি। তার পরিবর্তে তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত গেছেন ভারত। ভ্রমণের সময়টা অনেক কম, তবে আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজালে প্রায় ৭ ঘণ্টা শেষে হায়দরাবাদ পৌঁছে বাংলাদেশ দল। সেই ধকল কাটানোর জন্য সন্ধ্যা থেকে পুরোটা রাতই সময় পেয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বিশ্রামে থেকে। শুক্রবার সকালেই সবাই নেমে পড়েছেন অনুশীলনে। সম্প্রতি কঠিন নিউজিল্যান্ড সফর শেষ করে দেশে ফিরে আসা দল তেমন বিশ্রাম পায়নি। সেই সঙ্গে ছিল ইনজুরির ধাক্কায় বিপর্যস্ততা। গত দুই বছরে প্রথমবারের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জের এক সিরিজ শেষ করেছে কিউই মাটিতে। তিন ফরমেটেই হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে এবং অপরিহার্য কয়েকজন ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিন ব্যাটিং স্তম্ভ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, টপঅর্ডার মুমিনুল হক ও ওপেনার ইমরুল কায়েস ভারত সফরে যান দলের সঙ্গে। ইমরুলও বাদ পড়ে গেছেন। তবে নিউজিল্যান্ড সফর করা টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান, পেসার রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত। দলে ফিরেছেন পেসার শফিউল ইসলাম, উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাস। এ দলটিই হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিতব্য একমাত্র টেস্টে মুখোমুখি হবে ভারতের বিরুদ্ধে। এখন পর্যন্ত ৮ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ-ভারত। ২০০০ সালে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলার পর আরও চারবার বাংলাদেশ সফর করে ভারতীয় দল। তবে দুটি ড্র ছাড়া বাকি ৬ ম্যাচেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। আর এখন ভারতীয় দল বিশ্বের এক নম্বর। বাংলাদেশ সেখানে ৯ নম্বরে। দেশের মাটিতে ফর্মের তুঙ্গে থাকা কোহলিরা কঠিন এক চ্যালেঞ্জের নাম। কারণ কোন সফরকারী দলই ভারতের মাটিতে সুবিধা করতে পারে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সফরকারীদের অবস্থা ছিল আরও শোচনীয়। দলের তিন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা ও অমিত মিশ্রই বড় হুমকি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য। আর ব্যাটিংয়ে কোহলি ছাড়াও আছেন লোকেশ রাহুল, করুন নায়ার, আজিঙ্কা রাহানের মতো নিয়মিত পারফর্মার। লড়াইয়ের জন্য বাংলাদেশের ভরসা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও নতুন এক বোলিং আক্রমণ। ব্যাটিংয়ে মুশফিক, তামিম ও মুমিনুল ছাড়া আপাতত বড় কোন ভরসা ও আস্থার কেউ নেই। ভারতের পৌঁছার পর দু’দিনই ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। তবে ক্রিকেটাররা সুযোগ হাতছাড়া করেননি নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার। কারণ নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে সেভাবে প্র্যাকটিসের সুযোগ হয়নি। হায়দরাবাদ টেস্ট খুলে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের জন্য নতুন দিগন্ত। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর দেশের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে তিনটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সফর করেছে বাকি ৮টি টেস্ট খেলুড়ে দেশে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) কখনও আমন্ত্রণ জানায়নি বাংলাদেশ দলকে। এবার সেটা বাস্তব হওয়ার পথে। হায়দরাবাদ টেস্টে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের মাটিতে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে। আর হায়দরাবাদ ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশনও এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনছে। কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ পেলেই বিশেষ এক স্মারক গ্রন্থ বের করা হতো। চলটা শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সাল থেকে। ৯০ এর দশক থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এবার ভারত-বাংলাদেশ একমাত্র টেস্ট উপলক্ষে সেই ঐতিহ্য আবার ফিরে আসছে। দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ম্যাচের পরিসংখ্যান ও কার্টুন চিত্র রাখা হবে স্মারকগ্রন্থে। ১৭ বছরে প্রথমবার ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার উপলক্ষটা তাই ঐতিহাসিক এক অধ্যায় রচনা করতে চলেছে। ঐতিহাসিক কিছু করে দেখাতে মুখিয়ে আছে মুশফিকের দলও। কারণ ১৯৯৮ সালের কোকাকোলা ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে ১৭ মে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ দল আকরাম খানের নেতৃত্বে। সেটি ছিল বাংলাদেশ দলের ২৩তম ওয়ানডে ম্যাচ। হায়দরাবাদ তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটে দারুন স্মরণীয়। সেটাই আরেকবার স্মরণীয় করে তুলতে একমাত্র টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে দারুন কিছু করার চেষ্টায় থাকবে সফরকারীরা। প্রস্তুতি ম্যাচেই বড় অগ্নিপরীক্ষাই পড়েছেন মুশফিকরা। ২২৪ রান করতেই ৮ উইকেট হারিয়েছে। তবে আশার কথা অন্যতম ভরসা মুশফিক ও রানে ফেরা ওপেনার সৌম্য সরকার অর্ধশতক পেয়ে যান। বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন নবাগত পেসার শুভাশিষ রায় ও বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তবে ব্যর্থ হয়েছেন দলে ফেরা পেসার শফিউল ইসলাম ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্ট সিরিজে বিস্ময়কর রেকর্ড গড়া মেহেদি হাসান মিরাজ। এই দুর্বলতাগুলোর দিকে দৃষ্টি দিয়ে এখন ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচটা খেলতে নামবে সফরকারীরা।
×