ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সেঞ্চুরিতে ভারতীয় ‘এ’ দলের বিশাল সংগ্রহ, দু’দিনের ম্যাচ ড্র

ব্যাটিং-বোলিংয়ে অসহায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ব্যাটিং-বোলিংয়ে অসহায় বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার॥ ম্যাচের ফলাফলটা দেখলে মনে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরিই উল্টা। সফরকারী বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বিপর্যস্ত করেছিল স্বাগতিক ভারত ‘এ’ দলের বোলাররা। ব্যাটিয়ে নামার পরে তারা সফরকারী বোলারদেরও তুলোধুনো করেছে। তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে তারা এবং ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে ৮ উইকেটে ৪৬১ রানের বড় সংগ্রহ নিয়েই প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত ‘এ’। পেসার শুভাশিষ রায় ও স্পিনার তাইজুল ইসলাম তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন, তবে বাকিরা ছিলেন পুরোপুরি অসহায়। দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ৭৩ রান করে বাংলাদেশ। দু’দিনের ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। তবে তখনও ১৬৪ রানের বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ভারত ‘এ’ দল। আরও সময় থাকলে হয়তো লজ্জাজনক কিছুই বরণ করার শঙ্কা থাকত মুশফিকুর রহিমদের। কারণ, সফরকারীরা নাজুক অবস্থায় ছিল। তবে প্রস্তুতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্টে চ্যালেঞ্জটা কেমন হতে পারে সেই ধারণাটা পেয়ে গেছেন মুশফিকরা। বিরাট কোহলির দলের বিরুদ্ধে লড়াইটা এসিড টেস্ট হবে সেটাও পরিষ্কার। আগের দিনই যেভাবে ভারতীয় ‘এ’ দলের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট চালাচ্ছিলেন তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বড় রানের দিকেই নজর তাদের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সংগ্রাম করলেও তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে রান করাটা একেবারেই পানির মতো সহজ কাজ। দ্রুতগতিতে ব্যাট চালিয়ে প্রথম দিনশেষেই তারা তুলে ফেলে ১ উইকেটে ৯১ রান। দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকেই রান তোলার গতি অব্যাহত থাকে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। অধিনায়ক অভিনব মুকুন্দ আগের দিনই ফিরে গিয়েছিলেন, তিনি টেস্ট দলেও আছেন। কিন্তু প্রিয়ঙ্ক কিরিত পাঞ্চল ও শ্রেয়াস আইয়ার ১৫৯ রানের বিশাল জুটি গড়ার পর থামেন। আইয়ার মাত্র ৯২ বলে ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ১০০ রান করার পর অন্যদের সুযোগ দিতে ক্রিজ ছেড়ে চলে আসেন। পাঞ্চলও ১৪৮ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০৩ রান করার পর অবসরে যান। এ দুই ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকার সময় বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ ছিলে একেবারে অসহায়। সাবলীল ভঙ্গিমায় হেসে-খেলে ব্যাট চালাচ্ছিলেন পাঞ্চল ও আইয়ার। তারা স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার পর অবশ্য নিজেদের অসহায়ত্ব মুছে যায় বাংলাদেশের বোলারদের। দ্রুত কয়েকটি উইকেটও তুলে নেয়। মাত্র ৪৪ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত ‘এ’। আর সফরকারীদের এই স্বস্তিদায়ক ফিরে আসার পেছনে মূল ভূমিকায় ছিলেন পেসার শুভাশিষ ও বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। আগের দিনই শুভাশিষ বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র ও প্রথম সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। শুধু তিনিই কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। আর কেউ নিজেদের বোলিংয়ে বিন্দুমাত্র ধারাল ভাব দেখাতে পারেননি। টেস্ট দলে ফেরা পেসার শফিউল ইসলামও কোনো প্রভাব খাটাতে পারেননি। দলের সঙ্গে থাকা তরুণ পেসার আবু জায়েদ রাহী ও অভিষেক সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিস্ময় উপহার দেয়া অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজদের মনে হয়ে নখ-দন্তহীন! কোনো আঁচড়ই কাটতে পারেননি তারা। শুধু তাইজুল ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অবশ্য বাংলাদেশের বোলিংয়ে অন্যতম ভরসা সাকিব এ ম্যাচে খেলেননি। তার অভাবটা টের পেয়েছে সফরকারীরা বেশ ভালভাবেই। দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলার পর মনে হচ্ছিল খুব বেশি দূর যেতে পারবে না ভারতীয় ‘এ’ দল। কিন্তু অষ্টম উইকেটে আবার প্রতিরোধ গড়েন বিজয় শঙ্কর ও উইকেটরক্ষক নিতিন সাইনি। সাইনি ৮৫ বলে ৮ চারে ৬৬ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। কিন্তু শঙ্করকে থামানো যায়নি। তিনি ছিলেন বিধ্বংসী। রীতিমতো তা-ব চালিয়ে টি-২০ মেজাজে ব্যাট করে সেঞ্চুরি আদায় করেন। মাত্র ৮১ বলে ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৩ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে ভারতীয় ‘এ’ দল। ১১৫ রানের জুটি ছিল অষ্টম উইকেটে। ৮ উইকেটে ৪৬১ রানে ইনিংস ঘোষণা করলে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচে যায় বাংলাদেশের বোলাররা। বোলারদের বাজে একটা দিন গেলেও চ্যালেঞ্জটা তখনও ছিল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছিল টপঅর্ডার। ২৩৭ রানের বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে তামিম ইকবালের সঙ্গে নেমেছিলেন সৌম্য সরকার। ৭১ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তারা। প্রথম ইনিংসে তামিম তেমন সুবিধা করতে না পারলেও এবার ব্যাট চালিয়েছেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। মাত্র ১২ ওভারেই ৭০ রান তুলে ফেলেন তামিম-সৌম্য। তবে ৩২ বলে ২৫ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। পরের বলেই মুমিনুল হককে ফিরিয়ে দেন কুলদীপ যাদব। এর কিছু পরেই উভয় দল ড্র মেনে নেয়। ২ উইকেটে ৭৩ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তামিম ৫৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ৪২ রানে। ব্যাটিংয়ের অনুশীলনটা খারাপ হয়নি সফরকারীদের। বোলিংয়ের দুর্বলতাও বুঝে ওঠা গেছে। বৃহস্পতিবার আসন্ন ঐতিহাসিক টেস্টে এই অভিজ্ঞতাই কার্যকর ভূমিকা রাখবে সফরকারীদের জন্য। স্কোর॥ টস॥ বাংলাদেশ (ব্যাটিং)। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস-২২৪/৮, ডিক্লে.; ৬৭ ওভার (মুশফিক ৫৮, সৌম্য ৫২, সাব্বির ৩৩; চৌধুরী ৪/২৬) ও দ্বিতীয় ইনিংস-৭৩/২, ১৫ ওভার (তামিম ৪২*, সৌম্য ২৫; কুলদীপ ২/২)। ভারত ‘এ’ প্রথম ইনিংস-প্রথম দিনশেষে ৯১/১; ২১ ওভার (পাঞ্চল ৪০*, আইয়ার ২৯*) ও দ্বিতীয় দিনশেষে ৪৬১/৮, ডিক্লে.; ৯০ ওভার (শঙ্কর ১০৩*, পাঞ্চল ১০৩, আইয়ার ১০০, সাইনি ৬৬; শুভাশিষ ৩/৫৭, তাইজুল ৩/১৪১)। ফল॥ ড্র।
×