ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী

চা শিল্পের যে কোন উদ্যোগে সরকার সহযোগিতা দেবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

চা শিল্পের যে কোন উদ্যোগে সরকার সহযোগিতা দেবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চা শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে এবং তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে এই শিল্পের যেকোন উদ্যোগে সরকার সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা পুষ্পগুচ্ছ হলে বাংলাদেশ চা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। চা শিল্পের ১৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ পদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, চা শিল্পের দেড় শ’ বছরের ইতিহাসে দেশে এটিই প্রথম প্রদর্শনী। ভারতীয় উপমহাদেশের কোথাও হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। চা শিল্পের সঙ্গে নিজের শৈশব কৈশরের নানা স্মৃতি ও বাংলাদেশে চা চাষের দেড় শ’ বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, আমার আশ্চর্য লাগছে, এই প্রদর্শনী চা শিল্পের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। শৈশবে ব্রিটিশ শাসনামলে রেল স্টেশনে তাকেও বিনামূল্যের চা খেতে হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫০ সালের দিকে এই অঞ্চলে চা চাষ শুরু হয়। ব্রিটিশরা সিলেটের এক বাঙালীকে দিয়ে, তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে চাষ শুরু করে। আমার মনে আছে, আমি যখন কিশোর তখনও বিনা পয়সায় চা পাওয়া যেত। রেল স্টেশনে লেখা থাকত- এখানে বিনা পয়সায় চা পাওয়া যায়। কোন চার্জ-টার্জ কিচ্ছু দিতে হতো না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের চায়ের চাহিদা বছরে ৭০ মিলিয়ন কেজি। যা ১৯৭১ সালে ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন কেজি। আর ১৯৮০ সালে চা উৎপন্ন হয়েছিল ৪০ মিলিয়ন কেজি। বর্তমানে অর্থাৎ ২০১৬ সালে উৎপন্ন হয়েছে ৮২ দশমিক ৫ মিলিয়ন কেজি। এ হিসাব থেকেই দেখা যায়, চায়ের উৎপাদন ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা শিল্পের শ্রমিকদের বাসস্থানের জন্য স্বল্পসুদে তহবিল করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে চায়ের উৎপাদন ও চাহিদা প্রায় কাছাকাছি। ভবিষ্যতে এই শিল্পে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো হলে বাংলাদেশ চা রফতানি করতে সক্ষম হবে। স্বাগত বক্তব্যে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের চা শিল্প মোটেও ঝিমিয়ে পড়েনি। দিন দিন চায়ের চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বের মোট চা উৎপাদনের ৩ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ সাফিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান আরদাশীর কবির, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এস এম আলতাফ হোসেন ও টি ট্রে এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শান্তনু বিশ্বাস। চা শিল্পের ১৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী এ চা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এতে ১৬টি স্টল ও ৩০টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। দেশী-বিদেশী চা প্রেমীদের কাছে এ শিল্পকে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এ প্রদর্শনী। বাংলাদেশের চা শিল্পের অবস্থান ও প্রকৃতি, বিভিন্ন ধরনের চা ও চায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্যের প্রসার, চা বাগানের নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্টি, ব্লেন্ডার ও চা শিল্পের অংশীদারদের মিলনস্থল এবং চা পর্যটন শিল্পের প্রচার করা হবে এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে। চা প্রদর্শনীর উদ্বোধনের আগে বিটি-১৯ জাতের চা গাছ অবমুক্ত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বিটি-২০ অবমুক্ত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী শেষ হবে আগামী শনিবার। এই প্রদর্শনীর ফেসবুক পেজে নিবন্ধন করে বিনা মূল্যে প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতে পারবেন আগ্রহী ব্যক্তিরা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রদর্শনীতে ৩০টি প্যাভিলিয়ন ও ১৬টি স্টল অংশ নিয়েছে। প্রদর্শনীতে ডেনিশ সিমলা টি, মেগনলিনা টি, ইস্পাহানি চা, কাজী এ্যান্ড কাজী টি, হালদা ভেলি টি, এইচআরসি টি, ন্যাশনাল টি, সিলন টি, শ’ওয়ালেস টি, ফিনলে টি, মহসিন টি, ব্র্যাক টি, ডানকান টি, ফ্রেশ টিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রতি কেজি সাড়ে তিন হাজার টাকা মূল্যের রফতানিযোগ্য চা নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছে সদ্য বাজারে আসা কসমো চা। দেশীয় বাজার ও রফতানি বাজারের জন্য পৃথক চায়ের প্যাকেজ রয়েছে বলে জানান নতুন এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজমল।
×