ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ ৪৩ বছর পর নিজ ঠিকানায় নির্বাচন কমিশন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৭

দীর্ঘ ৪৩ বছর পর নিজ ঠিকানায় নির্বাচন কমিশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর আজ থেকে নতুন ঠিকানায় কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নির্মিত নিজস্ব ভবনে থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী রবিবার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো কমিশনের নিজস্ব ভবনে অফিস শুরু হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে প্ল্যানিং কমিশনের অফিস থেকে সব ধরনের সামগ্রী নতুন ভবনে স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়েছে। ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, প্ল্যার্নিং কমিশনের অবস্থিত নির্বাচন কমিশনে বৃহস্পতিবার ছিল শেষ অফিস। আজ থেকে নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হবে। ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিস পরিকল্পনা কমিশনের ৫ ও ৬ নম্বর ব্লকে স্থানান্তরিত হয়। তারপর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ ভবনেই কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। আজ শুক্রবার থেকে কমিশনের নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়েছে। পশ্চিম আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশে ইসির নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। রবিবার থেকে কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম নিজস্ব ভবন থেকে পরিচালিত হবে। গত ৩১ ডিসেম্বর কমিশনের ১১ তলাবিশিষ্ট নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। উদ্বোধনের আগে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোন অফিস ছিল না। উদ্বোধনের পর থেকে প্ল্যানিং কমিশন চত্বরে থাকা বর্তমান কমিশন ও সচিবালয় থেকে সব ধরনের সামগ্রী নতুন ভবনে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। ইসি কর্তকর্তারা জানিয়েছেন আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার কমিশনার বিদায় নেবেন। মেয়াদের শেষ মুহূর্তে তারা নতুন ভবনে অফিস করবেন। এরপর নতুন কমিশনার হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের ঠিকানা হবে কমিশনের নিজস্ব ভবনে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও এতদিন নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোন অফিস ভবন ছিল না। দীর্ঘদিন পরিকল্পনা কমিশনের চত্বরে দুটি ব্লকে নির্বাচন কমিশনের অফিস ছিল। পাকিস্তান আমলে সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশনার এর অফিস ছিল ইসলামাবাদে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রভিনশিয়াল ইলেকশন কমিশনের অফিস ছিল ঢাকার মোমেনবাগে। ১৯৭১ সালে মে-জুন মাসে মুক্তিযোদ্ধারা প্রভিনশিয়াল ইলেকশন কমিশনের অফিসে বোমা হামলা করলে এতে ১ জন নৈশপ্রহরী মারা যায়। ফলে জুন ১৯৭১ সালে প্রভিনশিয়াল ইলেকশন কমিশনের অফিস সচিবালয়ে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে নির্বাচন কমিশনের অফিস পরিকল্পনা কমিশনের ৫ ও ৬ নম্বর ব্লকে স্থানান্তরিত হয়। নবনির্মিত ইসির নিজস্ব নতুন ভবনটি দুটি অংশে বিভক্ত। ভবনের পূর্ব অংশে কমিশন অফিস এবং পশ্চিম অংশে সচিবালয়। এ দুই অংশের মাঝখানে রয়েছে সুদৃশ্য ফোয়ারা। আধুনিক রেফারেন্স লাইব্রেরি, মিডিয়া সেন্টার, কনফারেন্স কক্ষ, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশন ও ন্যাশনাল আইডি উইংও থাকছে এ ভবনে। এছাড়া অন্যান্য ফ্লোরে থাকছে নির্বাচন শাখা, প্রশাসন, বাজেট ও আইটি শাখা। ইসি সূত্র জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য দুই একর ৩৬ শতাংশ জমি নির্বাচন কমিশনকে বরাদ্দ দেয়। ইলেকশন রিসোর্স সেন্টার (ইআরসি) নামে পরিচিত এ প্রকল্পে ইসির নিজস্ব ভবনটি দুটি অংশে নির্মিত হয়েছে। যার একটি অংশ ১২তলা বিশিষ্ট নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবন। এ ভবনটি গত ১৪ নবেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ উদ্বোধন করেন। অপরটি ১১তলা বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ভবন গত ৩১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি উদ্বোধন করেন। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে সরকারের অর্থায়নে জুলাই ২০১১ হতে জুন ২০১৭ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুমোদিত ইলেকশন রিসোর্স সেন্টার (ইআরসি) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২১৩.০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় দুটি বেইজমেন্ট ও ১২তলা বিশিষ্ট ইটিআই ভবন এবং দুটি বেজমেন্ট ও ১১তলা বিশিষ্ট ২.৫৮ লাখ বর্গফুট আয়তনের নির্বাচন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২তলা বিশিষ্ট নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবন থাকছে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ ইউনিটসহ এনআইডি অনুবিভাগ রয়েছে। ১১তলা বিশিষ্ট নির্বাচন ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয় জুলাই ২০১১ সালে। তারা জানান জুন ২০১৭ সালে সমাপ্তি হওয়ার কথা থাকলেও ৬ মাস বাকি থাকতেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ভবনটি সিভিল এভিয়েশনের নির্ধারিত উচ্চতা মেনে নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ১১তলা ভবনে ২টি বেজমেন্টসহ অগ্নি প্রতিরোধক এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়েছে। দেশীয় প্রকৌশলীরা এ ভবনের নকশা, স্ট্রাকচারাল ও আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, নির্মাণ এবং সুপারভিশন করেছেন। এতে দেশীয় প্রকৌশলীরা তাদের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। তারা বলেন, আধুনিক সুবিধা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন করে এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ভবনে রয়েছে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, এনআইডি ডাটা সেন্টার, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, নির্বাচন আর্কাইভস এবং মিডিয়া সেন্টার। আধুনিক স্থাপত্য নকশার সমন্বয়ে নির্মিত ভবন দুটি ঢাকার বুকে অনন্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে টিকে থাকবে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার কলাকৌশলের উদ্ভাবন ও প্রয়োগের ফলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার প্রেক্ষিত ও আঙ্গিকের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কাজের মান, গতি ও দক্ষতা সম্পর্কেও জনগণের প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কাজের গুণগত মান উন্নয়ন, কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিশনের কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে কমিশনের সেবা জনগণের কাছে সহজলভ্য করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তায় ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। গড়ে তোলা হয় কম্পিউটারাইজড ডাটাবেইজ। ২০১৭ সালের মধ্যে মোট ৯ কোটি স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র জনগণের হাতে পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে কমিশনের। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। জাতীয় পরিচয়পত্র আইনের মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকা- নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকা- পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অফিস স্পেস অপ্রতুল। এতদিন ধরে প্ল্যানিং কমিশনে নির্বাচন অফিসের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ এবং নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের জন্য অফিস স্পেস ভাড়া করে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। এখন থেকে কমিশনের সব ধরনের কার্যক্রম নিজস্ব ভবন থেকেই পরিচালিত হবে।
×